" ডাঃ রবার্ট ও তার কম্পাউন্ডার মদন "

-DrRabin Barman (India)
A Gold Medalist Homoeopath,
Ex HOD- Case Taking & Repertory,
-Nat. Inst.of Hom. ( Govt.of India)


এই লিখাটি মেটিরিয়া, অর্গানন, রেপার্টরী, প্রাকটিস অব মেডিসিন, প্যাথলজী, গাইনিকোলজী, সার্জারী, সব বিষয়ই সরস গল্পের মধ্য দিয়েই নতুন হোমিও ছাত্র-চাত্রীদের জন্য লিখে যাচ্ছেন। তারিখ----২৯ / ০৬ /২০১৯ ইং।


পর্ব------১
                                                              

ডাঃ রবার্টের সকালের ব্রেকফাস্ট হয়ে গেছে। এখুনিই চেম্বারে বসবে। বেশ কয়েকজন রোগী এসেও গেছে। মদন সবার নাম লেখাচ্ছে। দুই একজন রোগী মদনকে পীড়াপীড়ি করছিলো---অনেক দূরে বাড়ী, যদি দয়া করে মদনবাবু একটু আগে দেখিয়ে দিতে পারেন। মদন বলছে--- আরে অত কাঁদলে হইবো না, অত ব্যস্ত হইলে এই চ্যাম্বারে দেখান্ যাইবো না।
ডাঃ রবার্ট ঢুকলেন। ২ জন রোগী সবে দেখা হয়েছে। হঠাৎ ৩/৪ জন লোক নিয়ে ঢুকে পড়লেন নীল পার্টির নেতা। নমস্কার, ডাক্তারবাবু, কেমন অাছেন? এই ভজা আমাদের পার্টির হোল টাইমার। ভোটের সময় বুথে ঢুকে আমাদের ক্যান্ডিডেটের ভোট বাড়াতে একটু সাহায্য টাহায্য করে আর কি। তা এর বাচচাটার কি হয়েছে একবার দেখুন তো। চেহারাটা এমন শুকিয়ে যাচ্ছে কেন?
ডাঃ রবার্ট দেখলেন, ৩ বছরের একটি বাচ্চার একেবারে রিকেটের মতন চেহারা। শরীর যত না রোগা পটকা,বা শুকনো, পা দুটি যেন বেশী শুকিয়ে গেছে। মদন বাঙাল আবার একটু হোমিওপ্যাথি শিখতে চায়। ডাঃ রবার্টকে সে বলেছে, স্যার যা হোক একটু শিখিয়ে দিন, আমি দেশে ফিইরা একটা D H M S সার্টিফিকেট ম্যানেজ কইরা নিবো, তারপর দ্যাশের বাড়ী বরিশালের ঝালকাঠিতে বইস্যা যামু। সেইজন্য ডাঃ রবার্ট মদনকে মাঝেমধ্যে কি ওষুধ দিচ্ছে, কেন দিচ্ছে, কোন ওষুধের কি সিমপটম, কি রোগ, রেপার্টরীতে কোথায় কিভাবে দেখতে হয়, সবই একটু আধটু বুঝিয়ে দেন।
এই বাচ্চাটিকে দেখে ডাঃ রবার্ট তাই মদনকে বলতে আরম্ভ করলেন---
" মদন, যখনই কোন বাচ্চার এইরকম এমাসিয়েশন বা শুকিয়ে যাওয়া ভাব শরীরের নীচের দিকে দেখবি, সঙ্গে সঙ্গে মাথায় যে ঔষধগুলি আনবি তা হলো--- এ্যব্রোটেনাম, আর্জেন্টাম নাইট্রিকাম, আয়োডিয়াম, নেট্রাম মিউর, স্যানিকিউলা, টিউবারকিউলিনাম, গার্টনার, ইত্যাদি ।
মদন বললো, কিন্তুু স্যার, গার্টনারের কথা ত শুনি নাই।এক ধমক দিলেন ডাঃ রবার্ট, ---গাধা কোথাকার। এটি একটি  বাওয়েল নোসোড। চেম্বারে যেদিন রোগী কম থাকবে,সেদিন বাওয়েল নোসোড কি,কে আবিষ্কার করেছিলো, কিভাবে আবিষ্কার করেছিলো, কিভাবে কাজ করে, সব বুঝিয়ে দেবো।
আজ শুধু জেনে রাখ্ , অনেক হোমিওপ্যাথ ডাক্তার জানে না ম্যারাসমাসে বা ম্যালনিউট্রিশনে যখন কোন বাচ্চা বুড়ো, যে কেউ একেবারে জরাজীর্ণ চেহারায় চলে যায়, গায়ে হাড় আর চামড়া ছাড়া যখন কিছুই দেখা যায না, তখন অন্যান্য ঔষধের থেকেও গার্টনার একটি মূল্যবান ঔষধ। তবে ২০০ ১টি মাত্র ডোজ দিবি, এবং কমপক্ষে ১ মাস অপেক্ষা করবি। তারপর দেখতে পাবি চেহারার উন্নতি হচছে।
---- তা বুঝলাম, কিন্তু ঐ এব্রোটেনাম আয়োডাম, নেট্রাম মিউর, এসব ঔষধগুলির মধ্যে পার্থক্য কিভাবে করবো?
গাধা কোথাকার---- অন্যান্য সিমপটমস দিয়ে, মানে --- অন্য সব সিমপটমস দেখে বা শুনে। যেমন, এই বাচ্চাটির কোন্ ঔষধ আসবে দ্যাখ ---
এই কথা বলে ডাঃ রবার্ট বাচ্চাটির বাবা মাকে কিছু প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করতে থাকলেন। মদন একটু বাইরে গেলো রোগীদের সিরিয়াল দেখাশোনা করতে। ৫ মিনিট পরে মদন ঘরে ঢুকতে ডাঃ রবার্ট বললেন, মদনা ---- আমার ঔষধ সিলেকসন হয়ে গেছে। এই বাচ্চাটিকে দিতে হবে -- আর্জেন্টাম নাইট্রকাম। কেন? মদন জিজ্ঞেস করে।
---- বাচ্চাটির চিনির উপরে খু্ব লোভ, যখনই চিনি বা গুড় সামনে পায়, তুলে খায়, পেটে খুব গ্যাস হয়, বাচচাটি খুব নার্ভাস, দেখছিস না কেমন ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে ওর মায়ের কোলে বসে আছে? কিন্তু জানিস, আর্জেন্টাম নাইট্রিকাম বাচ্চাদের মিষ্টি খেলে সহ্য হয় না, পরে ডায়েরিয়া বা আমাশাতে ভোগে। জিজ্ঞাসা কর্ তো ওদেরকে, সেইরকম কোন ব্যাপার হয় কি না। মদন বাচ্চার মাকে জিজ্ঞেস করলো, মিষ্টি খাওয়ার পরে বাচ্চাটির পায়খানার কোন পরিবর্তন ওরা দেখে কি না। ওর মা বললো--- হ্যাঁ কম্পাউন্ডারবাবু চিনি বা মিষ্টি খেলে ছেলেটার আমাশার মতন হয়। আবার যখন উঠোনে পায়খানা করে, দেখেছি পায়খানা করলো হলুদ, কিন্তু একটু পরেই তা কেমন সবুজ বা সবজেটে রংয়ের হয়ে যায়।
--- তাহলে মদনা, এই সব অদ্ভুত সিমপটমস গুলি খেয়াল রাখতে হবে।
আবার আর্জেন্টাম বাচ্চারা কিনতু নেট্রাম মিউর, থুজা, মেডো, এদের মতন কাঁচা লবনও একটু খেতে পছন্দ করে। দেখি জিজ্ঞেস করে, কি বলে ওর মা?
----- এই মেয়ে, তোমার বাচ্চাটি কি লবনের পাত্র থেকে মাঝেমধ্যে একটু লবন তুলে খায়, মানে লবন বুঝলেও কি তা খায়? --- ডাঃ রবার্ট জিজ্ঞেস করে।
--- হ্যাঁ, ঠিক কথা মনে করেছেন ডাক্তারবাবু, ছেলেটার এই দোষটাও আছে। লবন দেখলেই চিনি খাওয়ার মতন একটু তুলে খায়।
কিরে, দেখলি ত মদনা, কি বললাম? তুই কেন্ট রেপার্টরীতে ৪৮৬ পাতায় Stomach চ্যাপটারে Desire রুবরিকে Salt things দেখবি, Argentum Nitricum 1st grade এ দেখতে পাবি। ওখানে লবন খেতে চায়, Argentum Nit. ছাড়া অন্যান্য উল্লেখযোগ্য ঔষধ দেখতে পাবি ---- CV, Caust, Con, Lac Can, Lyss, Medo, NM, NA, Phos, VA, etc.
---- ঠিকই, অনেক কিছুই শেখার আছে। কিন্তু আপনি স্যার যেভাবে জিজ্ঞেস করেন, এইভাবে নাকি জিজ্ঞেস করা বারন? এটাকে অনেকে কইতেছে, বড্ড লিডিং কোশচেন করা হইত্যাছে। এটা নাকি হ্যানিমানের বিরুদ্ধচারন?
---- আচ্ছা মদনা্, তোকে যদি কেউ জিজ্ঞেস করে, তোমার নাম কি ভাই? তুই কি মদন বাদে অন্য নাম বলবি? কেউ যদি মিষ্টি খেতে ভালবাসে, আর তাকে যদি জিজ্ঞাসা করা হয়, আপনি কি মিষ্টি খেতে ভালবাসেন? তাহলে কি সে বলবে, না আমি মিষ্টি ভালবাসি না? যারা রোগী দেখে কম, সারাতে পারে কম, তারা এই সব নানারকম থিওরিটিক্যাল ব্যাপার নিয়ে কপচাতে থাকে , চলতি বাংলায় একটা কথা অাছে --- নেই কাজ, তো খই ভাজ, তাই আর কি। এরা অনেকে বলতে চাইছে ----রোগীকে এইভাবে জিজ্ঞেস করো---- " আচ্ছা, টক, ঝাল, মিষ্টি, নোনতা --- কোনটা আপনি বেশী পছন্দ করেন? আমি অভিজ্ঞতায় দেখেছি, রোগী গুছিয়ে সঠিক উত্তর দিতে পারে না। সেখানে আমি যদি ক্যাটিগরিক্যালি বা ইনডিভিজুয়ালি আলাদা অালাদা ভাবে জিজ্ঞেস করি--- আপনি কি মিষ্টি ভালবাসেন? টক কেমন পছন্দ করেন? তিতা মানে উচছে, করলা, এসব খান ? যার যেটা সত্য কথা বলার প্রযোজ্য, তা কি সে মিথ্যা বলবে? বরং একটা করে আইটেম আলাদা ভাবে জিজ্ঞেস করে, রোগীর চোখের দিকে তাকিয়ে এবং বলার কায়দা দেখে সে পছন্দ করে কি না, এবং করলে কতটা করে, তার গ্রেডিং করা যায়। তার কথা বলার ধরণ ও উচচারনের ভঙ্গিমার উপরেই, +, বা, ++ বা, +++ দেব কি না ঠিক করা সম্ভব হয়। রোগীর পাশে থাকা বাড়ীর লোকের বলার ভঙ্গিমার বা থ্রো করার উপরে-ও সিমপটমসটার গ্রেডিং করা যায়।
সেইরকম ফ্যামিলি হিসটরী নেওয়ার সময় বংশে কোন বড় অসুখ কারুর ছিল কি না, জিজ্ঞেস করায় অনেকেই কোন চিন্তা ভাবনা না করেই প্রথমেই দুম করে বলে---- না, ওসব কিছু ছিল না । কিন্তু ক্যাটিগরিক্যালি যখন ক্যানসার কারুর হয়েছিলো? টি বি কারুর হয়েছিলো ? মাথা খারাপ কারুর হয়েছিল ? ---- এইভাবে জিজ্ঞেস করা মাত্র --- হ্যাঁ, টি. বি. মায়ের হয়েছিলো, ক্যানসার দাদুর হয়েছিলো, হাঁপানি বোনের ছিলো, ইত্যাদি, বেরিয়ে পড়ে। ইনডিভিজুয়াল রোগের নাম ধরে লিডিং কোয়েশচেন ছাড়া কখনই সঠিক উত্তর পাওয়া যায় না, আজ পর্যন্ত কেউ দেয় নি। কি বলে দেখার জন্য মাঝেমাঝে ২/১ জনকে জিজ্ঞেস করি---- এইমাত্র যে বললেন কারুর কিছু হয় নি, বা ছিল না। এখন কতগুলি বড় অসুখের নাম বললেন? ----- উত্তর দেয়---- অত বুঝতে পারিনি, খেয়াল করিনি, ও! এইগুলি জানতে চেয়েছিলেন, আমি ঠিক বুঝতে পারিনি, ইত্যাদি।
----- আসলে কি জানিস মদনা, এরা হ্যানিম্যানের অর্গাননের কিছু কথা তোতা পাখীর মতন আওড়াতে শিখেছে, তার প্রাকটিক্যাল ইমপ্লিকেশন করে রোগী আরোগ্য করার ছন্দটা বোঝেনি। হ্যানিমান বলতে চেয়েছেন ২ টি কথা ---- ১) রোগীর কথা বলতে থাকাকে বাধাপ্রাপ্ত করে তার কথার খেই হারাতে দিও না, যদি না রোগী অন্য দিকে চলে যায়, ২) লিডিং কোয়েশচেন এমন করো না --যেখানে সে হ্যাঁ, না বলে বেরিয়ে যায়। ব্যাস, এই যে হ্যানিমান বলেছে বলে তা গায়ত্রী মন্ত্র বানিয়ে লাফাতে হবে ? রোগী তার রোগ সারাতে এসেছে, সে কি মিথ্যাভাবে হ্যাঁ কে না, আর না কে হ্যাঁ বলবে? তাছাড়া আগেই ত বলেছি --- ক্যাটিগরীক্যালি জিজ্ঞেস করলে রোগী ঠিক বলছে কিনা, বা সিমপটমটি কতটা গুরুত্ব পাবে তাও পরিষকারভাবে বোঝা সম্ভব হয়। লিডিং কোয়েশচেনে রোগী হ্যাঁ বা না বলবে, ফলে কেস টেকিংয়ে গলদ থেকে যাবে, কেন তুমি তোমার সাউন্ড সেন্স দিয়ে ইন্টারপ্রিটেশন করবে না? তাহলে তুমি কিসের হোমিওপ্যাথিক ডাক্তার? রোগী হ্যাঁ, বা না, বলবে আর তুমি তাই লিখে কম্পিউটারে ঔষধ সিলেকসন করবে, এই মনোভাব নিয়ে তুমি হোমিওপ্যাথিক ঔষধ সিলেকসন করবে? এই মনোভাব নিয়ে তুমি সস্তার হোমিওপ্যাথি ডাক্তারি করবে? তা যদি ভাবো, একটি কেসও তুমি সারাতে পারবে না। সব কেসেই ভুল ঔষধ সিলেকসন করবে।
মদনা আরও একটি উদাহরণ শোন। তুই রোগীকে জিজ্ঞেস করলি, ঘুম কেমন? অনেকেই বলে--- নাঃ ঘুম ভাল না, বড্ড কম। ইন্টারপ্রিটেশন করে ভেরিফিকেশন না করলে তুই লিখবি, ঘুম কম। এবারে ধর আমি তাকে প্রশ্ন করলাম-----রাতে কটায় ঘুমাতে যান? ---- ১০ টায়। --- কটায় ওঠেন? সকাল ৬ টায়। ----- মাঝখানে কি ঘুম ভাঙে? ------ না, তা ভাঙে না। রোগীর বয়স ৬০, সুতরাং এই বয়সে ৬ ঘন্টা সাউন্ড স্লিপকে কি ঘুম কম বলা যাবে? তুই কোয়েশচেয়েনিয়ার না করলে ত ঘুম কম লিখতিস। তাহলে তোর সেই সব অর্গানন পন্ডিত বাবুরা কি বলবেন? এইসব ইন্টারপ্রিটেশন করাকে ত লিডিং কোয়েশচেন করার তকমা লাগাবেন।
--- মদনা, আসল উদ্দেশ্য ত ভালভাবে কেসটেকিং করা। তা তুই যে টেকনিকে, যে আর্টে করিস না কেন, সঠিকভাবে তা করে সঠিক ঔষধ নির্বাচন করাটাই ত আসল কাজ। হ্যানিমানের একটি দুটি শব্দ নিয়ে ভীষণ পন্ডিত সেজে নাটক করার কোন প্রয়োজন নেই। রোগ সারাও, রোগী আরোগ্য করে দেখাও।
জানিস মদনা, এখানে যে লাল পার্টি বলে একটা রাজনৈতিক দল ছিলো, তাদের অনেকেই মানুষের জন্য ভাবতো না, মানুষের জন্য কিছু করতো না, মানুষের কোন উপকারে আসতো না ---- কিন্তু মিটিং মিছিল হলেই গর্ত থেকে পিঁপড়ে বেরুনোর মতন বেরিয়ে পড়তো, হাতে কিছু ব্যানার থাকতো ---- যেখানে লেখা থাকতো--- গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র, জাতীয়তাবাদ, বুর্জোয়া নিপাত যাক, ইত্যাদি। একটি শব্দের ও মানে বুঝতো না, কিন্তু লেখাগুলির পোস্টার হাতে উঁচু করে ধরে ভাব দেখাতো খুব বড় শিক্ষিত বাম নেতা তারা। তা আমাদের হোমিওপ্যাথিতেও সেই অবস্থা। চিকিৎসা বিজ্ঞানের অনেক বিষয় সম্মন্ধে কিছুই জানি না, প্রাকটিকাল এ্যাপলিকেবিলিটি জানি না, লিমিটেশনস অব হোমিওপ্যাথি জানি না, রোগী দেখার অভিজ্ঞতা অর্জন করি না, কেবল রবীন্দ্রনাথের সেই লেখার মতন------ " আমরা আড়ম্বর করি, কাজ করি না। সকল বিষয়ে পরের প্রত্যাশা করি অথচ পরের ভুলত্রুটি লইয়া আকাশ বিদীর্ণ করিতে থাকি "।
হ্যানিমান যেভাবে মাদার টিংচার তৈরী করতে বলেছিলেন, সেভাবে জারের মধ্যে এ্যাবসলুট এ্যালকোহলের সাথে ড্রাগ সাবসটেন্স ভিজিয়ে ১৫ দিন অন্ধকার ঘরে না রেখে পারকোলেশন, ম্যাসারেশন, ইত্যাদি মডার্ণ যন্ত্রের মাধ্যমে তা অতি দ্রুত বানানো হচ্ছে । পোটেনটাইজেসনের ঝাঁকি হাতের তালুতে বারবার না মেরে অটোমেটিক মেশিনে করা হচ্ছে । কোন ক্ষেত্রেই মাদারের কোয়ালিটি, বা পোটেনটাইজেসনের কোয়ালিটি খারাপ হচ্ছে না। তাহলে এসব ক্ষেত্রে হ্যানিমানের কথা, হ্যানিমানের লেখা মানা হচ্ছে না বলে ঐসব পন্ডিতরা লাফাচ্ছে না কেন মদনা? আসল কথা হলো to find out a similimum by your own technique, by your own capacity, by your own intellect and acumen, which cannot be understood by underleveled brain analysis.
---- যাঃ, আপনারে রাগাইয়া দিয়া কি সর্বনাশ হইলো, বাইরে অনেক রোগী অপেক্ষা করতাছে, মদন বলে উঠলো।
----- অপেক্ষা করুক, আগে শেখ্ মদনা। এই যে হাতের বা পায়ের Emaciation, কেন্টের রেপার্টরীতে কোথায় দেখবি জানিস?
---- তা জানলে কি আপনার এখানে পইড়া থাকি?
---- শোন তবে, খুলবি Extremities চ্যাপটার। পেজ নং ৯৮৫, দেখতে পাবি Emaciation, বামদিকের কলমের নীচে অারমভ হয়েছে। প্রথমে পাবি, Emaciation, in general ঔষধগুলির নাম। তারপরে দেখবি --Emaciation, diseased limb--- মানে ব্যথা, বা অন্য কোন রোগ যদি কারুর হয়ে থাকে, তাহলে যেখানে হয়েছে, বা যেখানে দেখা দিয়েছে --- সেই জায়গাটা শুকিয়ে যাচ্ছে ।
তারপর দেখবি Upper Limbs র ঔষধগুলির নাম ইন জেনারেল, তারপর দেখবি Upper limbs র আলাদা আলাদা পার্টসের---যেমন-- Shoulder, Upper arm, Forearm, Wrist, Hand, Thumb, Fingers. প্রত্যেকটি পার্টস। ২
দেখবি কেন্ট, পরপর বড় জায়গা থেকে ছোট জায়গায় নামতে চেয়েছে, বা, উপর থেকে নীচের দিকে নেমেছে, বা বাইরে থেকে ভিতরের দিকে ঢুকেছে, এই হলো কেন্টের রেপার্টরীর ফিলজফি, অর্থাৎ সাজানোর বৈশিষ্ট্য। ----- i.e. General to Particular.
এরপরে দেখ্- Emaciation --- Lower Limbs, আরমভ করেছে, যেটা এই বাচচার জন্য তোর দেখার দরকার।
দেখ--- সেই General to Particular , একই ফর্মুলায়।
প্রথমে Lower Limbs in general, তারপরে Buttock বা Nates, ( বোনিংহোসেন, কেন্টের সময়ে Anatomy তে Buttocks কে Nates বলা হতো) তারপর দেখবি পরপর---- Hip, Thighs, Leg, Foot.
মদনা, তাহলে তুই Emaciation, Lower Limbs in general মেডিসিনসগুলি কি কি অাছে, এখানে দেখতে পাবি।
দেখতে পাবি, অাছে----Abrot, Apis, Arg Nit, Ars, Calc, Plb, Sanic, ইত্যাদি, ঔষধগুলি।
দেখ্ মদনা, Lower limbs র emaciation এ CC 2nd grade এ অাছে। সবাই জানে CCর সারা শরীর মোটাসোটা , থলথলে। কিন্তুু তার যে Lower limbs শুকিয়ে যেতে পারে, তার খবর কজনে রাখে? এখন রেপার্টরীতে আমার নলেজ থাকার জন্য অন্য আর ২/১ টি সিমপটমস মিলিয়ে যদি আমি কখনো CC দিতাম, তাহলে রেপার্টরীর নলেজ কম থাকা বাবুরা ---
গেল রাজ্য, গেল মান,
----- বলে কোরাস গাইতে উঠতো। কিনতু তাদের অজ্ঞতা তারা বোঝার চেষ্টা করতো না, জানারও চেষ্টা করতো না ।
---- মদন টেবিল থেকে রেপার্টরীটা নিয়ে শেখার জন্য একেবারে ৯৮৫ পাতা খুলে দেখে নিতে চাইলো। সব দেখে, এবং চারিদিকে চোখ বুলিয়ে মদনা চেঁচিয়ে উঠলো, স্যার-----
-----কি হল রে?
----- স্যার, Emaciation, Lower extremities, Medicines in general এ Nux Vom, Rhus Ven, এসব ঔষধের কোন নামই নেই, কিন্তু Legs র ঘরে দেখছি এই দুইটি ঔষধ একেবারে 1st grade এ আছে। তাহলে এই দুইটি ঔষধ ত Emaciation, Lower Limbs,এ in general rubric এ দেওয়া উচিত ছিলো।
----মদনা, এইটাই হল কেন্টের রেপার্টরীর একটা বড় ড্র ব্যাক, বা ডিমেরিট ।
আমরা সবাই বলি কেন্ট খুব বুদ্ধিমান লোক ছিলেন, কিন্তু সব জায়গায় সঠিকভাবে বুদ্ধি ব্যবহার করেনি বা করতে পারেনি।
এইজন্যই বোনিং হোসেন বলেছিলেন, What is the true of a part = true of whole, i.e. true of a patient.
কিনতু কেন্ট বোনিংহোসেনের ঐ থিওরিটা মানেনি বলেই এই খাপছাড়া অবস্থা। সেইজন্য কেন্টের রেপার্টরীতে শুধু medicines in general না দেখে আশেপাশে একটু চোখ বুলাতে হবে, অর্থাৎ Particulars গুলির মেডিসিনসও দেখতে হবে।
---- তাহলে আমি বাচচাটিকে Argentum Nitricum দিয়ে ছেড়ে দিই। কত পোটেনসি কত ডোজ দেব স্যার? ---- বললো মদন।
Argentum Nitricum 30c

দেখ্ মদনা, বাচ্চাটির vitality weak, মানে জীবনীশক্তি বড়ই দূর্বল।          দেখেইত  বুঝতে পারছিস। এসব কেসে প্রথম বারেই চট করে বেশী হাই পোটেনসি দেওয়া যায় না। মিলিসিমাল পোটেনসি হলে সব থেকে ভালো, ০/১ দিয়ে অারমভ করা যেতো। কিন্তু আমাদের যেহেতু Argentum Nitr. মিলিসিমাল নেই, তুই ৩০, ৪টি ডোজ দিয়ে ছেড়ে দে। সকালে ও বিকালে ২ বার করে ২ দিন খাক।                                    

---- স্যার এই পোটেনসি আর ডোজের ব্যাপারে একদিন একটু আলোচনা করবেন, ভাল বুঝি না।
ঠিক অাছে হবে, এখন পরের রোগী ডাক, ডাঃ রবার্ট বললেন।

                                                                    পর্ব----২ 


চেম্বারের রোগী আপাততঃ শেষ। ডাঃ রবার্ট একা একা বসে কি যেন ভাবছে । মদন ভাবলো, কিছু প্রশ্ন মনে আছে, এবারে তাহলে স্যারকে জিজ্ঞেস করা যাক। কিন্তু ডাঃ রবার্ট যা টায়ার্ড, আবার রেগে যাবে না তো? যাইহোক সাহস করে মদন বললো, স্যার একটা প্রশ্ন ছিলো।
-----বলো ।
---- বলছিলাম, এই যে পাগুলি Emaciation হচ্ছে, আপনি কি সুন্দরভাবে রেপার্টরীর Extremities খুলিয়ে দেখিয়ে দিলেন, বা শেখালেন। কিন্তু ধরুন, যদি Extremities এ না পেতাম?
মদনা, তোকে আগেও কয়েকবার বলেছি ---- রেপার্টরী দেখার নিয়ম হলো, যখন কোন পারটিকুলার চ্যাপটারে, কোন নির্দিষ্ট রুবরিক না পাবি, তাহলে বইয়ের একেবারে শেষ চ্যাপটার, জেনারিলিটিস ( Generalities) , দেখবি।
জেনারেলিটিসে তুই হয়তো individual ভাবে কিছু পাবি না, কিন্তু বোনিংহোসেনের চিন্তাধারার মতন যে কোন রুবরিক in general দেখতে পাবি। যেমন, Emaciation বা দেহের শুকিয়ে যাওয়া অবস্থা ওখানে in general পাবি। এখুনি দেখে নে। বই খোল --- দেখ্ Generalities Chapter, পেজ নং --১৩৫৭,
দেখ্ Emaciation র সব মেডিসিনসের নাম এখানে পাবি। দেখ্ continuation হয়েছে ১৩৫৮ পাতাতেও।
দেখ্ Medicines in general র পরে ---
affected parts of --- মানে, শরীরের বাইরের যে সব অংশ রোগাক্রান্ত, সেই সব জায়গা যদি শুকিয়ে যায়,
তারপরের রুবরিক দেখ-- certain parts of--,
তারপর দেখ্- Children in---- ,
পরপর দেখে যা--- Old in ---,
Pining boys --- মানে যে সব বাচচারা টি.বি., বা যক্ষারোগে আক্রান্ত, বা টিউবারকুলাস তাদের।
তাহলে শিখলি মদনা, কোন পারটিকুলার রুবরিক কোন পারটিকুলার চ্যাপটারে না পেলে in general way তে জেনারিলিটিস চ্যাপটারে দেখা যেতে পারে।
হ্যাঁ বুঝলাম, বললো মদন।
--- কিনতু এমাসিয়েশন বা এই শুকিয়ে যাওয়া বাচচাদের জন্য আরও কয়েকটি যে সব ঔষধের নাম অাপনি করছিলেন, তাদের মধ্যে ডিফারেনসিয়েট করবো কি করে?
---- কেন, ঔষধগুলির অন্যান্য চরিত্রগত লক্ষন দিয়ে। এক একটি ঔষধের ত এক এক রকম লক্ষন, সেই সব জিজ্ঞেস করে + সবদিক দেখে বিবেচনা করে -----,
যেমন ধর,
★ Abrotanum ( এ্যাব্রোটেনাম) ,
বাচ্চারা বেশীরভাগ সময় ডায়েরিয়ায় ভোগে, বা কিছুদিন ডায়েরিয়া, কিছুদিন কোষ্ঠবদ্ধতায় ভোগে, ডায়েরিয়ায় যখন ভোগে, তখন দেখা যায়--- যা খাবার খায়-- ঠিকভাবে হজম না হওয়ার জন্য তা প্রায়ই মলের সাথে গোটা গোটা বেরোয়, একে ইংরাজীতে বলে লায়েনটেরিক স্টুল, শুকিয়ে যেতে থাকলেও ক্ষুধা কিন্তু খুব বেশী থাকে এইসব বাচ্চাদের। এই সব বাচ্চারা একটু নিষ্ঠুর স্বভাবেরও হয় ।
যেমন ধর,
★ Natrum Mur, ( নেট্রাম মিউর) ,
পা গুলি নয়, বাচচার ঘাড়ের কাছটা বেশী শুকায়, বাচচার লবন খাওয়ার প্রবনতা খুব বেশী, এমনকি অভিভাবকদের বকা খাওয়ার ভয়ে লবন চুরি করে খায়, রাগ বেশী, অভিমান বেশী, সহজে কেঁদে ফেলে, অনেকক্ষন ধরে স্নান করতে চায়, কাছাকাছি লোকজন থাকলে প্রস্রাব করতে চায় না, ইত্যাদি।
যেমন ধর,
★ Tuberculinum (টিউবারকিউলিনাম),
বাচ্চার প্রায়ই অতি সামান্যতেই সর্দি কাশি লেগে থাকছে, গরম বেশী, ঘরের দরজা জানালা খোলা রাখা পছন্দ করে, বংশে কারুর টি বি থাকতে পারে, প্রচন্ড বুদ্ধিমান, আর্টিষ্টিক, কুকুরের ভয়, ইত্যাদি।
যেমন ধর---
★ Iodum (আইওডাম),
বাচ্চার খুব খিদে, খুব গরম, ঘাড়ের গ্লান্ড ফুলে ওঠে, পিপাসা বেশী, ছটফটানি ও অস্থিরতা, কোষ্ঠবদ্ধতা, ইত্যাদি।
যেমন ধর,
Silicea ( সাইলিসিয়া)
শীতকাতুরে বাচ্চা, ঘামে বেশী, বিশেষ করে ঘুমালে মাথা ঘামে ভরে যায়, ভীরু, নম্র, নার্ভাস, দেহের অনুপাতে মাথাটি বড় দেখায়, কোষ্ঠবদ্ধতায় ভোগে, দুধ খেতে চায় না, ইত্যাদি।
স্যার, আর একটি প্রশ্ন ----
----- মাপ কর মদন, খুব টায়ারড লাগছে, আবার আগামীকাল জিজ্ঞেস করিস,
গুড নাইট।

পর্ব----৩

আজকের সকালটা মেঘলা, আকাশটা যেন মুখ ভার করে আছে, বৃষ্টি হবে হবে বা হতে পারে, আকাশে এমন একটা ভাব। ডাঃ রবার্টের আজ সকালের মুডও একটু ভালো। মদনকে পাঠিয়েছে কাছের দোকানে কয়েকটি জিনিস কিনতে। ঐ ত মদন এসেও গেছে। জিনিসগুলি রবার্ট সাহেব চেক করে দেখলো, সাবানটা নেই। ---- হ্যাঁরে মদনা, সাবান আনিস নি? ----- হ্যাঁ কিনলাম ত। ----- কোথায় নেই ত? নির্ঘাত আবার দোকানে ফেলে এসেছিস। তোকে নিয়ে আর পারা যায় না। প্রায়ই জিনিসপত্র কিনে ব্যাগে ভরতে ভুলে যাস, একটা না একটা ফেলে আসা তোর চিরদিনের অভ্যাস। তুই একডোজ ল্যাক ক্যানাইনাম ২০০ খেয়ে নে তো।
----- কেন স্যার, ল্যাক ক্যানাইনামে কি এইরকম ভুল হয়।
----- হ্যাঁ, ল্যাক ক্যানাইনামের রোগীরা দোকানে জিনিস কেনে, দাম ও দেয়, শেষে জিনিসটি আর ব্যাগে না ঢুকিয়ে বাড়ী চলে আসে।
----- তাহলে কি এই সিমপটমে ল্যাক ক্যানাইনাম দিলে তার এই ভুলে যাওয়ার অভ্যাসটি ঠিক হয়ে যাবে?
----- না, মদনা, এই সব অভ্যাস ঔষধ খেলে যে একেবারেই চলে যাবে, সব ঠিক হয়ে যাবে, তা ঠিক নয়, তাই তা মোটেই বলা যাবে না। তবে সিমপটমটি মডিফাই হতে পারে, মানে হয়ত ঐ অভ্যাসটার কিছুটা পরিবর্তন হতে পারে।
তবে অন্যান্য সুবিধা আছে, সেইজন্য এই সব সিমপটমস মনে রাখতে হবে, কারন অন্য রোগের চিকিৎসা করতে গেলে, যেমন ধর---- একটা মাথার যন্ত্রনার রোগীকে ঔষধ সিলেকসন করবি, অন্য কিছু সিমপটমস ল্যাক- ক্যানাইনামের মনে হচ্ছে, তখন ঔষধটি কনফার্মড হয়ে প্রেসক্রিপসন করার জন্য এই সিমপটমটি জিজ্ঞেস করলি। রোগী যদি লাফিয়ে উঠে বলে, হ্যাঁ, হ্যাঁ, এই ব্যাপারটা আমার আছে ডাঃ বাবু, তাহলে তোর আর ল্যাক- ক্যানাইনাম প্রেসক্রিপসন করতে কোন বাধা থাকবে না।
----- বুঝলাম। আচ্ছা স্যার, এই সিমপটমটি আর অন্য কোন ঔষধে আছে? রেপার্টরীতে কোথায় দেখবো?
---মদনা, আমি যে রেপার্টরীর কথা বা পেজ নং বলবো তা কিন্তু সব কেন্টের। কারন আমার কাছে বহু রেপার্টরী বই থাকলেও এবং আমার সব রেপার্টরীতে পারদর্শিতা থাকলেও তোকে সবসময় কেন্টের বইয়ের কথাই বলবো। কারন কেন্ট বেশী সহজ, বেশী নির্ভরযোগ্য, বেশী অথেনটিক, দাম কম, এবং মোটামুটি সবার কাছে অাছে।
তুই যখন জানতে চাইছিস, তাহলে রেপার্টরীটা খোল , দেখ, Mind, র Forgetful রুবরিক, পেজ ৪৮,
--- দেখ, কেন্ট সব জায়গায় যেভাবে সাজিয়েছে, সেইভাবেই এখানেও সাজিয়ে দিয়েছে।
প্রথমে ভুলো মন, বা Forgetfulness সিমপটমটির মেটিরিয়া মেডিকায় যতরকম প্রুভিং এবং ক্লিনিক্যালি কালেকটেড সিমপটমস পাওয়া গেছে সব দিয়েছে---- Abrotanum থেকে Zingiber পর্যন্ত। এই হেডিংটাকে বলা হয়--- Medicines in General, মানে---- ঐ রুবরিকটার যত ঔষধ হওয়া উচিত, যত সিমপটমস এদিক ওদিক পাওয়া গেছে, সব।
এই Medicines in General ব্যাপারটিতে কিন্তু মদনা দুইটি বড় কাঁচা কাজ করে গেছেন কেন্ট, কেউ না জানলে এবং না বুঝলে বিপদে পড়বে।
কি কাঁচা কাজ স্যার ?
১) Medicines in General, বুঝাতে বা বলতে চাইলেও একটা রুবরিকের সব ঔষধ এখানে নেই। কারন, অনেক পারটিকুলার সিমপটমসের ঔষধ যা সব পারটিকুলারসের ঘরে অাছে, এখানে তা ঢুকানো নেই। তাতে অসুবিধা হলো তুই ধর Onosmodium ঔষধটি একটি বাচ্চাকে মাথা যন্ত্রনার জন্য প্রেসক্রাইব করতে চাচ্ছিস, তার এই রকম ভুলো মনের স্বভাব আছে, সেইজন্য তুই এক ঝলকে Forgetfulness রুবরিকটা খুলে দেখতে চাস, Onos ঔষধটি আছে কি না। দেখ্ নেই। কিন্তু তুই ডানদিকের পাতায় পারটিকুলার সিমপটম--words of, while speaking দেখ, তার মধ্যে onos, ইটালিকে দিয়েছে। তাহলে কথা হচ্ছে Medicines in general রুবরিকে ত সব ঔষধই, তা সে যে পারটিকুলার সিমপটমসে, যেখানেই থাক না কেন, দেওয়া ত উচিত ছিলো, বা থাকা ত উচিত ছিলো। কিন্তু নেই। কেন্টের রেপার্টরীর পুরো বই জুড়ে এই গন্ডগোল অাছে।
২) আর গন্ডগোল আছে গ্রেডিংয়ে। যেমন ধর-- ডান দিকের পাতায় -- streets, of well known -- Glon 1st grade এ আছে।৷ কিন্তু তুই Medicines in General দেখ্--- Glon 2nd grade।
তাহলে যেটা পারটিকুলারে 1st grade, সেটা ত In general-ও 1st grade এ দেওয়া উচিত ছিলো। কোন একটা কেসে Glon র Forgetfulness দেখতে তুই যদি রেপার্টরী খুলে Medicines in general এ Glon র পজিসন দেখতে চাস, তাহলে দেখলি 2nd grade, মানে মোটামুটি ইম্পরট্যান্ট, কিন্তু আসলে Glon ত বেশী ইম্পরট্যান্ট , তাই এখানেও 1st grade এ দেওয়া উচিত ছিলো ।
দেখ, words of, while speaking--- রুবরিকটিতে Canabis i, 1st grade এ আছে, কিন্তু Medicines in general এ 3rd grade এ দিয়েছে।
কেন্টের এইসব গন্ডগোলগুলি খেয়াল রাখতে হবে।
যাই হোক, মদনা এরপরে মানে Medicines in General র পরে দেখ্ কেন্ট টাইম, বা সময় দিয়েছে।
দেখ্ প্রথমেই Morning, মানে সকালের দিকে ভোলা মনের হয়, যে সব ঔষধ--সেগুলি দিয়েছে, তার মধ্যে -- Ana 1st grade.
এইভাবে পরপর সব পারটিকুলারস সিমপটমস দিয়েছে, বা সাজিয়ে গেছে ----
দেখ, মৃগী রোগে ফিট হওয়ার আগে যদি কথাবার্তা অসংলগ্ন মনে হয়, রোগী কিছুই মনে করতে পারে না, তাহলে ----Causticum
(epilepsy before---Caus),
ডানদিকের মানে,৪৯ পৃষ্ঠায় তিন নং লাইন দেখ---
নিজের নাম ভুলে যায়--- মেডো, ইত্যাদি।
( name, his own --medo, etc.)
৬ নং লাইনে দেখ মদনা, তোকে যে সিমপটম নিয়ে অারমভ করেছিলাম, জিনিস কিনে দোকানে ফেলে যায়---ল্যাক ক্যন, ইত্যাদি।
( purchases of, goes off and leaves them----lac c, etc)
এই সাব রুবরিকে কিন্তু মদনা আরও দুইটি ইম্পরট্যান্ট ঔষধ যোগ হবে -- Ana, Caust ---- কেন্টে নেই, মানে এখানে নেই।
---- মদনা, আজ সকালে ত মোটামুটি কিছু শিখলি বল?
মদনা, আজ সকালটা কি রকম মেঘলা বা cloudy weather, তাই না? এই cloudy weather এ আমার মনের মধ্যে কি রকম যেন একটা দুঃখ দুঃখ ভাব লাগে।
--- স্যার, এটার কি ঔষধ, কোথায় দেখবো?
--- তোকে নিয়ে ত আর পারা যায় না,
Mind--- Sadness --- cloudy weather during---- Ammon carb, ( page 76)

পর্ব---- ৪

ডাঃ রবার্টের আজ রাতের চেম্বার শেষ হলো। এখন রাত ১১ টা। জানালার পাশে চেয়ারে হেলান দিয়ে বসে সারাদিনের ক্লান্তি অপনোদন করছেন তিনি। পাশের রাস্তায় এখন অার খুব একটা ভীঁড় নেই। কিছু কুকুর এক জায়গায় জড়ো হয়ে জটলা করে চেঁচামেচি করছে। মাঝেমাঝে কর্কশ শব্দে হর্ণ বাজিয়ে দুই একটি মোটর সাইকেল তীব্র গতিতে বেরিয়ে যাচ্ছে। নিস্তব্দতা ভেঙে মদন বললো ,
---- স্যার, আজকাল আমার কি যে হয়েছে, বেশী শব্দ, চেঁচামেচি, একদম সহ্য করতে পারি না। এই যে বাইকগুলির কর্কশ শব্দ, কুকুরের ডাক, এসব শুনলেই শরীরের ভিতরটা যেন কেমন কেঁপে ওঠে।
বিশ্রাম মাথায় উঠলো রবার্ট সাহেবের। এসব পিকিউলিয়ার সিমপটম শুনলেই রেপার্টরী যেন তার মাথার মধ্যে চড়বড় করে ওঠে।
--- মদনা, তোর এই প্রবলেমটা রেপার্টরীর ভাষায় কি বলে জানিস?
--- Sensitive to noise, মানে, শব্দে অনুভূতিপ্রবন। আমাদের হোমিওপ্যাথিতে অনেকগুলি ভালো ভালো ঔষধ অাছে। সবথেকে বড় কথা, এ্যালোপ্যাথিক ডাক্তাররা যে বড়বড় লেকচার মারে, কিন্তু ওদের এইসব ফাইন সেন্সের উপরে চিকিৎসা করার ক্ষমতাই নেই। যাই হোক, কেন্টের রেপার্টরী খুলে এখনই দেখে নে , বের কর---- Mind Chapter, দেখ --৭৯ নং পৃষ্ঠা,
বামদিকের একেবারে প্রথমেই দেখ--
Sensitive, noise to,
দেখ, Medicines in general র মধ্যে, ইম্পরট্যান্ট ঔষধগুলি হচ্ছে ----Asar, Bell, Bor, Coff, Con, NA, NV, OP, Ther, etc.
Medicines in general শেষ হলে Sensitive, noise to sub- rubrics আরম্ভ হয়েছে।
কিন্তু এর মধ্যে একটি ব্যতিক্রমী সাব রুবরিক দেখ-
-- music amel---- মানে কি বল্ তো? ----- মানে হলো, অন্য কোন রকম শব্দ, চেঁচামেচিতে অসুবিধা হলেও, বা অসহ্য লাগলেও গানবাজনা ভাল লাগে বা আনন্দদায়ক হয় । দেখ, ঔষধ আছে --Aur Met, ও Tarent ।
--- হ্যাঁ, ঠিক কইছেন, কিন্তু ট্যারেন্টুলা ত দুই রকমের হয় --- কিউবেনসিস, ও হিসপেনিয়া। তাহলে এখানে কোনটা ধরবো?
--- মদনা, শুধু ট্যারেন্টুলা মানে সবসময় জানবি -- ট্যারেন্টুলা হিসপেনিয়া, শুধু ক্যালকেরিয়া মানে ক্যালকেরিয়া কার্বনিকা, শুধু অরাম মানে অরাম মেটালিকাম, শুধু ব্যারাইটা মানে ব্যারাইটা কার্বনিকা, শুধু নেট্রাম মানে নেট্রাম মিউর, শুধু আর্সেনিক মানে আর্সেনিক এ্যালবা, শুধু নাকস মানে নাকস ভমিকা, শুধু মার্কুরিয়াস মানে মার্কুরিয়াস সলুবিলিস, শুধু ভিরেট্রাম মানে ভিরেট্রাম এ্যালবাম, শুধু আর্জেন্টাম মানে আর্জেন্টাম নাইট্রিকাম, বুঝলি?
--- হ্যাঁ, বুঝছি।
শোন, এই যে Sensitive to noise, এর কয়েকটি ক্যাটিগরী বা ফাইন সাব রুবরিক যা কেন্টের রেপার্টরীতে দেওয়া নেই, জেনে রাখ ---যেমন,
* শব্দে এত সেন্সিটিভ যে --- একটা কাগজ বা কাপড় ছিঁড়লেও রোগীর অসহ্য লাগে, সাংঘাতিকভাবে চমকে ওঠে ----Asaram ***, FM, NC, Asarum অত্যন্ত মূল্যবান ঔষধ, এই ঔষধ দিয়ে ঐ সিমপটমের উপরে বেস করে আমি অনেকগুলি অনেক রকম রোগী সুস্থ করেছি।
* বেসিনের বা বাথরুমের কলে জল পড়ার শব্দ হলে অসহ্য লাগে ----Lyss***, NA, Stram ,
----অনেক কিছু জানলাম। আপনি অনেক রোগী দেখার পরেও আমাকে ভাল হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসক হিসাবে দেখার জন্য এত পরিশ্রম করেন,
--- কারন, একটাই মদন, আমি হোমিওপ্যাথি ভালবাসি , আমি চাই তোরা সবাই গুছিয়ে হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা কর । তাতে হোমিওপ্যাথি বাঁচুক, সাধারন মানুষগুলোও গাদাগাদা ক্রুড বা স্থূল কেমিক্যাল ঔষধ খেয়ে অন্য আর্টিফিসিয়াল রোগে যেন না ভোগে। অাজকাল যত ক্যানসার, কিডনি ডিজিজ, ব্রেন টিউমার, ইত্যাদি, রোগ দেখা দিচ্ছে, বেশীরভাগই কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে চলা অসম পদ্ধতিতে খাওয়া এ্যালোপ্যাথিক ঔষধের কুফল।
মদন, যদিও রাত অনেক হয়েছে, তবুও তোকে বলতে ইচ্ছা করছে ---
Sensitivity, অর্থাৎ অনুভূতি যখন noise বা শব্দ/ চেঁচামেচির উপরে, ঔষধ গুলির আলোচনা করলাম, তাহলে এই সুযোগে Sensitiveness বেশী আরও ২/৪ টি জিনিস সম্মন্ধে জেনে রাখ।
৭৮ পৃষ্ঠায় দেখ--Sensitive রুবরিকটি আরম্ভ হয়েছে।
কয়েকটি পিকিউলিয়ার পারটিকুলার সেনসিটিভিটি মনে রাখিস, পরপর দেখে যা---
( Sensitive) , certain persons in, মানে কিছু নির্দিষ্ট বা সিলেকটেড পার্সন বা সিলেক্টেড লোককে দুই চোখে দেখতে পারে না, বা মোটেই সহ্য হয় না। যেমন, বাবা তার বড় ছেলেটিকে মোটেই সহ্য করতে পারে না, মালিক ৪ টি কাজের লোকের মধ্যে একজনকে মোটেই সহ্য করতে পারে না, স্ত্রী সবার কাছে ভালো, সবার সাথে ভাল ব্যবহার করছে, কিনতু কেন কি জানি, তার স্বামীকে মোটেই সহ্য করতে পারছে না, ইত্যাদি। দেখ, মেইন ঔষধ একটাই--- Natrum Carb, এই পিকিউলিয়ার সিমপটম দিয়েও আমি রোগী সারিয়েছি।
তার কয়েক লাইন পরে দেখ--
( Sensitive) , cruelties, when hearing of-----CC ---- মানে কোন খুন, মার্ডার, ধর্ষন, ডাকাতি, ইত্যাদি খারাপ, বা রোমহর্ষক খবর শুনলে ভীষন অনুভূতিপ্রবন হয়ে পড়ে, ভীত, সন্ত্রস্ত হয়ে পড়ে । তাতে বা তারপর থেকেই অসুস্থ হয়ে পড়ে।
তার ৪ লাইন পরে দেখ,
( Sensitive) , light to , মানে চোখের সামনে বেশী আলো সহ্য হয় না, তা সে দিনের বেলা ঘরের মধ্যে, বা রাতে ঘুমানোর সময় ঘরে, বা ঘরের আশেপাশেই হোক না কেন ---- Bell**, Nux, Phos, etc. ( তবে ফসফরাসে বেশী আলো যেমন অসহ্য, তেমনি অন্ধকারেও ভয়) ।
( প্রসঙ্গক্রমে জেনে রাখ, উল্টোটা, মানে সব সময় আলো চায়, অন্ধকারে একেবারেই থাকতে পারে না, বা থাকতে চায় না ---Stramonium)
আবার ৩ টি লাইনের পরে দেখ,
( Sensitive)-- Music to --- মানে, গান বাজনা মোটেই ভাল লাগে না, অসহ্য, মানে-- অরাম মেট, ট্যারেন্টুলার বিপরীত। দেখ মেইন ঔষধগুলি হচ্ছে -- Nat Carb, Nux, Sabi, এবং Sepia
মদনা, রাত হয়ে যাচ্ছে, Sensitiveness to ,র আর একটি ভীষন ইমপরট্যান্ট রুবরিক, বা, সিমপটম জেনে রাখ, যেটা দিয়ে আমি বহু রোগীর, বহুরকম , বহুবার, বহু রোগ আরোগ্য করেছি।
৭৯ পাতার শেষের দিকে দেখ,
( Sensitive) , rudeness to---কয়েকটি ঔষধের নাম আছে, তবে জেনে রাখ মেইন ঔষধ হচ্ছে--- Staphysagria.
রুবরিকটার মানে হচ্ছে-- ---ভীষনভাবে অনুভূতিপ্রবন, বা ভাবপ্রবন হয়ে পড়া। অন্যের কটু, বা খারাপ কথা শুনলে, বা, কদর্য ভাষা শুনলে, বা, নোংরা গালাগালি শুনলে, বা অভদ্র ব্যবহার পেলে ---একজনের কাছে চূড়ান্ত অপমানিত মনে হয়, বা সম্মানে অাঘাত লাগা মনে হয়। আর এই মানসিক অাঘাত, বা অসম্মান, বা অপমানিত বোধ থেকে হতে পারে নানান রোগ।
১০ বছর ধরে ভুগতে থাকা বিধান নগরের এক কলেজ অধ্যাপিকার মাথাব্যথা আমি সারিয়েছিলাম Staphysagria 1M , 2 dose দিয়ে। কারন , ফুটপাতের এক ফলবিক্রেতা একটি ১০ টাকার নোংরা, ছেঁড়া নোট ভদ্রমহিলা নিতে রাজী না হওয়ায় তার সাথে গন্ডগোল করে, এবং কটু, নোংরা ভাষা ব্যবহার করে । অনেক লোকের সামনে অপমানিত বোধ করায় সেই অধ্যাপিকার সেই যে মাথাব্যথা আরম্ভ হয়েছিলো, সারাতে পারেনি ১০ বছরে কেউ। শেষে সারায় Staphy 1M, 2 dose.
কারন, এই রুবরিক--- She was always sensitive to rudeness, and that very rudeness hurted her deeply, and developed severe headache, which lasted for a decade.
মুডের মাথায় একটু ইংরাজী বলে ফেললাম মদনা, বুঝতে পেরেছিস ত? শোন ডাক্তারী বইপত্র পড়তে হলে, ডাকতারী শিখতে হলে, সাধারন ইংরাজী একটু জানতে হবে। তোদের বাংলাদেশের বহু জুনিয়র ডাক্তাররা ইংরাজীতে বড় দূর্বল। খুব সহজ, সরল, সাধারন ইংরাজীও বোঝে না। আমি তোকে ও তাদের সবাইকে তাই বলতে চাই, ডাক্তারী করা ও পড়ার সাথে সাথে ক্লাস ফাইভ, সিকসের ইংরাজী গ্রামার বই থেকে টেনস পড়তে হবে, আর একটা ওয়ার্ডবুক পড়ে মুখস্ত করতে হবে। দৈনন্দিন ব্যবহৃত সাধারণ বাংলা শব্দগুলির ইংরাজী শিখতে হবে । আখেরে লাভ হবে।
তাহলে মদন, রাত ত বারোটা বাজে। এই পর্যন্ত আজ থাক। আমার খাবার ত আবার ঠান্ডা হলে চলবে না। আমি একটু গরম খাবার ভালবাসি------
আর্সেনিক, চেলিডোনিয়াম, লাইকোপোডিয়াম, স্যাবাডিলার, মতন ---- এরা সবাই খাদ্রদ্রব্য গরম খেতে ভালবাসে।
---- ধন্যবাদ, স্যার। গল্পচছলে আপনি আমাকে অনেক কিছুই শেখাচ্ছেন ।
আচ্ছা মদনা, আমি যে এত পরিশ্রম করে, খেটেখুটে তোকে বলছি, সেগুলি যখন পেপারে দিই, ছাপা হয়, প্রায় ৫,০০০ লোক সবাই যখন দেখে, পড়ে, তাদের মধ্যে কখনও আমার কনটেমপোরারি, বা সমসাময়িক, বা সিনিয়র হোমিওপ্যাথরা কেউ আমার পরিশ্রমের জন্য এক লাইন সার্টিফিকেট দেয় না, অথচ জানি তারা পড়ছে, শিখছে। প্রশংসা আর সার্টিফিকেট দিস কেবল তোরা, মানে জুনিয়র হোমিও বন্ধুরা।
কনটেমপোরারি কোন বন্ধুুর কাছ থেকে কোনদিনও কিছু শংসা পেলাম না, মানে ইনসপায়ারিং ভাল কিছু শুনলাম না। কেন বল ত? তোর কি মনে হয়?
---হ! এ্যাই কথা, স্যার , ষড় রিপুর এক রিপু----------।

পর্ব------৫

চেম্বারে খুব ধকল গেছে। খাওয়া সেরে ইজি চেয়ারটায় বসে ডাঃ রবার্ট জানালার বাইরে তাকিয়ে আছে। পাশের ঘরে মদন শুয়ে পড়েছে। শুতে না শুতেই ঘুমিয়ে পড়ে মদন । রবার্ট ভাবে, আহা মদনের মতন শোওয়ার সাথে সাথে যদি তার ঘুম আসতো। শোওয়ার পরে তার কিছুতেই ঘুম আসতে চায় না, বিছানায় খালি এপাশ ওপাশ করতে হয়, ছটফট করতে হয়, ঠিক কষ্টিকামে যেমন হয়---- মেটিরিয়া মেডিকাতে পড়েছে। তবে মদনের একটা বাজে রোগ--- ঘুমাতে না ঘুমাতেই ওর বড্ড নাক ডাকতে অারমভ করে। শান্তিতে জানালার পাশে বসে যে ইভার সাথে তার পুরানো দিনের রোমান্টিক দিনগুলির ঘটনা ও কথাবার্তার একটু স্মৃতিচারন করবে তার উপায় নেই। ইভা, মানে ইভা ব্রাউন, ডাঃ রবার্টের স্ত্রী ছিলেন। আসলে রবার্ট, ইভারা এ্যাংলো ইন্ডিয়ান। মানে সাহেবরা যখন কেউ এদেশের মেয়েদের বিয়ে করতো, তাদের সেই সাহেব + এদেশীয় মিশ্রিত সন্তানদেরকে এ্যাংলো ইন্ডিয়ান বলা হয়।
মাঝ আকাশে চাঁদের আলো, মনে হয় পূর্ণিমার কাছাকাছি সময়। চাঁদের আলোয় তার মন উদ্ভাসিত হয়ে ওঠে । পুরানো দিনের অনেক কথা, অনেক স্মৃতি তার মনে পড়ে যায। তার অন্তরের ভাব প্রবনতা খুব বেড়ে যায। ঠিক যেন এ্যান্টিম ক্রুডামের মতন। তার রেপার্টরীর ৬৮ পাতায কেন্ট এই সিমপটমটি দিয়েছেন, কিন্তু শুধু Moonlight---Ant. c, Bell, Thuja, লিখে রেখেছে। খুব রাগ হয় রবার্টের, আচ্ছা -- কেন্ট সাহেবের একটু পরিষ্কার করে সব কথাবার্তাগুলি বললে কি এমন দোষের হতো? নতুন বাচ্চা বাচ্চা ছেলেমেয়েরা আসলে উনি কি বলতে চেয়েছেন তা বুঝবে কি করে? আসলে কেন্ট সাহেব ত সেই ক্লিনিক্যাল সিমপটম টি বলতে চেয়েছেন---- জোছনায় অর্থাৎ চাঁদের আলোয় মনের ভাব প্রবনতা বাড়ে। তাহলে লিখতে হতো, Moonlight, romanticism agg, --- Ant.c., etc.
যাক, ইভার কথা আজ বড্ড মনে পড়ছে। প্রায় ১২ বছর হতে চললো সে চলে গেছে। বড় নিঃসঙ্গ জীবন । মদন আছে, দেখাশোনাটা করছে, রোগীরা থাকছে, জীবন অতিবাহিত হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু সব ছাপিয়েও ইভার কথা বারবার মনে পড়ে কেন?
বড় অভিমানী ছিল ইভা, কথায় কথায় অভিমান আর কান্না লেগেই থাকতো, স্বভাব ছিল বড়ই পরিবর্তনশীল, একটু রেগে গেলে ওকে হাসাতে মোটেই সময় লাগতো না। কত বকা খেয়েছে মোটেই জল খেতে চাইতো না বলে। কারুর সাথে কখনও কটু ব্যবহার করতো না, সবার খুবই প্রিয় ও কাছের মানুষ ছিলো, বড় নম্র ছিলো। আর ঘরের দরজা জানালা সব সময় খোলা রাখতে চাইতো, খোলামেলা ঘর, খোলা জানালা তার চাই-ই চাই। রবার্ট অনেক সময় খেপিয়ে বলতো, তুমি টেগোরের ঐ গানটি গাও---- " তোমার খোলা হাওয়া লাগিয়ে প্রাণে বাজায় বাঁশী "। ওর জন্য কোন রেস্টুরেন্টে বসে একটু আরামে মাটন, লুচি, পরটা, খাওয়া যেত না, কারন তৈলাক্ত খাবার ওর মোটেই সহ্য হত না --- পেটের গোলমাল, বা পাতলা পায়খানা লেগেই থাকতো। আর রোগের ব্যাপারে কিছু জিজ্ঞেস করলেই কান্না আরম্ভ করতো, রোগ লক্ষন যেন সব চড়চড় করে বেড়ে যেতো। কেন্ট যা তার Mind র ৬৮ পৃষ্ঠায় দিয়েছেন----Narrating her symptoms agg । সব সিমপটমস মিলিয়ে ওর রোগের শেষ অবস্থায় একবার পালসেটিলা দেবে ভেবেছিলো রবার্ট , কিনতু নিয়তি সে সুযোগ তাকে আর দেয় নি। মৃত্যুর কালো হাত ইভাকে টেনে নিয়ে গেছে তার থেকে অনেক দূরে, যেখান থেকে মানুষ আর কোনদিন ফিরে আসে না। আজ সেই সব কথা, জীবনের আরও অনেক রকম ঘটনা প্রবাহ ভীষনভাবে মনকে নাড়া দিচ্ছে, যা প্রায়ই তাকে নাড়া দেয়। এইজন্যই বোধ হয় কেন্ট ৩৯ পাতায় রবার্টদের জন্য রুবরিকটি দিয়েছে, Dwells on past disagreeable occurrences.
না!, মদনার নাক ডাকা বড্ড বেড়েছে। কাল সকালেই ওর কেস টেকিং করে একটা ঔষধ সিলেকসন করতে হবে। নাক ডাকা রুবরিকটিও ওকে বুঝিয়ে দিতে হবে । ওকে বের করতে বললেই ত নাক, বা ঘুম, এইসব চ্যাপটারে হাতড়াবে। কিন্তু আসলে ত রুবরিকটি পাওয়া যাবে Respiration, চ্যাপটারে, এবং রুবরিকটি হলো Snoring, কেন্ট-- পেজ নং ৭৭৫ ।
জানালা বন্ধ করে রবার্ট শুয়ে পড়লো।

পর্ব------৬
রাত ১টা বাজে। কলিং বেলটা বেজে উঠলো। হুড়মুড় করে উঠে দরজা খুললো মদন। ডাক্তারবাবু কোথায়, ডাক্তারবাবু কোথায়, বলতে বলতে ৪/৫ জন লোক একজন রোগীকে পাঁজাকোলা করে মদনের ঘরে ফেললো। রোগীটি সমানে চেঁচাচ্ছে, " ওঃ, মরে গেলাম, ডাক্তার কোথায়, আমাকে বাঁচাও, আঃ শেষ হয়ে গেলাম, আমি কি বাঁচবো না? ওরে যত টাকা লাগে ডাক্তারকে দেবো, আমাকে বাঁচাতে বল। ওরে এক গ্লাস জল দে আমাকে , ওঃ, বুকে কি ব্যথা হচ্ছে --- ডাক্তার এখনও উঠলো না ? ওরে ডাক ডাকতারকে তাড়াতাড়ি , দেরী হলে আর বাঁচবো না। ঠাকুর, কালকের সকাল কি আমি অার দেখতে পাবো না ?
ডাঃ রবার্টের কেবল ঘুমটা এসেছিলো। কিন্তু মদন ডাকতেই তাকে উঠতেই হলো।
----কি ব্যাপার, কি হয়েছে ?
--- রোগীর ছেলে বললো----স্যার, জানেন বাবা ভাল মানুষ, রাতে খাবার টেবিলে একসাথে খেলাম, কথাবার্তা বললাম। বাবা একটু তাড়াতাড়ি শুয়ে পড়ে। সাড়ে দশটা নাগাদ উনি শুয়ে পড়েছিলেন। সাড়ে বারোটায় হঠাৎ ঘুম থেকে উঠে এইরকম চীৎকার আর চেঁচামেচি করছেন, খালি বলছে, আমার বুকটা শুকিয়ে যাচছে, বুকে খুব ব্যথা করছে, আমি আর বাঁচবো না। আমাকে এক গ্লাস জল দে। আমি একটু হোমিওপ্যাথি করি। তা ঐ বুক শুকিয়ে যাচছে, ব্যথা করছে, আর সমানে জল খেতে চাইছে বলে ব্রাইওনিয়া কয়েকবার দিলাম, কিন্তু কিছুই ত কমলো না। বড়দা বললো, ওরে -- গ্যাস থেকে হয়েছে, একটা গ্যাসের বড়ি দে, ঠিক হয়ে যাবে, দেওয়া হলো -- কিন্তু তাও ত কিছু হল না। ছোট ভাই ঝনটু এ্যামবুলেনস ডাকতে চাইছিলো, হসপিটালে নেবে বলে, কিন্তু আমি বললাম, রবার্ট সাহেবকে একটু দেখাই, তাই অানলাম। আপনার উপর অামার বিশ্বাস অাছে স্যার।
রবার্ট মদনকে বললেন, Aconite Nap 30 , ১০০ মিলি জলে ১ ফোঁটা দিয়ে ৬টি ডোজ করে দিতে, রোগীর ছেলেকে বললেন, ১ ঘন্টা অন্তর এক ডোজ খাওয়ান, এতেই ঠিক হয়ে যাবে। কিছু জিজ্ঞেস না করেই শুধু বুকের ব্যথায় Aconite কেন, মদন ঠিক বুঝতে পারলো না। যাই হোক চেম্বারের মধ্যে এক ডোজ খাওয়ার পরেই লোকটা ঠান্ডা হয়ে গেল, আর চীৎকার, চেঁচামেছি করছে না। ডাঃ রবার্ট বললেন, আর কোন অসুবিধা হবে না, রোগীকে বাড়ী নিয়ে যান। রবার্ট ও মদন যার যার ঘরে আবার শুয়ে পড়লো।
রাত ২ টা, মানে একঘন্টাও কাটেনি। আবার বেল বাজলো। পাড়ায় নামকরা ডাক্তার হলে এই এক বিপদ। মদন রাগে গজগজ করতে করতে আবার দরজা খুললো। যেন একই রকম সিন। আবার কয়েকজন লোক একটি লোককে ধরে এনে একটা চেয়ারে বসালো। লোকটিকে যেন বড্ড দূর্বল মনে হচ্ছে। চিনচিনে গলায় বলছে, ওরে বেকার আমাকে টেনে আনলি, বলছি ত আমার আর হবে না। বেকার ডাক্তারের কাছে আমাকে জোর করে টেনে আনলি রে। লোকটি একবার অাধশোয়া অবস্থায় চেয়ারে বসছে, একবার উঠে দাঁড়াচ্ছে, আর শুধু বলছে, ওরে তোরা মিলমিশ করে থাকিস, আমার আর হবে না। সঙ্গে আসা একটি লোকের কাছ থেকে জলের বোতলটি বারবার চেয়ে নিচছে কিন্তু খাচ্ছে এক/ দুই ঢোঁক জল।
যাই হোক আবার ডাঃ রবার্টকে ডাকা হলো। মদন ভয় পাচ্ছিলো, এবারে মনে হয় রবার্ট সাহেব রেগে যাবেন। কিন্তু কি অবাক কান্ড, সাহেব একদমই রাগলো না।
----কি হয়েছে?
---- স্যার, দুপুর থেকে পাতলা পায়খানা করছে। কয়েকবার বমিও করেছে। দেখুন তাতেই কিরকম দূর্বল হয়ে পড়েছে। মনে হয়, গতকালের একটা বাসি মাছের তরকারী খেয়েই এই হাল বাধিয়েছে। পইপই করে বারন করেছিলাম, কিন্তু শোনে নি। কিছুতেই আসতে চাইছিলো না, শুধু বলছে আমার আর হবে না, কিন্তু জোর করে ধরে আনলাম।
ডাঃ রবার্ট বেশী কিছু জিজ্ঞেস না করে মদনকে বললো----Arsenic Alba 30 ৬ ডোজ বানিয়ে দে।
কেন? মদনের বড় জিজ্ঞেস করতে ইচ্ছা করছিলো। যাকগে, আগে ঔষধটা বানিয়ে ত দিই। ১ ঘন্টা অন্তর খাওয়াতে বলে রবার্ট আবার নিজের ঘরে চলে গেলেন। বলে গেলেন , এতেই রোগী ঠিক হয়ে যাবে।
মদনের আর ধৈর্য্য ধরলো না। সে তার এন সি ঘোষের বাংলা মেটিরিয়াটা খুলে বোঝার চেষ্টা করতে লেগে গেল,কেন এ্যাকোনাইট, আর কেনই বা আর্সেনিক এ্যালবা?
রবার্ট সাহেব ১৫ মিনিট পরে টয়লেটে যাওয়ার পথে মদনের বই ঘাঁটার দৃশ্যটা দেখে বললো,
মদনা, প্রথম রোগীর যা লক্ষন ছিলো সব এ্যাকোনাইটের। জীবনেও ভুলবি না -----
* যে কোন তরুন রোগের হঠাৎ করে ভীষণভাবে আক্রমন বা আরম্ভ হবে, অর্থাৎ বলা নেই, কওয়া নেই, আকস্মিক ভাবে রোগের শুরু, আর অল্প স্বল্প কোন ব্যপার নয়, একেবারে বীভৎস ভাবে বাড়াবাড়ি, ভাবটা এমন---যেন রোগ ও রোগীর দুজনের মধ্যে রাম রাবনের মতন যুদ্ধ, যে কোন একজন হারবে বা জিতবে। তার সাথে অদম্য জলপিপাসা থাকবে। দেখিস নি লোকটা খালি জল চাইছিলো, আর দিলে এক গ্লাস সবটা খেয়ে নিচছিলো। আর তার সাথে থাকবে অস্থিরতা আর মৃতুৃভয়। দেখিসনি লোকটা আর বোধ হয় বাঁচবো না৷ আমাকে বাঁচাও, এইসব বলে ছটফটানি করছিলো?
আর পরের রোগীটার ছিলো উল্টো ব্যাপার, মৃত্যুভয় আছে প্রবলভাবে, কিন্তু তার ধারনা হয়ে গেছে, সে সত্যিই মরে যাবে। আর মরেই যখন সে যাবে, তখন অনর্থক টাকা দিয়ে ডাক্তার দেখানোর দরকারটাই বা কি? এখানেও মৃত্যুভয় ও অস্থিরতা আছে, কিনতু পার্থক্য হলো-----
Aco---- বাঁচাও, আমি বাঁচতে চাই,
Ars----- আমি আর বাঁচবো না, আমি পরিষ্কার বুঝতে পারছি, এযাত্রায় আমার আর রক্ষা হবে না।
আর আর্সেনিকে থাকে নিদারুন দূর্বলতা, রোগের যা প্রকোপ বা লক্ষন, দূর্বলতা যেন তার থেকে অনেক অনেক গুণ বেশী।
আর আর্সেনিকেরও জল পিপাসা অাছে, কিন্তু এ্যাকোনাইটের মতন ঐরকম অনেকটা করে জল খায় না, বারবার খায় অল্প অল্প করে দেখিসনি, লোকটি বারবার একঢোঁক করে জল খাচ্ছিলো।
আর্সেনিকের ও অত্যন্ত মানসিক অস্থিরতা থাকে, তবে নিদারুন দূর্বলতার জন্য তার বহিঃপ্রকাশ ও খুবই হালকা বা ভদ্রজনোচিত। লক্ষ্য করেছিলি লোকটা একবার বসছিলো, একবার দাঁড়াচ্ছিলো, অর্থাৎ তার ভিতরে একটা অস্থিরতা কাজ করছিলো।
আর্সেনিকের আরও একটা উল্লেখযোগ্য সিমপটম পাওয়া গিয়েছিলো, লোকটা বাসি মাছ খেয়েছিলো।
মনে রাখবি--- পচা বা বাসি ভাত, তরকারী, বা অন্য খাবার খেয়ে সাংঘাতিক অসুস্থ হয়ে পড়লে--- আর্সেনিক, কার্ব ভেজ, এবং পাইরোজেন।
----তাহলে মদনা, যে কোন তরুন রোগে এ্যাকোনাইট, আর আর্সেনিকের ব্যবহার শিখলি ?
আর রাত ১২টা, ১ টার দিকে যখনই কোন এইরকম violent stage র রোগী পাবি, সবার অাগে Aco এবং Ars মাথায় রাখবি।
শুয়ে পড় মদনা, বলে রবার্ট ও নিজের ঘরে গিয়ে শুয়ে পড়লো।
ভোর সাড়ে পাঁচটা।
---ও ডাকদার বাবু, ও ডাকদার বাবু বলে কে যেন চেঁচাচ্ছে। ডাঃ রবার্টের আরামের ঘুম আবার ভাঙলো। গলাটা রবার্টের চেনা। সেই বিহারী রিকসাওয়ালা ছেলে হরিপূজনের গলা মনে হচছে। কারন ঐ ত রবার্টকে তার রিকসা করে এদিক ওদিক নিয়ে যায়। বিহারী ছেলেটি ডাক্তারবাবু বলে না, বোধহয় বলতে পারে না, সমসময় ঐ রকম ডাকদারবাবু বলে।
কিন্তু, ও এত সকালে কেন ডাকছে? নিশ্চয় বেশী জ্বর বা পেটব্যথা এইরকম কিছু হবে। মদন ত উঠছে না। তার ঘুম ভাঙছে না। বাধ্য হয়ে রবার্ট সাহেব নিজেই দরজা খুলতে গেলেন।
কনফার্ম হওয়ার জন্য জিজ্ঞেস করলেন, কে?
---- আমি হরিপূজন, ডাকদারবাবু, দরজা খোলো।
দরজা খুললেন রবার্ট।
--- বল, কি হয়েছে?
--- অন্দর চলো, তোমার ঘরে চলো।
---- কেন এখানে বল না?
--- না, না, তোমার ঘরে চলো।
কি এমন কথা, তুই এখানে বলতে পারবি না, দেখছিস ত মদনা বিভোর হয়ে ঘুমাচছে। কোন গোপন কথা হলেও তোর বলতে কোন অসুবিধা নেই।
না, তুমি অন্দর চলো।
---- আচ্ছা, চল। দুজনে রবার্টের ঘরে ঢুকলো।
---- এই লাও, বলে হরিপূজন বড় হরলিকসের বোতলটা টেবিলের কাঁচের উপরে থপাস করে রাখলো।
নতুন বোতল, নতুন লেভেল, যেমন থাকে-- বোতলের গলা পর্যন্ত হরলিকসে ভর্তি।
রবার্ট ভাবলেন, হরিপূজনকে যেহেতু তিনি সব সময় বিনা পারিশ মিকে, বিনা টাকায় ঔষধ দেন, তাই ও বোধহয় কোথাও মোটা টাকার ভাড়া পেয়ে কৃতজ্ঞতা স্বরূপ তার জন্য ছোট নয, একেবারে বড় হরলিকসের বোতল একটা কিনে এনেছে, এবং আনন্দের সাথে গিফট করবে বলে আর সকাল পর্যন্ত ধৈর্য ধরতে পারে নি, তাই ভোরেই চলে এসেছে।
কারুর বাড়ীতে অতিথিরা মিষ্টি বা কোন উপঢৌকন নিয়ে গেলে গৃহকর্তা যেমন লজ্জা লজ্জা ভাব দেখিয়ে বলে, " আবার মিষ্টি আনতে গেলেন কেন? ", ঠিক সেই ভঙ্গিতে রবার্ট বললো,
--- আহা, তুই আবার আমার জন্য হরলিকস আনতে গেলি কেন?
--- ও হরলিকস নেই ডাকদারবাবু!
--তাহলে কি?
---ও টাট্রি হ্যায় ডাকদারবাব?
---টাট্রি?, মানে পায়খানা বা মল ভরা?
--- হ্যাঁ, ডাকদারবাবু।
--- কি বলছিস হারামজাদা?
---- কেন তুমি আনতে বলেছিলে ত পরীক্ষা করবে বলে, হামার পেটব্যথা কমছিলো না বলে বলেছিলে, ভুলে গেছো?
রবার্টের ত আকাশ থেকে পড়ার মতন অবস্থা।
আর রবার্টের ঐ অবস্থা দেখে হরিপূজন ভাবলো, নিশ্চয় মাল কম হয়েছে, ডাকদার এবার ওকে বকা দেবে। তাই ভয় ভয় করে বললো,
----- কিঁউ, মাল কমতি হুয়া ডাকদারসাব? বলেই ঢাকনাটা খুলতে যাচ্ছিলো।
---- মাত খোল, মাত খোল, বলে চেঁচিয়ে ওঠে রবার্ট।
---- এ মাল কিতনা দিনকা রে হারামজাদা?
---- কেন বাবু, এক হপ্তাকা।
----- মানে, তুই এক সপ্তাহ ধরে এই বোয়েনে ঢুকিয়েছিস? তা কি করে ঢুকালি?
----- কেন বাবু, ম্যায়নে ইস লিয়ে এক দুসরা চামচ খরিদ কিয়া।
--- আর এই হরলিকসের নতুন বোতল পেলি কোথায়?
--- বাবু, নোটনদের বাড়ীতে অনেক খালি বোতল ওদের পাঁচিলের পাশে রেখে দেয়, ওখান থেকে নিয়েছি।
--- হারামজাদা, পহেলে এ বোতল বাহারকা ড্রেন মে ফেক দে, যা।
দরজা বন্ধ করে ডাক্তার রবার্ট আবার শুয়ে পড়লো। রাতটা খুবই ঝামেলায় কাটলো। ১ টায় এ্যাকোনাইটের রোগী, ২ টায় আর্সেনিকের রোগী, আর ৬ টায় হরলিকসের বোয়েন।
সকালে রবার্ট মদনকে বললো, মদনা এবার থেকে কাউকে স্টুল পরীক্ষা করার কথা বললে ভাল করে বুঝিয়ে দিবি যে, একটা সুঁচের মাথায় যেটুকু লাগে, ঐটুকুই লাগে। তুই আমাদের হোমিওপ্যাথিকের ঐ ৫ মিলির ছোট কাঁচের পরিষ্কার শিশি আর কর্ক একটা করে দিয়ে দিবি, আর সকালে পরীক্ষা করতে নিয়ে আসবে মানে যেন নয়টার পরে নিয়ে অাসে।
---- একথা হঠাৎ কেন স্যার? কেউ কি কোন গন্ডগোল করেছে?
--- তোর আর শুনে দরকার নেই।

পর্ব----৭
আজ আবার একটি নতুন দিন আরম্ভ হলো। মদন চেম্বার খুলে চেয়ার টেবিল পরিষ্কার করে রেডি করছে। ২/৩ জন রোগী এসে বসেছেন। একজন মহিলা ভালই সাজগোজ, মোটামুটি ভাল ড্রেস পরা, ঠোঁটে হালকা গোলাপী রংয়ের লিপষ্টিক লাগানো। পরিপাটি করে চুল বাঁধা। সাথে একটি বাচ্চা ছেলেকেও এনেছে। দুইটি চেয়ার, চেয়ারগুলির লাইন থেকে একটু দূরে সরিয়ে নিয়ে বসেছে। । তারপর ব্যাগ থেকে একটি ডাস্টার কাপড় বের করে চেয়ার দুইটিকে মুছে একটিতে নিজে বসলো এবং অন্যটিতে বাচ্চাটিকে বসালো। মদন ভাবলো, এত খুঁতখুঁতে ও পরিষকারবোধ, এ ত আর্সেনিকের রোগী। স্যার আর্সেনিক লেখার আগে আমি বলে ওনাকে আজ চমকে দেবো। ভদ্রমহিলা সর্বক্ষন একটি রুমাল দিয়ে তার নাকটি চেপে রেখেছেন। কেমন যেন ঘৃণা ভরে এদিক ওদিক তাকাচ্ছেন। মদন শুনতে পেলো, আপন মনে সে একবার বললো, যত সব শয়তান।
তার সাথের বাচ্চাটি হঠাৎ উঠে একটু দূরে মায়ের পাশে বসা অন্য একটি বাচ্চার সাথে কথা বলতে যাচ্ছিলো, কিন্তুু মহিলা তাকে একটানে ফিরিয়ে নিয়ে এসে আবার তার পাশের চেয়ারে বসালো। বললো--- তোমাকে কতদিন বলেছি, তোমার বাবা একজন মস্তবড় ব্যাঙক অফিসার, আমি টিচার, তোমার আভিজাত্য আলাদা। তুমি যার তার সাথে কথা বলবে না, যে সে ছেলেমেয়েদের সাথে তুমি খেলবে না, কিন্তু তুমি কোন কথাই শুনছো না কেন?
ডাঃ রবার্ট এখনও প্রবেশ করে নি। মদন এক কর্নারে তার চেয়ার টেবিলে নাম লেখার স্লিপ প্যাড নিয়ে বসে অাছে। কে কি বলছে, কে কি করছে সবই সে দেখতে পাচ্ছে এবং শুনতে পাচ্ছে । হঠাৎ সে দেখলো অন্য একজন সাধারন গৃহবধূর মতন সাধাসিধা দেখতে এক মহিলা তার চেয়ারটা টেনে মনে হয় একটু আলাপ জমানোর জন্য ঐ মহিলার কাছাকাছি গেলেন।
--- দিদি কোথায় থাকেন? এই মহিলা চেয়ার টেনে কাছে আসায় এমনিতেই তার গা যেন ঘ্যানঘ্যান করছিলো, তারপর আবার --- দিদি আপনি কোথায় থাকেন? রাগে যেন একেবারে অগ্নিশর্মা হলেন তিনি,
--- কোথায় থাকি, তা জেনে আপনার কোন লাভ অাছে কি?
---- না, তা নেই, এই এমনি জিজ্ঞেস করছিলাম আর কি?
--আমি নিউ টাউনের সান ফ্লাওয়ার টাওয়ারে থাকি। ২৫ তলায়। গেছেন কোনদিন?
--- না, দিদি, ওসব চিনি না।
-- চিনবেন কি করে, আর চিনেও কি লাভ? জীবনেও থাকতে পারবেন না ওসব জায়গায়। শুধু প্রতি মাসের মেইনটেনেন্স বাবদ দিতে হয় ৮,০০০ টাকা। বুঝেছো?
----- বলো কি দিদি, আচ্ছা, দিদি, তোমার ছেলে কোন স্কুলে পড়ে?
---- জেনে তোমার কোন লাভ আছে? তোমার ছেলেকে কোনদিন দিতে পারবে সেখানে? নিউ সেইন্ট ডেভিড স্কুলে । প্রতি মাসের মাইনে কত জান? ৬,০০০ টাকা। আচ্ছা, তোমার ছেলেটি এত বেঁটে কেন? আমার ছেলেটি দেখছো কত লম্বা আর স্মার্ট?
---- দিদি, তোমার ছেলে বেশী লম্বা কোথায়? আমার ছেলে, আর তোমার ছেলের ত উচ্চতা মোটামুটি একই হবে মনে হয় । আমার ত মনে হয়, মাপলে আমার ছেলে বরং তোমার ছেলের থেকেও কিছুটা লম্বা বেশী হবে।
---- কি বললে তুমি? তোমার সাহস, তোমার স্পর্ধা ত কম নয়? মাপলে তোমার ছেলে আমার ছেলের থেকে কিছুটা লম্বা হবে? এই জন্যই শাস্ত্রে আছে, ছোট লোকদের সাথে বেশী কথা বলতে নেই। অভদ্র মহিলা কোথাকার!
ডাঃ রবার্ট তার বসার ঘরে প্রবেশ করেছেন।
---- মদন, ১ নং রোগী পাঠাও।
ঐ ভদ্রমহিলা ঢোকার জন্য হনহন করে এগুকে লাগলেন। মদন দৌড়ে এসে বললো, দিদি আপনার নাম ৩ নম্বরে ।
---- ৩ নম্বরে হলে কি হবে, আমাকে আজ সবার আগে একটু যেতে দিতে হবে। আমার আর্জেন্ট একটা কাজ আছে।
---- তা বললে কি করে হবে দিদি, ওরা অনেকক্ষন ধরে বসে অাছেন।
---- আরে ভাই বসুক না একটু, ওরা আর আমি কি এক? তুমি আমাকে চিনতে পারো নি, আমি কে?
জোর করে ভদ্রমহিলা ভিতরে ঢুকলেন। আপন মনে বলতে থাকলেন, সব শয়তান, ছোট জাতের লোকজন। আমাকে চিনতে পারলো না, জানে না আমি কে!
ভিতরে ঢুকেই বললো, ডক্টরসাব, সব বদমাস, সব শয়তান। তারপর ধাম করে বিকট শব্দ করে ডক্টর রুমের দরজাটা বন্ধ করে দিলো।
মদন বসে বসে ভাবছিলো, প্রেসক্রিপসন ত আর্সেনিক হবেই। কিন্তুু ১০ মিনিট পরে যখন ভদ্রমহিলা বেরিয়ে মদনের হাতে প্রেসক্রিপসনটা ঔষধ বানানোর জন্য দিলো, মদনের ত মাথায় হাত।
একি! Platina 1M 2 dose, আর সাথে P L 1000 for one month.
মদন প্রেসক্রিপসনটা সার্ভ করলো বটে, কিন্তু কেন Platina, ঠিক বুঝতে পারলো না।
চেম্বার শেষ হলে ডাঃ রবার্ট চলে যাওয়ার সময়, মদনকে ডেকে বললেন, ঐ যে ভদ্রমহিলাটা জোর করে সবার আগেই ঢুকেছিলো , তাকে কেন Platina দিয়েছি বুঝেছিস কিছু?
----- না স্যার, আমি ত ভেবেছিলাম, আর্সেনিক দেবেন।
---- গাধা কোথাকার, ডায়েরীতে ওর সব কথাবার্তা ও সিমপটমস শুনে রেপার্টরীর ভাষায় লিখেছি। তুই যাতে রেপার্টরী খুলে মিলিয়ে শিখতে পারিস, সেইজন্য রেপার্টরীর পৃষ্ঠা নং গুলি ব্রাকেটে দিয়েছি। দেখে নিস, যেখানে বুঝতে পারবি না, পরে জিজ্ঞেস করবি।
মদনের আর ধৈর্য ধরে না। বাইরের দরজা বন্ধ করে ডায়েরীর উপরে হুমড়ি খেয়ে পড়ে দেখতে চাইলো, স্যার ভদ্রমহিলার সিমপটমস সম্মন্ধে কি লিখেছে ----
মদন দেখছে, স্যার লিখেছে---
★ Egotism ( 39),
★Contemptuous to everything ( 16),
★ Haughty ( 51) ,
Menses black ( 725),
Menses, painful ( 725)
★ Delusions, devils all persons are, (23),
★ Nymphomania ( 68) ,
★ Delusions, small --- things appear (32) ,
★ Delusions, great person, she is ( 26) ,
★ Constipation, menses during, (608) ,
★ Constipation, travelling while, (608) ,
★Stool soft, but difficult to pass,
কিন্তু সব ইংরাজীগুলির বাংলা ত জানা নেই, ঠিক অাছে, পরে রবার্ট সাহেবকে জিজ্ঞেস করে জেনে নেবো। উনি ত বলেই দিয়েছেন, না বুঝলে পরে জিজ্ঞেস করতে।
মদন মনে মনে মোটামুটি একটা জিনিস বুঝতে পারলো----,
যারা প্রতিটি কাজেকর্মে, চালচলনে অত্যন্ত উদ্ধত, এবং অহংকারী হয় ,
এবং অন্যকে ঘৃণার মনোভাব পোষণ করে,
এবং নিজের সবকিছু ভালো, বড়, অভিজাত, কিন্তু অন্যেদের সব ছোট, নীচ, ক্ষুদ্র, হীন,
তারাই প্লাটিনা।
পর্ব-----৮
আজ সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠেেছ মদন। অন্যদিন একটু দেরীতে ঘুম থেকে ওঠে বলে পুব আকাশের সূর্য উদয় তার পক্ষে কোনদিনও দেখা সম্ভব হয় না। আজ সম্ভব হলো।
হাঁ করে সূর্যের দিকে তাকিয়ে আছে মদন। এই সময় সূর্যের কি সুন্দর টুকটুকে লাল আভা, যেন একখানি সোনার থালা আস্তে আস্তে নীচ থেকে ক্রমশঃ উপরের দিকে উঠছে। প্রতিদিন সকালে পুব আকাশে সূর্যের উদয় আর গোধূলি লগ্নে পশ্চিম আকাশে তার অস্ত যেন একটা মানুষের জীবনকেই চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয় । মানেটা যেন-- তুমি জন্মেছো, তুমি এসেছো, ভালো, এখন তুমি এইভাবে আস্তে আস্তে উপরে উঠবে, একসময় মধ্যগগনে আসবে, তারপর তোমার জীবনে অপরাহ্ন আসবে। তুমি ক্ষয়িষ্ণু ম্রিয়মান হবে। তারপর তোমাকে সব ছেড়ে, সব ফেলে চলে যেতে হবে দূরে, বহুদূরে, পৃথিবীর লোকচক্ষুর অন্তরালে । সূর্যের মতন বলয়ের দিগন্তরেখা পেরিয়ে বলাকার শেষ সীমানায়।
সূর্যকে নিয়ে মানুষের কত রচনা, কবিদের কত কল্পনা। নজরুল লিখেছে ---ভোর হলো, দোর খোলো, খুকুমণি ওঠো রে। কবিগুরু গান লিখেছেন ---- এদিন আজি কোন ঘরে গো খুলে দিল দ্বার, আজি প্রাতে সূর্য ওঠা সফল হল কার। সুকান্ত লিখছে---- হে সূর্য, তুমি এক জ্বলন্ত অগ্নিপিন্ড , তুমি আমাদের উত্তাপ দিও। উত্তাপ দিও শীতের সকালে জড়সড় হয়ে পড়ে থাকা রাস্তার ধারের ঐ উলঙ্গ ছেলেটিকে।
মদন ভাবলো, না! রোমান্টিকতার স্বপ্ন দেখলে হবে না। আজ স্যারের সাথে চা খেতে খেতে প্লাটিনামের রুব্রিক গুলোর বাংলা মানে বুঝে নিতে হবে। কারন,বিদঘুটে রুবরিকসের মানে ঠিকমতন বোঝা গেল না । যাই তবে, স্যারকে তাড়াতাড়ি চা করে দিই। কারন, চা পান করাকালীন
রুব্রিকসগুলির মানে জেনে নেবো। ডঃ রবার্ট চায়ে চিনি খান না। কারন, চিনি অত্যন্ত খারাপ বা ক্ষতিকর খাবার। সাধারণ চা উনি পান করেন না। উনি নিজে গ্রিন টি পান করেন, এবং তার সব রোগীদেরকে উপদেশ দেন গ্রীন টি পান করার জন্য। গ্রীন টি প্রোস্টেট ক্যান্সার প্রতিরোধ করতে এক অদ্বিতীয় পানীয়। তবে আরও একটি ভালো চা আছে , যা অত্যন্ত দামী। তার নাম অনেকে জানে না। নাম হোয়াইট টি। রক্তের মধ্যে বেশী কোলেস্ট্রল জমতে দেয় না। লিপিড প্রোফাইল ঠিক রাখে। তবে দাম খুব বেশী, পনেরো থেকে কুড়ি হাজার টাকা কেজি। এই সব চা পাতায় পাওয়া যায় । এক কাপ গরম জলের মধ্যে জাস্ট এক চামচ চা পাতা ঢেলে এক মিনিট কোন ঢাকনা দিয়ে ঢেকে রেখে তারপর সেঁকে চিনি ছাড়া খেতে হয় ।
চা খাওয়া আরম্ভ হলো। মদন বলতে আরম্ভ করলো স্যার, প্লাটিনার ঐ রুব্রিকগুলির একটু মানে বলে দিন।
------কি কি লিখেছিলাম বল দেখি,
স্যার প্রথমে লিখেছিলেন---
Egotism ( এগোটিজম), মানে অহংকার, অত্যন্ত অহংকারী।,
Contemptuous ( ক্যানটেমপটিউয়াস ---- মনের মধ্যে সবসময় ঘৃণাভাব) ,
Haughty ( হোয়াটি), বিদেশীদের উচচারন--ওয়াটি, ----
উদ্ধত, ঔদ্ধত্যপূর্ণ ব্যবহার, বা অাচরন।,
Delusions, every person devil --- মানে সব মানুষই ভূত, বা শয়তান,
মদন এখন ভাবছে, ঠিকই তো, গতকাল ভদ্রমহিলার আচরণে ত এইসব সিমপটমসগুলিই প্রকাশ পাচ্ছিলো। সবই তো মিলছে রুব্রিক গুলোর মধ্যে। সত্যিই কেন্ট সাহেব কি অসাধারণ মানুষ ছিলেন। মদন ভাবে বড় বড় রোগ লক্ষন লাইনগুলোকে একটা দুটো শব্দের মধ্যে কত সংক্ষেপে তিনি রূপান্তর করেছেন , তা ভাবলে অবাক হতে হয়। এইসব মানুষগুলি স্মরণীয় এবং বরণীয়।
কেন্টের কথা তুলতেই ডাঃ রবার্ট বললেন, তবে দুঃখ কি জানিস মদন, হ্যানিমান, কেন্ট, বোনিংহোসেন, এইসব মানুষগুলোর যে এত সব ভালো , অমূল্য আবিষ্কার বা সৃষ্টি, তাদের জীবনের প্রতি পদে পদে যা পরীক্ষালব্ধ সত্য, কিছু অযোগ্য, অপদার্থ হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসক --- সে সব উল্টোপাল্টা করে --- মাঝেমধ্যে নতুন কিছু আবিষ্কার করছি বলে ঢাকঢোল পিটিয়ে আদতে ঐসব গুণী মানুষগুলিকে পরোক্ষে অপমান করেছেন।
যাইহোক, ডাঃ রবার্ট চেম্বারে বসেছেন। কয়েকজন ছাত্র এসেছেন। তাদের সামনে রেপার্টরি পরীক্ষা। তাই, কোথায় কোন রুব্রিক দেখতে হয়, মৌখিক পরীক্ষায় পরীক্ষক জিজ্ঞাসা করলে যেন চটপট উত্তরগুলো বলতে পারে তাই দেখে নেওয়ার জন্য এসেছে। তাছাড়া পরীক্ষায় পাশের জন্য ত শুধু নয়, এইসব ইম্পর্টেন্ট রুব্রিকগুলি প্র্যাকটিস লাইফেও সারা জীবন কাজে লাগবে। প্রতিদিনই তো প্রতি মুহূর্তে কারুর না কারুর জন্য রেপার্টরীতে এই ধরনের বিভিন্ন রুবরিক খুঁজে বের করতে হয় ।
ডাক্তার রবার্ট জানতে চাইলেন, কার কি প্রবলেম আছে বলো ?
----স্যার, চর্ম রোগে মলম লাগিয়ে সারানো (?) যে আসলে চর্মরোগ চাপা পড়ার ব্যাপার, যেটা আমরা মনে করি, যে সাপ্রেশান হয়েছে, সেই সাপ্রেশন অফ স্কিন ডিজিজ থেকে কোন রোগ উৎপত্তি হয়েছে মনে হলে, রুবরিকটি কোথায় খুঁজবো?
-- Skin----Eruptions ----Suppressed (1319)
স্যার, হেড চ্যাপটারে পেইন বা ব্যথার চরিত্রে দপদপানি ( Pulsating, Beating, Throbbing), নেই, তাহলে তা কি সত্যিই নেই, না কি কেন্ট তা অন্য কোথাও অন্য ভাবে দিয়েছেন?
হ্যাঁ, কেন্টের রেপার্টরীতে এটি গন্ডগোল করা হয়েছে। আলাদা নতুন হেডিং দেখতে হবে--- Pulsating --- (223) ,
স্যার, ব্রন কোথায় দেখবো?
---- Face--- Eruptions --- Acne (366),
স্যার, জন্ডিস কোথায় দেখবো?
-----Skin----Discolorstion----Yellow, ( 1307)
স্যার, সায়েটিকা, কোথায় দেখবো?
---- Extremities----- Pain-----Lower limbs---- Sciatica. ( 1064)
স্যার, মাসিকের সময় পেটব্যথা কোথায় দেখবো?
--- Genitalia---- Female----Menses ----Painful.(727)
স্যার, প্রচন্ড গরমে যে হঠাৎ অনেকের স্ট্রোক হয়, কোথায় দেখবো ?
---- Head ---- Sunstroke ( 231),
স্যার, অনেকের যে হঠাৎ ঘাড় শক্ত হয়ে একদিকে বেঁকে যায়?
---- External Throat----Torticollis ( 475)

পর্ব-------- 9
55 বছরের এক ভদ্রমহিলা সেই কোন সকালে চেম্বারে এসেছেন৷ তার সিরিয়াল নম্বর ছিলো ৩। কিন্তু মদন তাকে যখনই ভিতরে যেতে বলছে, সে একটু পরে যাবো, ঐ বাচ্চাটি কাঁদছে ওর মাকে পাঠাও গো, তারপরে আবার পাঠাতে গেলে বলছে--- মদনবাবু , ঐ দাদা পায়ে খুব ব্যথা বলছে, ওকে পাঠাও । এইভাবে একে তাকে পাঠাতে পাঠাতে ভদ্রমহিলা একবারে সবার শেষে ডাক্তার রবার্টের ঘরে ঢুকলেন। আর যেই না ঢুকলেন, কারেন্ট গেল অফ হয়ে।
আহা ডাক্তারবাবু, আপনার গরমে কি কষ্ট হচছে? এই গরমে কি করে বসবেন? ভদ্রমহিলার হাতে ছিল একটি খবরের কাগজ, তাই ভাঁজ করে ডাক্তারবাবুকে সমানে হাওয়া করতে লাগলেন । ডাঃ সাহেব বললেন, আচ্ছা ঠিক আছে, আর হাওয়া করতে হবে না, এবার আপনার অসুবিধা কি বলুন।
----- পরে বলছি ডাঃ বাবু, আগে কারেন্ট আসুক, গরমে আপনার খুব কষ্ট হবে।
প্রায় ২০ মিনিট পরে কারেন্ট আসলো। ততক্ষন ভদ্রমহিলা ওই খবরের কাগজ দিয়ে ডঃ রবার্ট কে হাওয়া করেই গেলেন।
----এবারে বলুন ম্যাডাম, আপনার অসুবিধা কি?
---ডাঃ বাবু, পায়ের এই ঘা টা কিছুতেই সারছে না।
---- কতদিন হয়েছে?
---- প্রায় ১ বছর,
----- কি করে হয়েছে?
--- দেওয়ালীর সময় বাজি ফাটাতে গিয়ে ওখানে বাজির আগুনে একটু পুড়ে গিয়েছিলো। কিন্তু তারপর এতদিন হয়ে গেল, মোটেই শুকাচ্ছে না, বা সারছে না। ডাক্তারবাবু কত চিকিৎসা করালাম, কত ওষুধ খেলাম, কত মলম লাগালাম। তাও---
-----আর কোন অসুবিধা বলবেন কি?
---না, ডাঃ বাবু, আমার আর কোন অসুবিধা নেই।
রবার্ট মহিলার দিকে তাকিয়ে দেখলেন, তার ডান দিকের গলায়, এবং ডান দিকের কানের নিচে বেশ কয়েকটা আঁচিল আছে ।
----- আচ্ছা, আপনার শরীরে এইরকম আঁচিল আর কোথাও আছে ?
---- হ্যাঁ, ডাঃ বাবু ডানদিকোর পায়ে একটা আছে। আর পিঠে একটা আছে। রবার্ট টর্চ দিয়ে দেখলো ডান দিকের পিঠে স্কাপুলার ঠিক নীচে একটি অাঁচিল অাছে৷
---- আচ্ছা, আপনার ঘুম কেমন ?
---- ঘুম ত ভালই হয়, কিন্তু শোয়ার পরে সঙ্গে সঙ্গে ঘুম আসতে চায় না। অনেকক্ষণ বিছানায় ছটফট করি, এপাশ, ওপাশ করি। ঘুমের আগে এই প্রবলেমটা রোজ হয়। তারপর একসময় ঘুম এসে গেলে আর অসুবিধা হয় না। সকাল পর্যন্ত সাউন্ড ঘুম হয়।
---- পায়খানা কেমন?
----অামার পায়খানা ত ভালোই হয়, কিন্তু আমার একটা বদ অভ্যাস আছে, কমোডে বসার থেকে অর্ধ দাঁড়ানো অবস্থায় যদি দুই হাঁটুতে হাতের ভর দিয়ে দাঁড়াই, তাহলে পায়খানাটা যেন ভালোভাবে হয়। সোজা হয়ে কমোডে বসলে যেন পায়খানা কিছুতেই বের হতে চায় না । এ কি কাণ্ড বলুন দেখি।
----- টেনশন করেন? মানে উৎকন্ঠা, দুশচিন্তা কেমন?
এই যেমন ধরুন, আপনার স্বামী ফিরতে দেরি করছে, বা ছেলে ফিরতে দেরি করছে, এইরকম সময়ে খুব দুশচিন্তা হয়?
---- হ্যাঁ, ডাঃ বাব, আমার টেনশন খুব বেশী। সামান্যতেই খুব দুশচিন্তা হয়। সব কিছুতে একটু অমূলক ভয়।
------ আপনার শরীরে শীত বেশি , না গরম বেশী ম্যাডাম?
-----ডাঃ বাবু, আমার ছোট থেকেই শীত বড্ড বেশী।
----- অাপনার খাদ্যদ্রব্যের ইচ্ছা-অনিচ্ছা সম্মন্ধে কিছু বলবেন?
------ না, ডাঃ বাবু, সবই খাই, তেমন কোন ব্যাপার নেই। আমি যখন যা পাই তাই খাই।
---- পাতে আলাদা করে লবণ খান?
----হ্যাঁ, আলাদা কাঁচা নুন একটু লাগে অামার।
মিষ্টি কেমন পছন্দ করেন?
---- না , মিষ্টি একদম ভালো লাগে না ডাক্তারবাবু।
ডঃ রবার্ট প্রেসক্রিপশন করলেন কস্টিকাম 1 M, 2 dose
মদন জিজ্ঞেস করলো, স্যার কস্টিকামে ত আমরা সবাই জানি খুব সিমপ্যাথেটিক, কিন্তু অাপনাকে ত দেখলাম না, রোগী সিমপ্যাথেটিক কি না, তার দয়া মায়া বেশী অাছে কি না জিজ্ঞাসা করতে?
------- মদনা,একটা গান আছে জানিস? --- কথা কিছু কিছু বুঝে নিতে হয়, সে ত সব যায় না গো বলা।
রোগী কি তোমাকে এসে সব হড়হড় করে গল্প করে বলবে যে সে সিমপ্যাথেটিক, বা তার দয়ামায়া বেশী।
চিকিৎসকের নিজস্বতা, অনুধাবন শক্তি, বা ইনটিউশান পাওয়ার থাকবে না? দেখেছিস ত ভদ্রমহিলা একটার পর একটা লোককে ছেড়ে দিয়েছে, আমার ঘরে ঢুকে আমাকে বাতাস করে গেল আধ ঘন্টা, এগুলিকে কি বলে? সিমপ্যাথেটিক না ক্রুয়েলটি।
মদনা, অনেকে বলে ---
আমার কেস টেকিং না কি কমপ্লিট হয় না, আসলে কি জানিস --- শুধু আমি নই, আমরা অনেকেই , রোগীর সিমপটমস কালেকসনস + অনুধাবন ক্ষমতা --- এই দুইটি জিনিস একসাথে যোগ করি এবং তা নিয়েই কেস কমপ্লিট করি। কিন্তু অনেকের ত সেগুলি দেখার বা বোঝার দূরদর্শিতার অভাব। সেগুলি দেখার মতন চোখ তাদের নেই, তাই ঐরকম কথা বলে।
অনেকে যারা বলে, কেস টেকিং কমপ্লিট হয় নি, আমি বলি, তোমার ইন্টারপ্রিটেশন করার ক্ষমতা নেই, দেখার চোখ নেই, তাই তুমি পাতার পর পাতা লেখো, লিখতে তোমাকে কেউ বারন করেনি, কিন্তু দেখতে হবে তার মধ্যে মেটিরিয়ালস কতটা আছে। দুধের পাত্রে শুধু জল ভর্তি করে ত লাভ নেই, দুধটা দেখতে হবে।
তাহলে মদনা, কষ্টিকাম কেন সিলেক্ট করলাম বুঝলি? কারন ভদ্রমহিলার মধ্যে আমি পেলাম----
* দয়ামায়া বেশী,
* ডানদিকে রোগের প্রকোপ,
* টেনশন, বা উৎকন্ঠা বেশী,
* শীত বেশী,
* শোওয়ামাত্রই ঘুম আসে না, অনেকক্ষন বিছানায় এপাশ, ওপাশ করে ছটফট করে,
* শরীরের উপরের দিকে অাঁচিল,
* পাতে একটু লবন খেতে চায়,
* মিষ্টি ভালবাসে না।
* শীতকাতুরে,
* পুরানো পুড়ে যাওয়া জায়গাটা মোটেই সারছে না, সেখানেই ঘা,
* বসার থেকে দাঁড়িয়ে পায়খানা ভালভাবে করতে পারে,
* শরীরের ডান দিকেই রোগের প্রকোপ বেশী।
★বি দ্রঃ--- গল্পটিতে জুনিয়র চিকিৎসকদের শেখানোর জন্য কষ্টিকামের প্রধান প্রধান লক্ষনগুলি ডাঃ রবার্ট ও রোগিনীর মুখ দিয়ে আলোচনা করানো হয়েছে। প্রাকটিসে এইরকম একটি ঔষধের সাজানো সব সিমপটমস যে প্রতিটি রোগীতে পাওয়া যাবে তার কোন নিশ্চয়তা নেই। তবে ২/৪ টি সিমপটমস যা পাওয়া যাবে, তার সাথে চিকিৎসকের পর্যবেক্ষন, অনুধাবন ক্ষমতা, অর্গানন ও মায়াজমের নলেজ, কমন সেন্স---- সবকিছু একত্রিত বা সংঘবদ্ধ ভাবে সংগঠিত চিন্তা ভাবনার মধ্যেই প্রেসক্রিপসন বা সিলেকসন করতে হবে ।

পর্ব নং ১০
আজকের রাতের ডিনার শেষ হয়েছে। প্রতিদিনের স্বভাবসিদ্ধ নিয়ম অনুযায়ী ডাঃ রবার্ট জানালার পাশে তার ইজি চেয়ারটা নিয়ে বসেছেন। অমাবস্যার রাত, তার উপর লোডশেডিং চলছে। বাইরে ঘুটঘুটে গা ছমছমে অন্ধকার। অন্ধকারেরও যে একটা রং থাকে তা ঘন অন্ধকারের রাত না দেখলে বোঝা যায় না।
মদন ভাবলো, স্যারের মুড এখন ভালো আছে৷। এই সুযোগে কিছু শিখে নেওয়া যাক। কিছু মেটিরিয়া এবং রেপার্টরির নলেজ অর্জন করা যাক।
---- স্যার, মেটিরিয়া, এবং রেপার্টরীর উপরে কিছু শেখান।
----বল্, কি জানতে চাস?
★--- স্যার, এবিস নাইগ্রা নামে যে হোমিওপ্যাথিক ঔষধটি আছে, সেদিন ফেসবুকে দেখছিলাম আমাদের এক হোমিও চিকিৎসক বন্ধু তার অসংখ্য সিম্পটমস দিয়েছেন। এত সিমপটমস ত মনে রাখা খুবই মুশকিল। আপনি আপনার প্র্যাক্টিকাল অভিজ্ঞতার উপরে যেমন সর্টকার্ট টিপস দেন, তেমনভাবে এবিস নায়গ্রার উপরে কিছু বলুন, বা টিপস দিন।
----দেখো, এই ঔষধটি খুব ভালোভাবে পরীক্ষা করা হয়নি। এর একটি সিমটমসই শুধু মনে রাখতে হবে, এবং তা পেলে ব্যবহার করা যেতে পারে ।
সিমপটমসটি হলো--- হজমের গন্ডগোল বা ডিস্পেপসিয়ায় মনে হয়, খাদ্যনালী এবং পাকস্থলীর জংশনে একটা সিদ্ধ ডিমের মতন নরম কিছু আটকে আছে। এই একটা সিমপটমসের উপরেই এই ঔষধটি ব্যবহার করা যেতে পারে । ভালো রেজাল্টও পাওয়া যায়।
★স্যার, সিরোসিস অব লিভার, ক্যান্সার লিভার, নেফ্রটিক সিন্ড্রমে, হাত পা ফুলে যায়, পেটে জল জমে, পেট ফুলে যায়, ইত্যাদি । যাইহোক, এই সব কন্ডিশন রোধ করার জন্য রোগীকে যে সব ঔষধ আপাততঃ শোথ নিবারন করার জন্য প্রেসক্রিপশন করা যেতে পারে , তা যদি বলেন-
এই ক্ষেত্রে ----এপিস মেল, আর্সেনিক আলবা, এবং এ্যাপোসাইনাম, এই তিনটি ঔষধ ভাল কাজ করে।
* এপিসের জল পিপাসা থাকে না, প্রস্রাব কম হয়, আক্রান্ত স্থানে হুল ফোটানো ব্যথা থাকে , ঠান্ডা জলের সেঁকে আরাম বোধ হয়।
* আর্সেনিকে ঘনঘন জল পিপাসা থাকে। গরম সেঁকে আরামবোধ হয়। মানসিক অস্থিরতা ভীষণভাবে থাকে, জলপান সহ্য হয় না--- বমি হয়ে যায়, শরীরে শীতভাব থাকে,
* এ্যাপোসাইনামে পিপাসা থাকে, কিন্তু জলপান করা মাত্রই বমি হয়, নিদারুন দূর্বলতা, শ্বাসকষ্ট থাকে, শীত বেশী, ইত্যাদি।
----- স্যার, কিছু ঔষধের রোগবৃদ্ধির সময় সম্মন্ধে বলুন,
রাত ১ টা থেকে ২ টায় বৃদ্ধি ----আর্সেনিক এ্যালবা,
রাত ৩ টায় বৃদ্ধি ---থুজা,
ভোর ৪ টায়----নেট্রাম সালফ, নাকস ভম,
সকাল ৭ টায়---- ইউপেটোরিয়াম পার্ফ,
সকাল ৯ টায়----- থুজা ওকসিডেন্টালিস,
সকাল ১০ টায় ---- নেট্রাম মিউর,
সকাল ১১ টায় সালফার,
দুপুর ১২ টায়---- জিঙকাম মেট,
দুপুর ১ টায় ---- অার্সেনিক এ্যালবা,
দুপুর ১ টা থেকে ২ টা -----আর্সেনিক এ্যালবা,
বিকাল ৩ টায়---- এপিস, বেলেডোনা, থুজা,
বিকাল ৪ টায়----- কলোসিন্থ, লাইকো,
বিকাল ৪ টা থেকে রাত্রি ৮টা ----- হেলেবোরাস, লাইকো,
বিকাল ৪ টা থেকে রাত্রি ৯টা ----কলো, ম্যাগ ফস,
রাত্রি ৯ টায় ----ব্রাইওনিয়া,
রাত্রি ১১টায়----- ক্যাকটাস,
দুপুর ১২ টা থেকে ২ টা--- অার্সেনিক এ্যালবা,
রাত্রি ৩টায় ---- এ্যামন কার্ব, ক্যালমিয়া, ক্যালি বাই, ক্যালি কার্ব, থুজা,
ভোর ৫ টায়--- ক্যালি কার্ব, নেট্রাম সালফ ,

পর্ব ------ ১১
আজকের সকালের চেম্বার আরম্ভ হতে চলেছে। মদন চেয়ার টেবিল পরিষ্কার করে রেডি হয়ে বসে আছে। সবাই নাম লেখাচ্ছে। ৫ জন রোগী এসে গেছেন। কয়েকজন পুরানো রোগী মদনের চেনা জানা। কিন্তু সামনের চেয়ার ফাঁকা থাকা সত্তেও একটি বছর কুড়ির মেয়ে পিছনের সারির কর্নারের দিকের একটি চেয়ারে গিয়ে বসলো। মুখটা কেমন যেন ভারি ভারি। দেখে মনে হলো মেয়েটার মুডটা মনে হয় ভালো নেই। এর তার সাথে কথা বলতে বলতে মদন হঠাৎ মেয়েটিকে জিজ্ঞাসা করলো, দিদি আপনার কি অসুবিধা? মেয়েটি কোন কথা না বলে মাথায় আঙ্গুল ঠেকিয়ে বুঝিয়ে দিল-- মাথার যন্ত্রণা হচ্ছে ।
---ও আচ্ছা , ঠিক আছে, মদন বললো।
মেয়েটি মাঝে মাঝে উদাস ভাবে জানালা দিয়ে বাইরের দিকে তাকাচ্ছে।
মদন হঠাৎ দেখলো মেয়েটি আপন মনে একটু ফিক করে হাসলো।
পাগল? না কি মাথায় সিট আছে? মনে মনে ভাবছে মদন।
যাইহোক, মেয়েটি ভিতরে ঢুকলো এবং মিনিট পনেরো পরে সে ডাঃ রবাটের প্রেসক্রিপশন হাতে নিয়ে বেরিয়ে আসলো। রবার্ট সাহেব ঔষধ দিয়েছে ইগ্নেশিয়া ২০০, ২ ডোজ।
মদন কেসটা খেয়াল রাখলো। সুযোগ পেলেই সে ডাঃ রবার্টকে জিজ্ঞাসা করবে, বা জানতে চাইবে, মেয়েটির কেন ইগ্নেশিয়া প্রেসক্রিপসন হলো?
বিকালের চা পানের সময় প্রশ্নটা তুলল মদন ।
ডাঃ রবার্ট বললেন -- মেয়েটি এসেছিল মাথার যন্ত্রনা নিয়ে। কিন্তু কেস টেকিং করার সময় রোগের কারন বা কজেশন সে কিছু বলতে পারে কিনা জানতে চাই।
প্রথমে কিছু না বলতে চাইলেও পরে মেয়েটির কাছ থেকে জানা গেল ওদের গাড়ীটা যে বিহারী ছেলেটি চালাতো তার সাথে সে প্রেম ভালবাসায় জড়িয়ে পড়েছিলো। কিন্তু বাড়ীতে তা জানতে পেরে উত্তম মধ্যম দিয়ে ছেলেটিকে তার অভিভাবকরা বিদায় দিয়েছে। তারপর থেকে মেয়েটির খুবই মন খারাপ হয়েছিলো, এবং বর্তমানে এইরকম মনমরা হয়ে গেছে। ঐ ঘটনার পর থেকেই তার এই মাথার যন্ত্রণা আরম্ভ হয়েছে।
-----তাহলে কি বুঝলি মদন?
--- সভ্যতার খাতিরে,
ভদ্রতার খাতিরে ,
সামাজিকতার খাতিরে ,
পারিপার্শ্বিকতার খাতিরে,
মানুষ অনেক জিনিস চাপা দিয়ে চলে যায়, বা এগিয়ে যায়, বা যেতে বাধ্য হয়, কিন্তু সেই চাপা দেওয়া জিনিসগুলি তাকে সহজে ছাড়ে না । তারা অরুন রথের তরুণ সারথী হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে।
-----মদন, এইসব অবরুদ্ধ মনোলক্ষণ বা মনোভাবের জন্য যদি কেউ অসুস্থ হয়ে পড়ে, তা সে যে রোগই হোক না কেন প্রথমে ইগ্নেশিয়ার কথা মনে করতে হবে। তার সাথে যদি ইগ্নেশিয়ার অন্য কিছু লক্ষন পাওয়া যায়, তাহলে ত আরও ভালো ।
এই মেয়েটির মাথা যন্ত্রণা মাথা নিচু করলে বাড়ে। মেটিরিয়া মেডিকা পিউরাতে ২০ নম্বর সিমপটম এইটাই, মোটামোটা বোল্ডে লেখা, ----Headache which is increased by stooping forwards.
তাছাড়া পরে ক্লিনিক্যালি পাওয়া গেছে ---আশেপাশে কেউ ধূমপান করলে, সেই ধোঁয়ায় বা গন্ধে তার মাথার যন্ত্রণা বেড়ে যায়। এই মেয়েটিকে মডালিটি জিজ্ঞাসা করায় আমি এই সিমপটমটি পেয়েছিলাম।
আরো কয়েকটি ইম্পর্টেন্ট মেন্টাল সিমপটমস যা
অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, আমি কিছু অবজারভেশনে এবং কিছু জিজ্ঞাসার মাধ্যমে জানতে পেরেছি ।
কি কি পেলাম?
★ ব্রুডিং ( Brooding), মানে কথাবার্তা কম বলে। এক জায়গায় গুম হয়ে বসে থাকে। কেন্টের রেপার্টরীতে ব্রুডিং রুব্রিকটা দেখে নিবি। (১০) । ২ টি মাত্র ঔষধ ফার্স্ট গ্রেডে আছে, তার একটি ইগ্নেসিয়া।
★ আচ্ছা, মদনা,
মেয়েটি যতক্ষন বাইরে বসে ছিল, আশেপাশের লোকজনের সাথে কথাবার্তা বলছিল, না কি একা একা ঘরের এক কোণে গুম হয়ে বসে ছিলো?
---- একা একা গুম হয়ে বসেছিলো।
--------তার মানে কি বলত মদন? বেশী লোকজন তার পছন্দ নয় , দেখবি রেপার্টরীত আরো কয়েকটি ওষুধের মতন ইগ্নেশিয়া ফাস্ট গ্রেডে অাছে। রুবিকটি হলো-- Company aversion to, (১২)
★ মদন, সান্ত্বনা দিলে রাগ বা কান্না বা অভিমান সব বেড়ে যায়, শুধু নেট্রাম মিউর জানিস, কিন্তু রেপার্টরীতে দেখবি, Consolation aggravates, ইগ্নেশিয়া 1st grade এ অাছে।
★তাছাড়া মেয়েটি খুবই সেন্টিমেন্টাল। তুই রেপাটর্রীতে দেখবি, (৭৯), ইগ্নেশিয়া ফার্স্ট গ্রেডে আছে।
★ আমি লক্ষ্য করে দেখেছিলাম মেয়েটির ঘন ঘন নিঃশ্বাস পড়েে, অনেক বাংলা বইয়ে বলা হয়েছে দীর্ঘনিঃশ্বাস পড়ে।
মেয়েটির মাথার যন্ত্রনা ঐ মানসিক আঘাত, অর্থাৎ দুঃখ পাওয়ার পর থেকেই হচ্ছে । এরকম ঘনঘন নিশ্বাস ফেলতে যদি কাউকে দেখা যায় তাহলে প্রথমেই তোকে ইগ্নেশিয়ার কথা মনে করতে হবে। রেপার্টরীতে দেখবি, Sighing ( ৮০) , ইগ্নেশিয়া ফার্স্ট গ্রেড।
★ আবার এত দুঃখের মধ্যেও এরা মাঝে মাঝে অকারনে আপন মনে হেসে ওঠে। এটা একটা পিকিউলিয়ার বা অদ্ভুত লক্ষণ, যেটা মেয়েটির মধ্যে দেখা যাচছে। রেপার্টরীতে দেখবি, ( Laughing, involuntarily, 62) ,
★মেয়েটি সেন্টিমেন্টাল, রেপার্টরীতে সেন্টিমেন্টাল রুবরিকটি দেখবি , Senrimental(৭৯) , দেখবি ইগ্নেশিয়া ফাস্ট গ্রেড।
★=আবার মেয়েটির এই রোগের কজেসন বা কারন, তার মনের দুঃখ পাওয়ার পর থেকে আরম্ভ হয়েছে ধরতে পারি। সেক্ষেত্রে রেপার্টরীতে রুবরিক দেখবি---Grief, ailments from, ( ৫১)
তাহলে দেখা যাচ্ছে মদন, মেয়েটির সব সিমপটমসই ইগ্নেশিয়াকে নির্দেশ করছে।
মদন, এই প্রসঙ্গে বলে রাখি, প্র্যাকটিস অব মেডিসিন তোরা ভাল করে পড়িস না, কিন্তু রোগ ডায়াগনোসিস করতে পারলে আনুষঙ্গিক উপদেশগুলো তোদের রোগীকে দিতে সুবিধা হবে।
যেমন, কয়েকটি মাথার যন্ত্রনা মনে রাখ----
★ মাথা ব্যাথার সাথে গা হাত পা ব্যথা, সারা শরীর ম্যাজম্যাজ করে, নাক দিয়ে জল ঝরে, হাঁচি হয়,
-----বুঝতে হবে ঠান্ডা লেগে মাথা যন্ত্রণা হয়েছে।
★ মাথা যন্ত্রণার সাথে কোন একটি চোখে খুব ব্যথা হয়, মাঝে মাঝে গা বমি বমি লাগে, চোখে দেখতেও একটু অসুবিধা হচ্ছে,
------বুঝতে হবে চোখের গ্লুকোমা রোগ হতে পারে, এবং চোখের ডাক্তারকে একবার দেখাতে বলতে হবে।
★ মাথায় খুব ব্যথা হচ্ছে, তার সাথে বমি বমি ভাব, বা হঠাৎ হঠাৎ ফোর্সফুল বা প্রজেকটাইল বমি করছে,
-----মাথায় হয়ত চোট লেগেছিলো, এক্ষেত্রে তার মাথার একটা স্ক্যান করানো দরকার হতে পারে। রক্ত জমে আছে কি না, ইত্যাদি দেখার জন্য।
★ যদি মাথার একদিকে ব্যাথা হয়, গা বমি বমি ভাব থাকে, আলো এবং শব্দ অত্যন্ত অসহ্য ও বিরক্তের কারন হয় ,
----- মাইগ্রেন বা আধকপালি মাথাব্যথা।
★ কারুর যদি বয়স 50 র উপরে হয়, কপালের এক পাশে বা দুই পাশে দপদপানি, বা লাফানো ব্যথা হয়, বমির ভাব থাকে এবং বমি হতেও পারে , তবে তার সেরিব্রাল হ্যামারেজ হয়েছে মনে করা যেতে পারে ।
_★ আবার, মাথা ব্যথার সময় যদি সর্দিতে নাক বন্ধ থাকে, ঘাড়ে ব্যথা হয় গালের হাড়ে ব্যথা হয় , তাহলে বুঝতে হবে সেই রোগী সাইনোসাইটিসে ভুগছে।
★ কারুর যদি অত্যাধিক চোখের কাজ করার জন্য মাথা যন্ত্রণা হয়, বা অনেকক্ষণ ধরে টিভি দেখা, বা লেখাপড়া করা , সেলাই করা, কম্পিউটার চালানো, ইত্যাদি কারনে হয়, তাহলে বুঝতে হবে তার চোখ দুর্বল। চোখটা চোখের ডাক্তারকে দিয়ে একবার দেখিয়ে নিতে হবে। আর সব কাজকর্ম করার ফাঁকে ফাঁকে চোখের একটু বিরতি দিতে হবে।
★কোন কারণ কিছুই পাওয়া যাচ্ছে না, একজন মহিলার যখন এই রকম মাথা যন্ত্রণা হয়, প্রশ্ন করে দেখতে হবে সে গর্ভনিরোধক পিল খাচছে কি না, যদি খায়, তাহলে বুঝতে হবে, এরকম মাথার যন্ত্রনা ঐ সব গর্ভ নিরোধক পিল খাওয়ার জন্য হতে পারে ।
★ যদি কেউ ভোরবেলায় মাথাব্যাথা নিয়ে ঘুম থেকে ওঠে, তার সাথে গা গোলানো বা বমি বমি ভাব থাকে, মাথার পিছনে এবং ঘাড়ের দিকটাতে সব থেকে বেশী ব্যথা হয় , তাহলে সে উচ্চ রক্তচাপে ভুগছে মনে করতে হবে।
আজ এই পর্যন্ত থাক ।
গুড নাইট এভরিবডি।

পর্ব -------12
আজ সকালে একজন ভদ্রমহিলা কোলে বছর দেড়েকের একটি বাচ্চাকে নিয়ে এসেছেন।
ভিতরে প্রবেশ করলে, ডাঃ রবার্ট জিজ্ঞাসা করলেন,
----কি কষ্ট তোমার বাচ্চার?
----- ভীষন শক্ত পায়খানা, ৪/৫ দিন পরে পরে হচ্ছে। এইজন্য এসেছি। যখনই পায়খানা করে, ভীষণ শক্ত, গুটলে গুটলে মল। এইটুকু বাচ্চার পায়খানা ওরকম হবে কেন ডাক্তার বাবু ?
ডাঃ রবার্ট দেখলেন, বাচ্চাটি তার মায়ের কোলে ঘুমাচ্ছে, কিন্তু চোখদুটি পুরো বন্ধ হয় নি, অর্ধেকটা খোলা, মানে ভাল বাংলায় যাকে বলা যেতে পারে অর্ধনিমিলিত চোখ।
রবার্টের মনে পড়ে গেল এই পিকিউলিয়ার সিমপটমটি মেটিরিয়ায় বেলেডোনা, ওপিয়াম, জেলসিমিয়াম, কুপ্রাম মেট, ইত্যাদি ঔষধে অাছে।
কিন্তু কোন্ ঔষধকে সিলেক্ট করবে সে ?
সাংঘাতিক কোষ্টবদ্ধতা যখন অাছে, ওপিয়ামের কথা ভাবা যেতে পারে। তাহলে দেখা যাক, ওপিয়ামের অন্য কোন সিমপটমস পাওয়া যায় কি না।
----- আচছা তোমার বাচ্চার ঘুম কেমন?
★--- ঘুম ভীষন বেশী, ডাক্তারবাবু। আমার আগের বাচ্চাটা মোটেই ঘুমাতে চাইত না, , আর এই বাচচা 24 ঘন্টার মধ্যে 15 16 ঘন্টা ঘুমায়। খাওয়াতে ডাকলেও সাড়া দিতে চায় না। দেখছেন না, গতকাল রাত ৯ টায় ঘুমিয়েছে, আর এখন সকাল ৯ টায়ও তার ঘুম ভাঙছে না।
----- আর ঘুমালে এর একটা অদ্ভুত লক্ষণ পাওয়া যায়, বড়দের মতন নাক ডাকে, মানে নাসিকা গর্জন হয়। এইটুকু বাচ্চা ঘুমালে এত নাক ডাকে কেন বুঝি না।
---- ডাক্তারাবু, আর একটা অদ্ভুত লক্ষণ আমার এই বাচ্চাটার দেখি, এর গায়ে হাত দিলে ভীষন গরম লাগে, বিশেষ করে ঘাম খুবই গরম। বাচ্চাদের শরীরে হাত দিলে ঠান্ডা থাকবে, তা নয়, ---এর শরীর, ঘাম ভীষণ গরম, এত গরম কেন বুঝি না।
------আর একটা কথা ডাক্তার বাবু, এর শরীরে ব্যথা বলে কোন জিনিস কি নেই? বুঝি না ব্যাপারটা । ধুম ধাম করে সারাদিন কতবার পড়ছে, কিন্তু একবারও কাঁদে না। খাট থেকেও কয়েক বার পড়েছে, তাও একবারও কাঁদেনি।
------- আর দুই তিনবার কয়েকটি ঘটনা দেখেছি, ভয় পেলেই এর শরীর খারাপ হয়। এক দিন রাত্রিবেলা যখন আমি টয়লেটে গেছি, তখন ওর ঘুম ভেঙে যায়, ঘুম ভেঙে আমাকে কাছে না পেয়ে মনে ভয় পেয়ে ভীষণ কান্নাকাটি আর চেঁচামেচি করেছিলো, ব্যাস, সকাল না হতেই জ্বর । আবার একদিন ওর কাকা চোখ বড় করে একটু বকাঝকা করেছিলো, ব্যাস, ভয় পেয়ে সেই যে খুব কান্নাকাটি করেছিলো, তারপর থেকে বেশ কয়েকদিন পাতলা পায়খানায় ভুগেছিলো।

মদন দাঁড়িয়েছিল পাশে।
রবার্ট সাহেব মদনকে বললেন,
মদন, মন দিয়ে শুনলি ত বাচ্চাটির মা যা বললো?
ওর মা যা যা বললো, তার সাথে এই যে অর্ধ নিমিলিীত চোখ একটি মাত্র ঔষধকে নির্দেশ করে, তা হল ওপিয়াম।
মদন, মনে রাখিস, একটা ওষুধের হাজার সিমপটম থাকলেও সব মনে রাখার প্রয়োজন হয় না, বা মনে রাখা সমভব ও নয়। রেয়ার, বা পিকিউলিয়ার সিমপটমস দেখার দরকার হলে রেপার্টরী ঘাঁটতে হবে। কিন্তু, প্রতিটি ঔষধের প্রধান প্রধান লক্ষনগুলি 5, 7, 8, বা 10 টির মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে।
তাহলে মদন, ওপিয়ামের প্রধান প্রধান লক্ষনগুলি মনে রাখিস।
★ ঘুমের সময় দুটি চোখের পাতা পুরোপুরি বন্ধ হয় না, মনে হয় আধখোলা চোখে যেন তাকিয়ে আছে।
( Eye, Open, half open--247),
★ ভীষণ কোষ্ঠবদ্ধতা, ২/৪ দিন পরে পরে পায়খানা হয়, মল শক্ত, গুটলে, অনেক কষ্ট করে বের করে,
( Stool, hard-----638) ,
( Stool, balls like---635),
( Rectum, constipation---606
★ ভয় পেলেই, কোন না কোন রোগের, বা রোগলক্ষনের প্রাদুর্ভাব হয়।
( Mind, Fright, complaints from--49),
★ ঘুম খুব বেশী বা ডীপ, ডাকলেও সাড়া পাওয়া যায় না।
( Sleep --- comatose, ---1234),
( Sleep, deep--1235),
★ ঘুমালে নাক ডাকে, অর্থাৎ নাকের মধ্যে শব্দ হয়,
Respiration--- Snoring---775 )
★ শরীর ও ঘাম খুবই গরম,
( Perspiration, Hot--1297),
★ শরীরের ব্যথার অনুভব কম, কোন রোগেই, কোন অাঘাতেই ব্যথার অনুভূতি কম,
( Generalities, Painlessness----1390)

পর্ব------- ১৩
আজ সন্ধ্যায় ঝিরঝির করে বৃষ্টি হচ্ছে। চেম্বারে রোগী একটু কমই আছে। মদন সব ঠিকঠাক করে রেখেছে। ঐ ত ডাক্তার রবার্ট বাগানের দিক থেকে আসছেন। আবার এই সন্ধ্যায় বাগানে কেন? হাতে আবার একগুচ্ছ কামিনী ফুলের গোছা। ডাল থেকে ভেঙে নিয়েছে। ডাঃ রবার্ট ঢুকলেন। কামিনী ফুলের ডান্ডিগুলি মদন কে দিয়ে বললেন এগুলি ঐ ছোট্ট ফুলদানিতে একটু জল দিয়ে রেখে আমার টেবিলে রেখে দে। চেয়ারে বসতে বসতে এক স্ট্রাঞ্জা কবিতা আওড়ালেন,
" সেদিন হঠাৎ বরষা পেয়ে
কামিনী ফুল ফুটল বনে,
আমি তাহার একটি গুচ্ছ
তুলে নিলাম পুলক মনে "।
----বল ত মদনা, এই কবিতাটি কার লেখা?
--- কার আবার, রবি ঠাকুরের।
-----গাধা কোথাকার, এটি কবি সত্যেন্দ্রনাথ দত্তের লেখা। খুব উঁচুদরের কবি ছিলেন । সুকান্তের মতন খুবই কম বয়সে মারা যান। জানিস রবি ঠাকুর ওকে স্মরণ করে ওর নামে একটি কবিতায় লিখেছেন,
" যদি সত্য বেঁচে থাকত,
তবে রবি অস্ত যেতো "।
------পাঠা, রোগী পাঠা।
★ আজকের প্রথম রোগী এক ভদ্র মহিলার ১২ বছরের ছেলে। তাকে নিয়ে তার মা ঢুকলেন।
------ডাক্তারবাবু, ছেলেটির আজ এক সপ্তা হচ্ছে --- দাঁতে খুব ব্যথা হচ্ছে, কিছু খেতে পারছে না। ছেলেটি হঠাৎ বললো-----না, না, এখন দাঁতে না, চোখে ব্যথা করছে। বলতে বলতে আঃ! চোখ গেল, চোখ গেল, বলে ছেলেটি চেঁচিয়ে উঠলো। -------ঠিক করে বল, তোর কোথায় ব্যথা হচ্ছে? জিজ্ঞেস করলেন রবার্ট সাহেব।
-----নাকে ,
----- এই যে বললি চোখে,
---- না নাকে,
------চোখে না নাকে বুঝতে পারছি না ডাক্তারবাবু।
----- না, না, দাঁতে ডাক্তারবাবু, ও ঠিক বোঝে না।
ডঃ রবার্ট বাচ্চাটার চোখ দেখলেন, নাক দেখলেন, না-- কিছু ত নেই। তারপর টিথ স্পাচুলা দিয়ে দাঁতে মারতেই বাচ্চা লাফিয়ে উঠলো। রবার্ট কনফার্ম হলো--- দাঁতেই ব্যথা হচ্ছে।
মদন ভাবছিলো প্লান্টেগো মেজর ৬ বা ত০ দেবে, নয়তো মডালিটি মানে ঠান্ডায় আরাম, না কি গরমে আরাম ----জিজ্ঞেস করে কফিয়া, নেট্রাম সালফ, মার্ক সল, পালস, বা অন্য কিছু দেবে।
কিন্তু প্রেসক্রিপসনে রবার্ট সাহেব লিখলেন, কষ্টিকাম ২০০ ৪ ডোজ। কি হল ব্যাপারটা?
★ আজকের দ্বিতীয় রোগী একটি 25 বছরের মেয়ে। জানালো তিন দিন ধরে পাতলা পায়খানায় ভুগছে। দিনে ৮/১০ বার পাতলা জলের মতন পায়খানা হচ্ছে।
---কারন কিছু মনে পড়ে?
-----হ্যাঁ, ডাক্তারবাবু, তিনদিন আগে রাতে একটি বিয়েবাড়ীতে ফ্রাইড রাইস, পোলাও, তার সাথে মাটন, খেয়ে পরদিন সকালে আবার বাড়ীতে অনেকটা পায়েস পিঠে খেয়েছিলাম। তারপর থেকেই ----
---- একেবারে সোনায় সোহাগা, সব ফ্যাটি ফুডস। ঔষধ কি হবেরে মদন?
----- পালসেটিলা।
-------হুঁ, বলে রবার্ট জিভ দেখতে চাইলেন। কিন্তুু একি অাশচর্য, জিভ ত পুরো মার্ক সলের, ভীষণ ভিজা , যেন জলে ডুবে অাছে।
---- পিপাসা কেমন?
-----ভীষণ পাচ্ছে।
তাহলে আর পালসেটিলা হয় না, স্যার তাহলে নিশ্চয় মার্ক সল দেবে।
কিন্তু না, পালসেটিলাই ত লিখলো। এত বড় দুইটি কন্ট্রা ইনডিকেশন, তবু পালস কেন, মার্ক সলই বা নয় কেন? মদন ভাবতে লাগলো। পরে জিজ্ঞেস করতেই হবে।
★ তৃতীয় যিনি ঢুকলেন, তিনি রোগী নন, একজন জুনিয়র হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসক।
----স্যার একটা গন্ডগোল হলো , কেন--- কি ব্যাপার, কিছুই বুঝতে পারলাম না। আপনি যে সেদিন ওপিয়াম শেখালেন বা পড়ালেন, একেবারে হুবহু ঐ সব সিমপটমস পাওয়া একটি রোগীকে ওপিয়াম৷ ২০০ মাত্র ২ ডোজ দিয়েছিলাম। কিন্তুু রোগী এসে বলছে ----রি এ্যাকশন হয়ে গেছে, রিএ্যাকসন। এত ভাল ঘুম হত অামার , কাল থেকেই মোটেই ঘুম আসছে না। পায়খানা যে এত শক্ত হতো, ওষুধ খাওয়ার পর থেকে সমানে পাতলা পায়খানা হচ্ছে । কোথাও লাগলে কোন ব্যথার অনুভব হতো না, ঔষধ খাওয়ার পর থেকেই দেখছি সমানে পাতলা পায়খানা হয়ে চলেছে। এরকম হল কেন স্যার? রোগী ত ভীষন রেগে অাছে, শুধু বলছে --- ঔষধে রি-এ্যাকসন করেছে। স্যার হোমিওপ্যাথি চিকিৎসায় এরকম এ্যানটিপ্যাথি হলো কি করে?
মদনও ঘাবড়ে গেল। সত্যি তো ব্যাপারটা কি হয়েছে তবে?
---মদনা, এই তিনটি কেস ছোট করে লিখে ফেসবুকে পোস্ট দে তো। দেখি, জুনিয়র ডাক্তারদের কার মগজ থেকে কি উত্তর বেরোয়?
তারপরে আমার উত্তর দেবো।

পর্ব -----১৪
" ওগো বৃষ্টি, তুমি ঝরো না গো অমন করে,
আসতে চেয়েও যদি সে অাসতে নাহি পারে "।
একা একা গুন গুন করে গানটি গাইছিল মদন । কারন, সেই ভোর থেকে বৃষ্টি আর বৃষ্টি । রাস্তায় এক হাঁটু জল জমে গেছে। গাড়িগুলোর চাকা অর্ধেক ডুবে যাচছে । অনেকগুলি কচিকাঁচা জলের মধ্যে খুব আনন্দ সহকারে জামা প্যান্ট ভিজিয়ে হি হি করতে করতে দৌড়াচ্ছে। কাকগুলি ইলেক্ট্রিকের তারে বসে শুধু ডানা ঝাপটাচ্ছে। চেম্বার আজ খাঁ খাঁ করছে। একটিও রোগী অাসেনি।
মদন ভাবল এই তো সুযোগ, প্রথম জীবনে চেম্বার খুললে ত এ্যাকিউট কেস বেশী পাব। স্যারকে কিছু এ্যাকিউট কেসের ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করি।
ডাঃ রবার্ট একা একা বসে পেপার পড়ছিলেন। কারন, রোগী তো নেই। ভয়ে ভয়ে মুখ কাঁচুমাচুঁ করতে করতে মদন ভিতরে ঢুকলো।
----স্যার, একটা কথা বলবো?
-- বল।
--- বলছিলাম, আজ ত রোগী নেই, কিছু এ্যাকিউট কেস কিভাবে ট্যাকেল করবো যদি শিখিয়ে দিতেন,
-----ডাক্তারি কাউকে শেখানো যায় না, শিখে নিতে হয় মদন।
----কি বলবো বল্, তাহলে কয়েকটা ঔষধের এ্যাকিউট কেসের প্রেসক্রাইবিং শিখে রাখ।
★ জ্বর, সর্দি, কাশি, মাথা ব্যথা, পেট ব্যথা, পেটের গোলমাল,ইত্যাদি, রোগ যাই হোক না কেন তুই যদি দেখিস -----জিভটা পুরো মোটা সাদা কোটিং, যেন মোটা দুধের সর লেপে দেওয়া----- চোখ বন্ধ করেই এন্টিম ক্রুড দিবি। ৩০ কয়েকটি ডোজ, না হলে ২০০ ২ ডোজ।
★রোগ যাই হোক না কেন---- জিভটা যদি
পরিষ্কার এবং লাল টকটকে থাকে, সাথে non stopping বমি বমি ভাব, জল পিপাসা নেই,-----চোখ বন্ধ করে ইপিকাক দিবি।
★ ডায়েরিয়া, ডিসেন্ট্রি, পেটের গন্ডগোল, ঘা পাঁচড়া, শুকাচ্ছে না , জিভ ভিজা, মোটা, থলথলে, পাশে দাঁতের দাগ, মুখ দিয়ে লালা গড়িয়ে পড়ছে, পিপাসা বেশি, ----- মার্ক সল,
★ ব্লাড ডিসেন্ট্রী, যার আসল নাম - ব্যাসিলারি ডিসেন্ট্রী, ---মার্ক সলের মতন সব সিমপটমস আছে , কিন্তু মলে রক্তের পরিমান খু্ব বেশী ----- মার্ক কর,
★ বাচ্চাদের বা বড়দেরও----পাতলা পায়খানা, বা ডায়েরিয়া, বা ডিসেন্ট্রি , বা সামান্য জ্বরেও পায়খানাতে অসম্ভব পচা গন্ধ , মুখে অসম্ভব পচা গন্ধ, জিভে ঘা, জিভ বের করলে মুখের গন্ধে পাশে থাকা যাচ্ছে না, --- চোখ বন্ধ করে ব্যাপটিসিয়া ,
★ যেখানেই আঘাত লাগুক না কেন, সর্বপ্রথমেই আর্নিকা ৬, বা ৩০, বা ২০০,
★ অার্নিকা দেওয়ার কয়েকদিন পরে মাংসপেশীর ব্যথা কমে গেল, কিন্তু তারপরে হাড়ের মধ্যে ব্যথা অনুভব করলে ----রুটা ৬ বা ৩০, আর তাতেও পুরোপুরি না গেলে কিছুদিন পরে সিমফাইটম ৬ বা ৩০,
★চোখের মধ্যে যে কোন আঘাতে যদি খোঁচা লেগে হয়--- লিডাম, অার যদি খোঁচা না লেগে অন্যভাবে অাঘাত লাগে, তাহলে ----সিমফাইটাম,
★ জ্বরে, বা মাথাব্যথায় চোখ মুখ লাল থমথম করছে, হাসিখুশি আমোদের বাচ্চা ছিল, কিন্তু এখন কি রকম ভীত-সন্ত্রস্ত, ফ্যাল ফ্যাল করে তাকাচ্ছে---- বেলেডোনা,
★ হঠাৎ ফিটের রোগে বা অন্য যে কোন কারনে অজ্ঞান হয়ে গেলে অর্থাৎ সেন্সলেস হয়ে পড়ে গেলে সেই অচৈতন্য রোগীকে দুই ভ্রুর উপরে কপালে বাইরে থেকে ভিতরের দিকে দুটো বুড়ো আঙ্গুল দিয়ে জোরের চাপবি, দেখবি --- রোগী সাথে সাথে লাফিয়ে উঠবে, এবং তার জ্ঞান ফিরে আসবে। আর যদি সম্ভব হয় এমিল নাইট্রেট মাদার হ্যাপকো বা জার্মান কোম্পানিীর কিনে রাখতে হবে৷। দাম বেশী। আলোতে নষ্ট হয়। দেখবি কোম্পানি থেকে যখন ওষুধটা কিনবি ভালো করে লাইট না লাগে সেইরকম কাগজে মুড়িয়ে দেবে। ১০ মিলি কিনে রাখলেই হবে। একটু তুলাতে ২/৩ ফোঁটা লাগিয়ে নাকে ধরবি, দেখবি রোগী লাফিয়ে উঠে পড়বে।
★ যে কোন এ্যাপেনডিক্সের ব্যথা মনে হলে , অর্থাৎ নীচ পেটের ডান দিকে, বা নাভি বরাবর মাঝখানে ব্যথা হলে, প্রথম ঔষধ ---- আর্নিকা, অর্থাৎ, সর্বপ্রথম আর্নিকা প্রেসক্রিপশন করবি । কারন মনে করতে হবে , বাচ্চা লাফালাফি বা খেলাধুলা করতে গিয়ে বা দুই বাচ্চাতে মারামারি করতে গিয়ে তলপেটে আঘাত লেগে থেকে হতে পারে । নরেন বন্দ্যোপাধ্যায়ের বইয়ের শেষ পৃষ্ঠা পড়বি, লেখা আছে---- অ্যাপেন্ডিসাইটিসের তরুণ অবস্থায় আর্নিকা খুবই ভালো, তারপর রোগীর চরিত্র মিলাইয়া ধাতুগত দোষের চিকিৎসা করাই সমুচিত । শব্দগুলি একটু এদিক ওদিক হতে পারে, কারণ বই না দেখেই বলছি৷
★ যে কোন খিঁচুনি, বা তড়কায় , হাত পায়ের আঙুলগুলি যদি ভিতরের দিকে ঢুকে যায় ----কুপ্রাম মেট,
★ যে কোনো খিঁচুনি, বা তড়কায় রোগী যদি একবার এদিক, একবার ওদিক, একবার মাথাটা সামনে, একবার মাথাটা পিছনদিকে নিয়ে যাচছে , শরীর একেবারে বাঁকিয়ে চুরিয়ে ফেলছে---- সিকুটা ভিরসা,
★ পেট ব্যাথা পিছনে হেলে বসলে বা শুয়ে থাকলে যদি কমে ---- ডায়োস্কোরিয়া , হাই পোটেনসি দিতে হবে,
★ পেটব্যথা সামনে ঝুঁকে বসলে কমলে কলোসিন্থ , 30, 200 তে কমবে না, হাই পোটেনসি দিতে হবে 10 M, 50 M, C M.
★ পেট ব্যথায় কি করবে বুঝে পাচ্ছে না,পাগলের মতন একবার এদিক, একবার ওদিক, একবার হাত তুলছে, একবার পা তুলছে, একবার একটা পা ভাঁজ করছে, অন্য পা ছড়িয়ে দিচ্ছে, ইত্যাদি ---- ইংরেজিতে বলা হয় বিজার পোশচার , ----প্লাম্বাম মেটালিকাম ,
★ অন্য সময় হয় না, কিনতু খিঁচুনি বা তড়কার সময় মুখ দিয়ে খুব লালা বের হলে --- ওনেন্থা ক্রোকেটা,
★ রাতের পর রাত জাগার পর থেকে যে কোন রোগ হলে ----ককুলাস ইন্ডিকা, অন্য ২/১ টি সিমপটমস দেখতে হবে, কারন নাকস ভমও অাছে,
★ ছেলেদের অন্ডকোষে কোনরকম আঘাত লাগলে প্রথম ঔষধ--- কোনিয়াম ম্যাকুলেটাম,
★মেয়েদের ব্রেস্টে কোন রকম আঘাত লাগলে প্রথম ওষুধ --- বেলিস পেরেনিস, পরে জায়গাটা যদি শক্ত হয়ে যায়, তাহলে--- কোনিয়াম ম্যাকুলেটাম,
★বাচ্চার তড়কা, জ্বর, খিঁচুনি, পেট খারাপ, ইত্যাদি হলে --- জানতে হবে এসব আরম্ভ হওয়ার আগে তার মা কারুর সাথে খুব ঝগড়া গন্ডগোল করেছিল কি না, আর সেরকম কিছু করার পরে তাকে বুকের দুধ দিয়েছিল কি না, আর তারপর থেকে এইসব উপসর্গ দেখা দিয়েছে কি না, যদি তাই হয়, তাহলে বাচ্চার মাকে দিতে হবে ---ক্যামোমিলা,
★বহু ক্ষেত্রে ছোট নবজাতককে ঔষধ দেওয়া লাগে না, বাচ্চার সিমপটম নিয়ে যে ঔষধ আসবে, সেই ঔষধ তার মাকে দিতে হবে । কারন, মায়ের বুকের দুধের মধ্য দিয়ে বাচ্চার কাজ হবে।
আজ এই পর্যন্ত থাক মদন।
পর্ব------- 15
স্যার, বেশ কিছুদিন এ্যাকিউট কেস কিভাবে ট্রাকেল করা যায় অর্থাৎ বিভিন্ন রকম অ্যাকিউট কন্ডিশন এর উপরে কিছু ঔষধ আমাকে শেখান। কারন আমি আমার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করে শুনলাম, সবাই এটাই শিখতে চাইছে।
মদন , তুই ত নিজেই দেখেছিস --- চেম্বার শেষ করে ঘরে ঢুকতে ঢুকতে রাত একটা হয়। ডিনার শেষ করে মোবাইল নিয়ে বসতে রাত দুইটা।
তা সত্ত্বেও তোকে ভালোবেসে আর তোর বন্ধুদেরকে ভালবেসে, হোমিওপ্যাথিকে ভালবেসে, গভীর রাত পর্যন্ত পরিশ্রম করে লিখছি।
অ্যাকিউট ডিজিজের প্রাকটিস ছেড়ে দিয়েছি অনেকদিন। তবু পূর্ব অভিজ্ঞতা আর স্মৃতির আঙিনা থেকে ২/৪ টি করে প্রত্যহ বলা যাক।
★ প্রস্রাব করতে জ্বালা করছে, আগুনের মতন জ্বালা , বারবার প্রস্রাবের বেগ হচ্ছে, কিন্তুু প্রস্রাব কম হচ্ছে, আর তার সাথে অসহ্য জ্বালা, পুরুষদের প্রস্রাব দ্বার দিয়ে কিন্তুু প্রস্রাব ছাড়া কোন ডিসচার্জ বা পুঁজের মতন কিছুই বেরোয় না। -----সর্বপ্রথম সিলেকশন করতে হবে---- ক্যান্থারিস।
★ কিন্তুু পুরুষের যদি এই জ্বালা আর তার সাথে পুরুষাঙ্গ দিয়ে সাদা পুঁজের মত কয়েক ফোঁটা বা আরও বেশী বেরুতে থাকে, তাহলে ভাবতে হবে লোকটি গনোরিয়ায় আক্রান্ত হয়েছে। তাকে এইভাবে জিজ্ঞাসা করতে হবে--- বন্ধু বান্ধবের পাল্লায় পড়ে কোন বাজারী খারাপ মেয়ের সাথে মেলামেশা করেছিলেন কি?
কারন, শুধু জ্বালা হলে তা হবে ইউরেথ্রার মধ্যে ইরিটেশনের জন্য ---- জল কম খাওয়ার জন্য, বা পাথর ফর্মেশান হওয়ার ছোট ছোট বালিকনা ইউরেথ্রার মধ্যে ঘর্ষনের জন্য, ইত্যাদি কারনে। কিন্তু পুঁজ জাতীয় পদার্থ বেরুলে বুঝতে হবে---- গনোরিয়ায় আক্রান্ত কোন মহিলার সাথে মেলামেশা হয়েছে। জিজ্ঞাসায় জানা যায়, হ্যাু, ঠিকই, মেলামেশা হয়েছিলো আর ঠিক তা পর থেকেই এই জ্বালা আর পুঁজের মতন বেরুচ্ছে। তার মানে লোকটি গনোরিয়ার আক্রান্ত। এ ক্ষেত্রে প্রথম ঔষধ ভাবতে হবে----- ক্যানাইবাস ইন্ডিতমা।
গনোরিয়া যদি কোন মহিলার থাকে তাহলে সেই মহিলা কিন্তু বুঝতে পারে না যে তার গনোরিয়া আছে। গনোরিয়াল স্রাব কে সাদা স্রাব ভাবে। কোন ব্যথা-বেদনা হয় না, বা জ্বালা যন্ত্রনা থাকে না। কিনতু সে কেরিয়ার থেকে যায়। তাই যদি কোন কল গার্ল বা বারবণিতার সাথে ১০ জন পুরুষ মেলামেশা করে , ঐ ১০ জনই গনোরিয়া নিয়ে বাড়ি ফিরবে। কিন্তু ঐ মহিলার নিজেও জানে না যে সে দশজনকে সর্বনাশ করেছে। আবার কারুর স্ত্রীর যদি কোথাও গোপন অভিসার থাকে এবং সে ঐ ব্যক্তি দ্বারা গনোরিয়ায় আক্রান্ত হয়ে বাড়ীতে আসে, এবং তার স্বামীর সাথে মেলামেশা হওয়ার পরে সেই স্বামী গনোরিয়ায় আক্রান্ত হবে। অর্থাৎ vice versa.
যাইহোক গনোরিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার পরে অনেক পুরুষের পরে ইউরেথ্রা বা মূত্রনালী সরু হয়ে যায়। ডাক্তারীতে একে বলা হয় Stricture of the urethra, অর্থাৎ প্রস্রাবনালীর সংকীর্ণতা। সিমপটমস হলো---- থেমে থেমে প্রস্রাব হওয়া এবং যন্ত্রনা, প্রস্রাব শেষ হওয়ার মুখে যন্ত্রণাটা বেশি হয়। প্রথম স্টেজে এই রোগে প্রেসক্রিপসন -----ক্লিমেটিস ইরেক্টা।
★ গাউট বা গেঁটে বাত । বুড়ো আঙ্গুলের জয়েন্ট ফুলে যায়, অসহ্য ব্যথা হয়--- এক পাও হাঁটতে পারে না।
ভালভাবে কেস টেকিং করে কোন কনস্টিটিউশনাল ডীপ এক্টিং ঔষধ পরে দিতে হবে ঠিকই, কিন্তু আপাততঃ ব্যথাটা কমাতে গেলে মডালিটিস দেখতে হবে। তোমার চেম্বারে যদি গরম জল করার সুযোগ থাকে, তাহলে একটু গরম জল করে একবার গরম জলে, তারপর একবার ঠান্ডা জলে সেঁক দিয়ে দেখতে হবে কোনটাতে আরাম লাগছে । চেম্বারে সুযোগ না থাকলে আপাতত পরের দিন আসতে বলতে হবে। ঠান্ডা জলে আরাম পেলে লিডাম, এবং গরম জলে আরাম পেলে গুয়েকাম।
যেকোনো ফোঁড়ার ব্যথা, বাতের ব্যথা, আঙ্গুল হাড়ার ব্যথা ইত্যাদিতে ঔষধ প্রেসক্রিপশন সঠিক করতে হলে প্রথম এবং প্রধান কর্তব্য গরম বা ঠান্ডা কোনটিতে আরাম লাগে তা দেখা। গরমে আরাম হলে আর্সেনিক হিপার সালফার , এবং ঠান্ডা জলের সেঁকে আরাম পেল লিডাম , ব্রায়োনিয়া, মেডোরিনাম, পালসেটিলা, ইত্যাদি।

পর্ব-----১৬
সেদিন বিকালে চা খাওয়ার পরে ডাঃ রবার্ট নিজেই বললেন,
--- মদন, তাহলে এ্যাকিউট ডিজিজের কিছু টিপস জেনে রাখ----
★ ছোট বাচ্চাদের বুকে খুব কফ, ঘড়ঘড় করছে, সাঁই সাঁই করছে, দম নিতে পারছে না, ---- জিভ পরিষ্কার থাকলে---- ইপিকাক ৬, জিভে হালকা সাদা কোটিং থাকলে এ্যান্টিম টার্ট ৬,
★ কাশি, স্বাসকষ্ট, বমি, ইত্যাদির সাথে কপালে খুব ঠান্ডা ঘাম দেখতে পেলে--- এ্যান্টিম টার্ট,
★ শুকনো ঠান্ডা লেগে স্বরভঙ্গ হলে, এবং গলায় ব্যথা থাকলে ----- কষ্টিকাম
★ খুব রোদের মধ্যে ঘোরাঘুরি করার পরে স্বরভঙ্গ হলে --- এ্যান্টিম ক্রুড,
★ বাচ্চাদের সর্দি, কাশিতে, বিশেষ করে শীতকালে হলে, ------হিপার সালফার
★ পিচকারি দিয়ে জল বের করার মতন তেড়ে পায়খানা, তার সাথে পেটের মধ্যে ভীষণ আওয়াজ ----খুব জোরে জোরে হড়হড়, গড়গড় আওয়াজ ---- জ্যাট্রফা, ৩০,
★ প্রচুর পায়খানা, ভীষন দূর্গন্ধ, ভোরবেলা থেকে আরম্ভ ----পডোফাইলকম
★ ডাযেরিয়া, ডিসেন্ট্রি, ---বেগ লাগলে একদম দেরী করতে পারে না, সামান্য দেরী হলেই কাপড় চোপড়ে---- এলোজ,
★ পায়খানা, বমি, বা যে কোন রোগেই যখন রোগের তুলনায় রোগীকে অনেক বেশী দূর্বল দেখায়--অসেনিক এ্যালবা
★ অর্শে বেশী ব্যথা নেই, জ্বালা আছে, গরম সেঁকে আরাম-----অার্সেনিক এ্যালবা,
★ অর্শে ভীষন ব্যথা, গরম সেঁকে আরাম ----- হাইপেরিকাম ২০০,
★ জ্বরে সব সময় কাপড় মুড়ি দিয়ে শুয়ে থাকতে চায়--- নাকস,
★ রক্ত পায়খানা মার্ক সল, মার্ক করে কোন উন্নতি না হলে--- ট্রম্বিডিয়াম

পর্ব--------- ১৭
আজ রাতে রবার্ট সাহেবের চেম্বার একটু তাড়াতাড়ি শেষ হলো। মদনকে ডাকলেন তিনি। কারন রবীন্দ্রনাথের পুরাতন ভৃত্যের মতন মদনকে তিনি বকেন, আবার ভালও বাসেন।
--------মদন,এ্যাকিউট কেস প্র্যাকটিস করার জন্য তবে সময় পেলেই তোকে কিছু কিছু বলবো বা শেখাবো। তাতে নিশ্চয় তোর কিছু জ্ঞান অর্জন হবে।
★ বাচ্চার জ্বর কিছুতেই যাচ্ছে না, বারা মা ভীষণ চিন্তা করছে। জ্বর মাঝেমধ্যে ১০২ বা ১০৩ ডিগ্রী উঠে যাচ্ছে। বাচচা চুপচাপ ভাবে নেতিয়ে পড়ে থাকছে। আর এতেই সবাই বেশী ভয় পাচ্ছে। তুমি নিজেও জুনিয়র চিকিৎসক বলে হয়ত ভয় পাবে৷ সবাই ভয় পাচ্ছে একটাই কারনে---কারন, বাচ্চা একদম তাকাচ্ছে না , বেশী কিছু জিজ্ঞেস করলে সে কোন কথার উত্তরও দিচ্ছে না। কোন কথার উত্তর দিতে বাধ্য করালে সে জোর করে একটু চোখ খুলে আবার চোখ বন্ধ করছে। চোখ লালচে হয়ে আছে আর চোখ দিয়ে জল ঝরছে। তাই সে বেশীক্ষন চোখ খোলা রাখতে পারছে না।
ভয় পাওয়ার কোন কারণ নেই। আমার অভিজ্ঞতায় দেখেছি খুব তাড়াতাড়ি হাম বেরুবে। এইরকম অবস্থায় জেলসিমিয়াম 30 , 3 বা 4 ঘন্টা পর পর 6, 8, বা 10 ডোজ দিতে হবে । যারা প্রাকটিস অব মেডিসিনে ভালভাবে পড়েছে, তারা এইসময় বাচচার মুখ হাঁ করিয়ে টর্চ দিয়ে দেখলে কপলিকস স্পট দেখতে পাবে।
জেলসিমিয়াম ছাড়া আর কি ঔষধ আসতে পারে?
★ চোখ বন্ধ করে থাকছে না, চোখ খুলছে, চোখে এত জলও আসছে না, কিন্তু বেশী কথা বলতে চাইছে না, চুপচাপ শুয়ে থাকছে, শুধু জল খেতে চাইছে, পায়খানা করছে না, করলেও খুব শক্ত, জিভ সাদা কোটেড---- ব্রায়োনিয়া এ্যালবা।
★ জিভ, মুখ শুকনো তবু জল পিপাসা মোটেই নেই, বেশী কথাবার্তা বলছে না, শান্তভাবে চুপচাপ শুয়ে থাকে ----- পালসেটিলা।
★ ৩, ৪, ৫ দিন হয়ে গেল, জ্বর মোটেই কমছে না, সমানে বাড়া কমা হচ্ছে ---- সালফার ২০০ ১ ডোজ, চড়চড় করে হাম বেরিয়ে যাবে।
★ বহুদিন ধরে বিড়ি, তামাক, সিগারেট , খৈনি, দোক্তা, পানপরাগ, ইত্যাদি যাদের খাওয়ার অভ্যাস, তাদের যখন সুনির্দিষ্ট কোন ঔষধে কাজ না হতে থাকে, তখন চিকিৎসার মাঝখানে একবার নিকোটিন ২০০, বা ট্যাবেকাম ২০০ ১ ডোজ দিতে হবে। অত্যাধিক চা পানের ক্ষেত্রেও Thea 2oo ১ ডোজ মাঝখানে দেওয়ার দরকার হতে পারে।
★ কারসিনোসিন ঔষধটি at random অনেকেই রাতদিন প্রয়োগ করে চলেছেন। কিন্ত এই ঔষধটি মোটেই হ্যানিম্যানিয়ান পদ্ধতিতে প্রুভিং হয় নি। একটি ব্রেস্ট ক্যান্সার রোগীর টিস্য থেকে হোমিওপ্যাথিক পদ্ধতিতে শক্তিকৃতভাবে ঔষধ বানিয়ে লন্ডনের ডাক্তার ফুবিস্টার বেশ কিছু রোগীর ক্ষেত্রে এই ঔষধের ক্লিনিক্যাল প্রুভিং করেছিলেন। সেই ক্লিনিকাল প্রুভিংয়ে যে অভিজ্ঞতা তার হয়েছিল তা তিনি একটি ছোট্ট বই আকারে লিপিবদ্ধ করেছেন। বইটির নাম হচ্ছে -----" কার্সিনোসিন ড্রাগ পিকচার "। কিন্তু কি তার অভিজ্ঞতা, কি তার ক্লিনিক্যাল এক্সপেরিমেন্টে পাওয়া লক্ষনগুলি, কখন কিভাবে কোন কোন লক্ষনে ঔষধটি প্রেসক্রাইব করতে হবে, তা না জেনে অনেকেই দেদারে এই ঔষধটি ব্যবহার করে চলেছেন, ঠিক যেমন অনেকে নেচে গেয়ে হোমিওপ্যাথিক মেটিরিয়া মেডিকার ঔষধের, বা কেন্টের রেপার্টরীর রুবরিকগুলির মনগড়া নানারকম অপব্যাখ্যা চালাচ্ছে পাকা অভিনেতাদের মতন । কার্সিনোসিন সম্মন্ধেও ফেসবুকে অনেকেই বড় বড় লেকচার দিচ্ছে, কোথাও ক্যান্সার হলে দিচ্ছে, ক্যান্সার যাতে না হয় তার জন্য আগে থেকে দিচ্ছে, ইত্যাদি। তাই এরকম ইচ্ছামতন কার্সিনোসিন প্রেসক্রাইব না করে দয়া করে ফুবিস্টারের অরিজিনাল বইটি পড়ো, যা তিনি পরীক্ষা নিরীক্ষা করে লিখেছেন।
★ রোগীর অতীত রোগের ইতিহাস লেখার সময়--- পাগলা কুকুরে কামড় দিয়েছিল কি না, অবশ্যই জিজ্ঞাসা করতে হবে এবং লিখতে হবে। এবং অনেকদিন অাগে, এমনকি দশ, পনেরো , বা কুড়ি বছর আগেও যদি পাগলা কুকুর কামড় দিয়ে থাকে এবং তার জন্য যদি ভ্যাকসিন নিয়েও থাকে, তার কোন রকম সমস্যা বা প্রবলেম হলে, বা সুনির্দিষ্ট কোন ঔষধে কাজ না হতে থাকলে অবশ্যই----- লাইসিন ২০০ বা ১০০০ এক ডোজ দিতে হবে।
★ হঠাৎ ঠান্ডা লেগে নাক দিয়ে পাতলা সর্দি পড়তে থাকলে, এবং নাক জ্বালা করতে থাকলে এলিয়াম সেপা দিতে হবে, তা প্রত্যেক মেটিরিয়া মেডিকা বইয়ে লেখা আছে। আর প্রত্যেকে ত লিখবেই , কারণ, একজন কেউ কিছু লিখে গেলে বই লেখার সময় যুগ-যুগান্ত ধরে সবাই সেই সিমপটমটাই ত ইধার কা উধার করে চালিয়ে যাচ্ছে, কারন-- নিজেদের কোন, পরীক্ষা নেই, ভেরিফিকেশন নেই, নিজেদের অভিজ্ঞতার কোন ঝুলি নেই, বুনিয়াদ নেই । ---- আমি ত এলিয়াম সেপা বারবার , বহুবার ব্যবহার করে খুব একটা কাজ পাইনি বা ফল পাই নি। আমি বরং এইরকম acute cold rhinitis এ আমাদের ইন্ডিয়ান ড্রাগ --- জাস্টিসিয়া এ্যাডহাটোডা মাদার থেকে নিজে 2 3 4 5 6 এইরকম পোটেনটাইজ করে ব্যবহার করে বেশী ভাল কাজ পাই বা ফল পাই।
★ সর্দি কাশি বা হাঁপানিতে আমি নিজে একটি ওষুধ পরীক্ষা করেছি, পার্থেনিয়াম থেকে। কারন--- বিভিন্ন পত্র পত্রিকায় পড়েছি পার্থেনিয়াম অত্যন্ত বিষাক্ত, ও হাইলি এলার্জিক। তাই এর এলার্জেনকে শক্তিকৃত করে এ্যান্টি এলার্জিক ভাল ঔষধ হতে পারে কি না তা দেখার জন্য ক্লিনিকাল প্রুভিং করে চলেছি, এবং ভালই উপকার দেখছি।
★ মেয়েদের মাসিক একমাস ভালোভাবে নরমালি হচ্ছে, কিন্তু পরের মাসে অনেকদিন ধরে প্রচুর পরিমাণে হচ্ছে। ইংরেজি বইগুলিতে লেখা হয়েছে, Menses profuse in every alternate months.
এই পিকিউলিয়ার সিমপটমস এর উপরে একটি মাত্র ইম্পরট্যান্ট ঔষধ আছে, তা হলো--- থ্যালাস্পি বারসা প্যাস্টোরিস। ঔষধটি সাধারণত মাদার ৫ বা ১০ ফোঁটা ডোজে ব্যবহার হয়। তবে ৩, ৬, ৩০ শক্তিতেও ব্যবহৃত হতে পারে। কেউ পরীক্ষা করে দেখতে পারো মদন, কারন আমার ঐ সব শক্তিতে পরীক্ষা করা হয় নি।
★ হিমোফিলিয়া রোগটির লক্ষন হলো----রক্ত জমাট বাঁধে না। কোএ্যগুলেশন ফ্যাক্টর এইট এর জন্য দায়ী। এই রোগে হোমিওপ্যাথিতে একটি উল্লেখযোগ্য ঔষধ হলো ফসফরাস। অবশ্যই কিছু সিমপটম সিমিলারিটি ওয়েতে নিশ্চয় মিলিয়ে দেখতে হবে৷। ফসফরাস যদি কিছু সিমপটমস মিলিয়ে আসে, ভাল কাজ করে। এসব জেনেটিক রোগ সম্পূর্ণ সারানো সম্ভব নয়, তবে শরীরের ইমুনিটি পাওয়ারকে বাড়িয়ে রক্তের জমাট বাঁধা প্রসেস কে ত্বরান্বিত করতে কিছু হলেও সাহায্য করে।
----- স্যার আজকাল ১০০ জন রোগীর মধ্যে ৯০ জন গ্যাস আর অম্বলের।
এই গ্যাস, অম্বলের রোগীদের ব্যাপারে দয়া করে কিছু বলুন।
ভালো প্রশ্ন করেছিস মদন। এই গ্যাস অম্বলের ব্যাপার সম্মন্ধে বহু রোগীদের মধ্যে স্বচ্চ ধারণা নেই। তারা শরীরের অনেক রোগকেই গ্যাস আর অম্বলের জন্য ভেবে থাকেন। যেমন , তোকে একটা উদাহরণ দিচ্ছি। ধর---- একটি রোগী আসলো। আমি তাকে জিজ্ঞাসা করলাম-----
-------বলুন, কি হয়েছে? ------গ্যাস, গ্যাসে শেষ হয়ে গেলাম।
গ্যাস আর অম্বল আমাকে শেষ করে দিল ডাক্তারবাবু। রোজ একটা করে গ্যাসের বড়ি খাচ্ছি, তাও কিছুই ত হল না।
কিম্বা ধর ---রোগী অন্য কষ্ট নিয়ে এসেছে, কিন্তু, কেস টেকিং করার সময় জিজ্ঞাসা করা হলো,
-----আপনার আর কি অসুবিধা? মানে আর কোন সমস্যা আছে?
-----আমার আর অসুবিধা বলতে --গ্যাস ডাঃ বাবু, এই গ্যাসেই ত অামাকে শেষ করে দিল। জানেন, আমার পা থেকে মাথা পর্যন্ত গ্যাসে ভর্তি। গ্যাস আমার মাথায় উঠে এমনভাবে চাপ দেয় , সে আপনাকে কি আর বলব ডাঃ বাবু, শুধু পাগল হতে বাকী রাখে। রোজ রানটাক খাচ্ছি ৩০০ পাওয়ারের, কিন্তু যতক্ষন খাই, একটু কম থাকে, তারপর যা তাই।
সঙ্গে সঙ্গে গ্যাস বা এ্যাসিডিটির কথা হয়ত তুমি লিখবে মদন। কিন্তু তাতে রোগীও মরবে , আর তুমিও মরবে। রোগী মরবে মানে---ভুল বলার ঔষধ পাবে, আর তুমি মরবে মানে ----গ্যাস নামক শব্দের মহান রোগীরা তোমার চেম্বারে আর ঢুকবে না ।
তাহলে কি করবে?
বলবে ------- আচ্ছা, গ্যাস বলতে আপনি কি বুঝছেন আমাকে বুঝিয়ে দিন।
রোগী হয়ত বলবে-----
------ কেন বারবার বলেছি না, মাথার পিছন দিকটা যেন ফেটে যায়। বিশেষ করে সকালে ঘুম থেকে উঠলেই মাথার পিছনটা একেবারে ফেটে যায়, মাথা সোজা করতে পারি না।
---------- তাহলে-- গ্যাস, অম্বল বলছেন কেন বারবার? আপনি ত বলবেন যে আমার মাথা ব্যথা করে। রোজ সকালে ঘুম থেকে উঠলে আমার মাথা ব্যথা করে।
---- আরে বাবা, সব ঐ গ্যাসের কারনেই ত হহচ্ছে ডাঃ বাবু । গ্যাসের জন্যই ত সব, আমি পরিষ্কার বুঝতে পারছি। গ্যাস মাথায় উঠেই এই সর্বনাশটা করছে। ।
প্রেসার দেখে বোঝা গেল রোগী ভুগছেন ম্যালিগন্যান্ট হাইপারটেনশনে৷ সিস্টলিক ২১০,ডায়াসটলিক ১১০, নিজেও বুঝলো গ্যাসের জন্য, আর তোমাকেও বুঝালো গ্যাসের জন্য। ।
তাহলে মদন, তুমিও অাসল ব্যাপার না বুঝে তার কথা শুনে হয়ত ঔষধ দেবে চায়না , আর চায়নার তাড়াতে রোগী তখন যাবে আমেরিকায়।
পর্ব --------১৮
----- আজ সকালে চেম্বার শেষে ডাঃ রবার্ট নিজেই মদনকে ডেকে বললেন,
--------মদন, অ্যাকিউট ডিজিজ এর চিকিৎসা করার জন্য কিছু পিকিউলিয়ার সিমপটমস জেনে রাখ-----
★ ঝরনা বা পাহাড়ী নদীতে যখন জল কল কল করে উপর থেকে নিচে নামে, তা দেখে মাথা ঘুরে যায় ----ফেরাম মেটালিকাম,
★ মেয়েদের ঋতুস্রাব এত কম যে মাত্র এক বা দুই ঘণ্টা স্থায়ী হয়, তার বেশী আর হয় না----ইউফ্রেশিয়া ,
★ মেয়েদের প্রিয়ড হওয়ার নির্দিষ্ট তারিখে ---প্রিয়ড হয় না, কিন্তু ঠিক সেই দিনগুলিতেই ----প্রচুর সাদা স্রাব বা লিউকোরিয়া হয়----- ককুলাস ইন্ডিকা,
★ প্রিয়ডের তারিখগুলিতে প্রিয়ড হয় না , কিন্তু ঠিক সেই সময় প্রচন্ড মাথা যন্ত্রণা হয়----- গ্লোনয়িন ,
★প্রত্যেকবার কাশির ধমক শেষ হলে এক টুকরো দূর্গন্ধ কফ মুখের ভেতর থেকে ঠিকরে বাইরে পড়ে ---- ক্যাপসিকাম ,
★ মাথার চুল গায়ে গায়ে বড্ড জড়িয়ে যায়, যাকে বলে চুলে জট পড়ে --- বোরাক্স,
★ খাবার দাবারের গন্ধ একেবারেই সহ্য হচছে না, যে কোন রান্না করা খাবার দেখলেই বমি আসছে, ----ককুলাস ইন্ডিকা,
★ দাঁড়িয়ে প্রস্রাব করলে ঠিক মতন প্রস্রাব করতে পারে, বসে করতেই পারে না -- অসুবিধা হয় ----- সার্সাপেরিলা৷,
★ পেট ব্যথার সময় মনে হয় পেটের সামনের দিক থেকে একটা দড়ি বা বেল্ট দিয়ে পেটটাকে যেন পিছন দিকে ভার্টিব্রাল কালামের সাথে টাইট করে কেউ বেঁধে রেখেছে -----প্লাম্বাম মেটালিকাম ,
★ হার্টে মনে হয় শক্ত লোহার তার দিয়ে টাইট করে পিছন দিকে বেঁধে রেখেছে ---- ক্যাকটাস,
★ নতুন বিবাহিতা মহিলাদের প্রস্রাবের রোগ, প্রস্রাব আটকে যাচ্ছে , সাথে জ্বালা ও ব্যথা --- স্টাফিসেগ্রিয়া,
★ সামনা সামনি বসলেও চোখের দিকে তাকিয়ে কথা বলতে পারে না, অন্য দিকে তাকিয়ে অাড় চোখে কথা বলে----- স্টাফিসেগ্রিয়া ,
কলেরা টি বি, ক্যান্সার, এসব বড় বড় অসুখের বড্ড ভয় ---- নাইট্রিক অ্যাসিড,
★ টিন এজের ছেলেরা রাত দিন একা থাকতে চায়, বাইরে বেরুতে চায় না, বদ্ধ ঘরের মধ্যে থেকে শুধু হস্তমৈথুন করার ইচ্ছা------ বিউফো রানা,
★ প্রত্যেকবার মাসিকের সময় গলায় ব্যথা হবেই হবে ----ম্যাগ কার্ব, ল্যাক ক্যানাইনাম,
★ প্রত্যেকবার মাসিকের সময় পাতলা পায়খানা হবেই হবে ------এ্যামন কার্ব, বোভিষ্টা, ভিরেট্রাম এ্যালবাম, পালসেটিলা,
★ প্রত্যেকবার মাসিকের সময় পায়খানা খুব শক্ত হয়ে যায় ----সাইলিসিয়া
★ প্রত্যেকবার মাসিকের আগে বা পরে মুখে ব্রণ বের হয় --কোনিয়াম, ডালকামারা৷,

পর্ব ---------১৯
------ স্যার দুইদিন হয়ে গেল, নতুন কিছু শেখাচ্ছেন না, মদন বললো।
---- দেখছিস না মদন, চেম্বার শেষ করতে রাত একটা বেজে যাচ্ছে, ডিনার শেষ করতে রাত দুইটা। তাহলে তোকে শেখাবো কখন, বলতো?
-----তবু আজ দুই চারটা সিমপটমস জেনে রাখ----
★ পায়ের তলায় কড়া ---- এন্টিম ক্রুড, গ্রাফাইটিস ,. প্লাম্বাম, ইত্যাদি ঔষধ সিমপটম সিমিলারিটি দেখে প্রেসক্রিপসন করতে হবে।
খুব ব্যথা থাকলে হাইপেরিকাম 30 , ১০/১২ ডোজ দিনে ৩/ ৪ বার করে দিতে হবে ।
নতুন ব্লেড দিয়ে কড়ার উপরের অংশ ২/৩ মাস অন্তর আস্তে আস্তে অল্প অল্প করে কেটে দিতে হবে। কাটতে কাটতে সামান্য রক্ত বেরুলে সেদিনের মতন কাটা বন্ধ করতে হবে। আর রক্তের উপর তুলা দিয়ে সামান্য সময় চেপে রাখতে হবে। রক্ত বেরুনো বন্ধ হয়ে যাবে।
এবারে ব্লেডের কোনা কড়ার চারিদিকে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে মাঝখানের সাদা শেকড়ের মতন অংশটা তুলে দিতে হবে৷ এতে রোগীর কোন ব্যথা রাগে না। তা না হলে তুমি যতই ওষুধ দাও, সারতে বা নির্মুল হতে অনেক দেরী হবে।
★ স্বামী স্ত্রীর মেলামেশার পরে অনেক মহিলারা ফেইন্ট বা অজ্ঞান হয়ে যায় । অনেকগুলি কেস আমি পেয়েছি, এবং সিপিয়া দিয়ে ভালো রেজাল্টও পেয়েছি। আমার কেসগুলিতে সিপিয়ার সিমপটমস ছিল । রেপার্টরীতে দেখতে হবে ---Generalities------- Faintness ------- Coition after (1359), তাই অবশ্যই সিমপটমস মিলিয়ে দেখতে হবে ।
কারনটা কি? ব্যথার জন্য ত নয়৷ অন্য কোন কারণও ত দেখা যায় না। তাহলে কেন হয়? কোন বইয়ে যথাযথ উত্তর বা কারন পাই নি। আমার মনে হয় যে সব মেয়েদের অর্গাজম বা যৌনসুখানুভূতি অত্যাধিক বেশী তারাই এই রোগের বা এই অবস্থার শিকার হয়।
★ বাচ্চাদের হাইড্রোক্যাফেলাস, বা ব্রেনে জল জমা রোগটির থেরাপিউটিক্যালি অনেক ঔষধ আছে । যেমন---এপিস মেল, হেলেবোরাস, ক্যালকেরিয়া কার্ব, ইত্যাদি । বহু ক্ষেত্রে আমি দেখেছি কালকেরিয়া খুবই উপকারে আসে। অবশ্যই সিমপটমস মিলিয়ে দেখতে হবে । তবে বেশীরভাগ বাচ্চাই বেশীদিন বাঁচে না। চেষ্টাই চিকিৎসক ও বাচ্চাদের অভিভাবকদের তরফে একমাত্র চিকিৎসা।
★ ছোট ছোট বাচ্চাদের লিউকোডার্মা বা শ্বেতী রোগেও ক্যালকেরিয়া কার্ব ঔষধটি বেশীরভাগ ক্ষেত্রে আসে।
★ মাসিকের সময় মেয়েদের পেটব্যথায় ----যত বেশি স্রাব, তত বেশী পেট ব্যথা---- সিমিসিফিউগা রেসিমোসা৷ এই ঔষধটির আরও একটি নাম আছে ------ একটিয়া রেসিমোসা।
★ মেয়েদের মাসিকের সময়ে পেট ব্যথা পেটে আড়াআড়ি ভাবে হয়। মানে, বাম দিক থেকে ডান দিক, বা ডান দিক থেকে বাম দিকে----- সিমিসিফিউগা
★ মাসিক রক্তস্রাবের সময় মেয়েদের ব্যথা তলপেটের সামনের দিক থেকে পিছন দিকে যায় ----- ( Pubis to Coccyx) ----- সিপিয়া,
★ মাসিক রক্তস্রাবের সময় ব্যথা তলপেটের পিছন দিক থেকে সামনের দিকে আসে ( Coccyx to Pubis ) --- স্যাবাইনা,
পর্ব-----২০
আজকের ডিনার শেষে ডাঃ রবার্ট প্রত্যেক রাতের মতন জানালার পাশে তার ইজি চেয়ারটায় বসেছেন৷। পূর্ণিমার দুইদিন পরের সামান্য ক্ষীয়মান চাঁদ পূব আকাশে দেখা যাচ্ছে। স্নেহভরে তিনি ডাকলেন মদনকে।
-------- মদন, কিছু টিপস বলি, শোন,
★ মাথা যন্ত্রণা জল পান করা মাত্রই বাড়ে -----সাইমেক্স ,
★ দিনের বেলা জ্বর আসে , কিন্তু রাত্রে কখনো জ্বর আসে না----চায়না,
★ জ্বরে গা হাত পা ভীষণ ব্যথা, বিশেষ করে হাড়ের মধ্যে ব্যথা। মনে হয় শরীরের সব হাড়গোড ভেঙে চুরমার হয়ে গেছে। তা সে সাধারণ জ্বর, বা ডেঙ্গু , বা টাইফয়েড, বা অন্য যে কোন জ্বর বা যে কোন উপসর্গই হোক না কেন। হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসকদের কাছে একমাত্র ব্রহ্মাস্ত্র ---- ইউপেটোরিয়াম পার্ফোলিয়েটাম।
★ বাচ্চাকে তিরস্কার বা ভৎর্সনা করার পরে অসুস্থ হয়ে পড়লে ----ইগ্নেশিয়া,
★আত্মহত্যার ইচ্ছা প্রবল----রেপার্টরীতে অরাম মেটালিকাম এবং নেট্রাম সালফ ফার্স্ট গ্রেডে দেওয়া আছে, এবং আয়োডিয়াম থার্ড গ্রেডে। কিন্তু মনে রাখতে হবে আয়োডিয়াম ও একটি অত্যন্ত উল্লেখযোগ্য মেডিসিন এবং এটাও ফার্স্ট গ্রেডে অন্তর্ভুক্ত হবে ।
★অত্যন্ত ভীরু------- অন্ধকারের খুব ভয় পায়--- ক্যালকেরিয়া কার্ব, লাইকোপডিয়াম, ফসফরাস , পালসেটিলা, স্ট্রামোনিয়াম ।

পর্ব--------- 21
আজ রাতের চেম্বার শেষ।
মদন--- স্যার, যাওয়ার আগে এ্যাকিউট ডিজিজ চিকিৎসার জন্য কিছু টিপস দিন।
কি টিপস দেব মদন ,
আজ তাহলে কাশির উপরে কয়েকটা ঔষধ সম্মন্ধে বলি,
বিষয়----- কাশি
★ কাশি, মোটেই থামছে না, ধমকের পর ধমক চলতেই থাকে ----- কুপ্রাম মেটালিকাম ২০০, ২ ডোজ - ৬ ঘন্টা অন্তর
★ কাশি, ধমকের পর ধমক চলতে চলতে মাঝখানে সামান্য সময়ের জন্য বিরতি বা গ্যাপের পরে আবার ধমকের পর ধমক, বিশেষ করে মাঝ রাত্রির পরে কাশির বৃদ্ধি --- ড্রসেরা ৩০ , ১ ডোজ।
★ কাশির ধমক একচোট চলার পরে সামান্য সময় গ্যাপ দিয়ে --আবার ধমক, সামান্য সময় গ্যাপ দিয়ে আবার ধমক, --- এরকম যদি তিনবার ধরে চলতে থাকে ( in three paroxysms) ----কুপ্রাম মেট
★--------যদি ঐ রকম দুই বার ধরে চলতে থাকে ( in two paroxysms) ----- মার্ক সল, ফসফরাস,
★ কাশি-- খালি গায়ে বাড়ে, জামা কাপড়, চাদর বা বেডসিট গায়ে দিলে কমে ---- হিপার, রাস টকস, রিউমেক্স,
★ সব রকম বাদ্যযন্ত্রের শব্দে কাশি বাড়ে ---- এ্যাম্ব্রাগ্রিসিয়া,
★ বাচ্চাদের কৃমিজনিত কাশি --- ইন্ডিগো,
★ সকালে ঘুম থেকে উঠার পরেই অনবরত কাশি, মুখ থেকে সুতার মতন লম্বা হয়ে সর্দি উঠে, আর তখনই একটু কমে, যতক্ষন না সুতার মতন কফ বা সর্দি না বেরুবে, কাশি চলতেই থাকবে ---- কক্কাস ক্যাকটাই,
★ কাশি-- শুলে বাড়ে --- কোনিয়াম, হায়োসিয়ামাস, পালস,
★ কাশি শুলে কমে---- ক্যালি বাই, ম্যাঙ্গেনাম এ্যাসেটিকাম, সোরিনাম,
★ কাশির শব্দ সেইরকম, গরু বা মহিষের শিং দিয়ে তৈরী শিঙা বা ফিঙে বাজালে যেমন শব্দ হয় ---- ভার্বাসকাম,
★ কাশি শুষ্ক ----এত শুষ্ক যে স্টেথো দিয়ে শব্দ শুনলে মনে হয়--- করাত দিয়ে কেউ কাঠ কাটছে। ----- সাঁই সাঁই করে শব্দ হয় ---- স্পঞ্জিয়া,
★ কাশির ধমকে প্রস্রাব বেরিয়ে যায়, তা সে বাচ্চা, বড় সবার ক্ষেত্রেই --- কষ্টিকাম, নেট্রাম মিউর, ফসফরাস, পালসেটিলা, স্কুইলা,
★ কাশি কুকুরের ডাকের মতন বিশ্রী, কর্কশ---- বেলেডোনা, ড্রসেরা,
★ যত কাশি হয়, বাচ্চারা তত কাঁদে----- আর্ণিকা,
★ কাশি ঘুমের মধ্যে বেশী হয় ----ক্যামোমিলা,
★ কাশি হামের পর থেকে চলতে থাকে --- ড্রসেরা, পালসেটিলা, মর্বিলিনাম, স্টিকটা,
★ কাশি মদ্যপানে বাড়ে ---- জিঙ্কাম মেট,

পর্ব------ 22
মদন ----- স্যার, পেট বা পাকস্থলী লক্ষণ সম্বন্ধে কিছু বলুন,
রবার্ট---- বলছি, মনে রাখিস,
★পাকস্থলীতে যেন একটা শক্ত পাথর চাপা দেওয়া আছে, এইরকম অনুভূতি আছে----
এবিস নায়গ্রা, ব্রায়োনিয়া, ক্যালি বাই, ক্রিয়োজোট, নাক্স মশ্চেটা, নাক্স ভম, পালসেটিলায় ।
---- পেটে পাথর চাপা দেওয়া অনুভূতিটি খাওয়ার অব্যবহিত পরেই--- এবিস নাইগ্রা, ক্যালি বাই , নাক্স মশ্চেটা,
----- খাওয়ার এক বা দুই ঘন্টা পরে---- নাক্স ভম ,
----- খাওয়ার তিন ঘন্টা পরে ---- ক্রিয়োজোট,
---- পাথরের মতন অনুভূতিটা ঢেকুর উঠলে একটু কমে---- পালস,
★ প্রত্যহ সকালে প্রাতঃরাশের পরে বমি বমি ভাব---- সিপিয়া ,
★ প্রত্যহ সকালে প্রাতঃরাশের পর পায়খানার বেগ, পাতলা পায়খানা হয়--- থুজা,
★ যতই খাওয়া দাওয়া হোক না কেন পেটটা সব সময় খালি খালি ভাব লাগে-----হাইড্রাসটিস , ইগ্নেশিয়া, ফস, সালফার, টিউবারকিউলিনাম,
★ প্রায়ই ভীষণ জোরে জোরে জোরে শব্দ করে ঢেকুর ওঠে, বিশেষ করে দুবেলা খাওয়ার পরে বাড়ে --- আর্জেন্টাম নাইট্রিকাম,
★ পেট ও পাকস্থলী সংক্রান্ত নানারকম অমূলক হিস্টিরিকাল চিন্তা ----ইগ্নেশিয়া ,
★ রাগের পরে পেটব্যথা--- কলো, ক্যামো,
★পেটব্যথা আস্তে আস্তে আসে, আস্তে আস্তে যায় ---স্টানাম,
----- আজ এইটৃুই থাক, মদন,
খুব টায়ার্ড লাগছে।

পর্ব ---------২৩
মদন ডাঃ রবার্টের কাছে প্রায় বছর খানেক অাছে। শিখেছেও অনেক কিছু। যা শিখেছে তার উপর ভিত্তি করেই ও দেশে চলে যেতে চাইছে। এমনিতেই যাবে যাবে ভাবছিলো, তা এখন যখন কিছু হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসকরা তাকে রাখার জন্য ডাঃ রবার্টকে তীব্র সমালোচনা করছে, তাতে তার আর এক মুহূর্ত ও থাকার ইচ্ছা নেই। চোখের জলে বিদায় নিলো মদন। ডাঃ রবার্টেরও মনটা বড় ভারাক্রান্ত হলো। পিছন থেকে একবার ডাকলো, মদন---,
দূর থেকে টপ টপ করে চোখের জল ফেলতে ফেলতে মদন হাত তুলে বললো----
ডাকেন না আমায় গুরু
চলে যাওয়ার বেলা,
মায়ের দেওয়া নাম কাল হল মোর,
নতুন লোক আসবে তোমার মেলা।
একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে রবার্ট মনে মনে বললো, মানুষ মানুষের গুণটা বিচার করে না, জন্মের দূর্ভাগ্য, নামের দূর্ভাগ্য, দেশের দূর্ভাগ্য, এগুলিই বড় করে দেখে?
এই সব ছোট খাটো জিনিসগুলি কিছু মানুষের কাছে বড় ব্যাপার ? আসল জিনিসকে ছাপিয়ে যায় এইসব নকল জিনিস?
এই জন্যই বোধ হয় আলেকজান্ডার তার সেনাপতিকে বলেছিলেন---
--সত্য সেলুকস, কি বিচিত্র এই দেশ, কি বিচিত্র এই দেশের সব মানুষ!
অনেক জুনিয়র ডাক্তারই ডাঃ রবার্টের কাছে মদনের মতন ফুল টাইম থাকতে চাইছে। কিন্তুু কাকে রাখবে ডাঃ রবার্ট ? অনেক ভেবে চিন্তে এ্যালবার্ট নামে তারই গোষ্ঠীর একজন জুনিয়র হোমিওপ্যাথকে সর্বক্ষনের জন্য নিজের কাছে রাখলেন ডাঃ রবার্ট। নিজের গোষ্ঠী মানে এ্যাংলো ইন্ডিয়ান। তবু ভালো। হিন্দু, মুসলমানদের মতন নামের কচকচানির ঝামেলা ত নেই। এদের কাছে মদন মানে নাকি খারাপ, আবুল মানেও না কি খারাপ।
যাক, অনেকে যখন মদন নামের এ্যাসিস্টান্ট চাইছিলো না, রবার্ট তা মেনে নিলেন। কেন মেনে নিলেন? কারন রবার্ট তার গুরু হ্যানিমানের অর্গাননের দ্বিতীয় সংস্করনের ভূমিকায় পড়েছেন, " Physicians are my breathern, I have nothing to say against them personally " ----- সবাইকেই ভালবাসা যাক।
আজকের রাতের চেম্বার শেষ হয়েছে। রবার্ট ও এ্যালবার্টের ডিনার ও শেষ। শ্রাবন মাস, ঝিরিঝিরি বৃষ্টি পড়ছে। মৃদুমন্দ বাতাস বইছে। অাকাশে পূর্ণিমার চাঁদ। একটা শীতল আবহাওয়া। চারিদিকে রাতের নিস্তব্দতা ভেঙে মাঝেমধ্যে দু-চারটি গাড়ী হনহন করে বেরিয়ে যাচ্ছে। যথারীতি জানালার পাশে ইজি চেয়ারটায় বসেছেন রবার্ট।
আজ তার প্রয়াতা স্ত্রী ইভা ব্রাউনের কথা বারবার মনে পড়ছে। তাহলে ইভাও কি তাহলে তাকে খুব ভাল বেসেছিল? একবার পূর্ণিমা রাতে দুজনে তাজমহল দেখতে গিয়েছিলো। যমুনার পারে দাঁড়িয়ে দুজনে অবাক বিস্ময়ে প্রাণভরে উপভোগ করেছিল তাজমহলের সৌন্দর্য। তাজমহল যে অাসলে সম্রাট সাজাহানের প্রিয়তমে পত্নী মমতাজের সমাধি বা কবরের উপরে তৈরী করা একটা স্মৃতি সৌধ তা অনেকে জানে না। সম্রাট সাজাহান মমতাজকে তাজ বলেই ডাকতেন। তাই তাজের সমাধির উপরে সৌধ বা মহল বানিয়ে তিনি নাম দিয়েছিলেন- তাজ-মহল।
তাই ত বিশ্বকবি লিখেছেন,
" তাজমহলের পাথর দেখেছো, দেখেছো কি তার প্রাণ,
অন্তরে তার মমতাজ নারী,
বাহিরেতে সাজাহান "।
কিন্তুু শোনা যায় সাজাহানের পুত্র ঔরংজীব পিতার এই বিলাসিতা ও জাঁকজমকপূর্ণ জীবন পছন্দ করেন নি। তিনি না কি ছিলেন খাঁটি ইসলাম ধর্মে অনুপ্রাণিত৷ । এসব জাঁকজমকপূর্ণ জীবন না কি ইসলাম ধর্মের পরিপন্থী। তাই বাধ্য হয়ে তিনি পিতাকে বন্দী করেন, তার বিলাস বৈভব্যকে ঠেকানোর জন্য। আর ইতিহাস থেকে জানা যায়--- জাঁকজমক ত দূরের কথা--- রাজকোষ থেকে নিজের হাতখরচ পর্যন্ত না নিয়ে ঔরংজীব না কি রাজকার্যের অবসরে টুপি সেলাই করে তা বিক্রী করে সেই টাকায় নিজের হাত খরচ চালাতেন । তবে ইতিহাসবিদরা বলেন, ঔরংজীব বড় ধর্মান্ধ ছিলেন, মোঘল সাম্রাজ্যেরর পতনের যেটা একটি অন্যতম কারন ছিলো।
যাক সে সব কথা, সেবার রবার্টের হাতে হাত রেখে ইভা গেয়েছিল কবিগুরুর সেই গানটি--
সেদিন দুজনে দুলেছিনু বনে ফুলডোরো বাঁধা ঝুলনা,
সেই স্মৃতিটুকু কভু ক্ষনে ক্ষনে,
যেন জাগে মনে, ভুলো না ।
---- যেতে যেতে পথে পূর্ণিমা রাতে,
চাঁদ উঠেছিল গগনে,
দেখা হয়েছিল তোমাতে অামাতে,
কি জানি, কি মহা লগনে।
সম্বিত ফিরলো ডাঃ রবার্টের। এ্যালবার্টের ডাকে।
----- স্যার রেপার্টরীর উপরে প্রথম থেকে কিছু বলা অারমভ করবেন বলেছিলেন,
----- শোন এ্যালবার্ট, তাহলে আমি স্টেপ বাই স্টেপ বলি ---
আজ বলছি রেপার্টরী তৈরীতে হ্যানিমানের ভূমিকা ----
রেপার্টরী বা হোমিওপ্যাথিক সিমপটমস ডিকসনারী তৈরীর প্রয়োজনীয়তা হ্যানিমান বুঝেছিলেন। তাই তিনি সর্বপ্রথম ১৮০৫ সালে " ফ্রাগমেন্টা ডি ভিরিবাস মেডিকামেন্টারাম পজিটিভিস", নামে ২৭ টি ঔষধ নিয়ে যে মেটিরিয়া মেডিকা বই পাবলিশ করেছিলেন, তার শেষে " ইনডেক্সিং", চ্যাপটার দিয়ে রেপার্টরীর সূচীপত্তন করেন।
এরপর ১৮১৭ সালে তিনি আলাদা করে একটা ছোট রেপার্টরী বই পাবলিশ করেছিলেন।
১৮১৮ থেকে ১৮৩০ সাল পর্যন্ত তিনি হাতে লেখা সিটে রেপার্টরী বাড়াতে থাকলেন, যা শেষ পর্যন্ত ৪,২৩৯ টি পাতায় দাঁড়িয়েছিল ।
১৮৩০ সালে তিনি বইটি পাবলিশ করতে চেয়েছিলেন, কিন্তু তার নিজস্ব পাবলিশার " মেসার্স আরনলড এ্যান্ড ড্রেসড্রোন কোং ", কিছু অার্থিক অসুবিধার জন্য বইটি সেই সময় ছাপতে পারে নি।
দূর্ভাগ্যবশতঃ হ্যানিমানের নিজের লেখা ঐ ৪,২৩৯ পাতার রেপার্টরী বই আর কোনদিন ছাপা হয় নি। সেই পৃষ্ঠাগুলি এখন জার্মানীর বার্লিনে হেলস মিউজিয়ামে যেখানে হ্যানিমানের অন্যান্য ব্যবহৃত জিনিসপত্র দেখানোর জন্য রাখা অাছে সেইখানে আছে।
ঐ বছরেই, অর্থাৎ ১৮৩০ সালেই হ্যানিমান তার প্রিয় ছাত্র রাকার্টকে তার রেপার্টরীটি সাজিয়ে বড় করার দায়িত্ব দেন, কিন্তুু রাকার্ট সেই কাজ গুছিয়ে করতে পারে নি।
তখন হ্যানিমান পুনরায় ঐ কাজটি এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য তার আরও দুইজন প্রিয় ছাত্র গ্রস ও ঝারকে দায়িত্ব দেন। তারা অত্যন্ত ঢিলেতালে কাজটি করে, এবং ১৮৩৫ সালে তা শেষ করে পাবলিশ করেছিল।
এদিকে ১৮২৮ সালে ৪২ বছর বয়সে হোমিওপ্যাথিতে এসে বোনিংহোসেন একটি রেপার্টরী বা সিমপটম ডিকসনারীর গুরুত্ব বুঝে হ্যানিমানকে অতি তাড়াতাড়ি রেপার্টরী বের করার যে দরকার তা বুঝিয়ে তাড়া দিতে থাকলেন । হ্যানিম্যান তাকে প্রত্যেকবার জানাতে থাকে যে, --- গ্রস এবং ঝার ঐ ব্যাপারে কাজ করছে, তুমি অপেক্ষা করো।
কিন্তুু বোনিংহোসেন কি ঐ সব ঢিলেতালে চলা অথর্ব লোকদের জন্য বসে থাকার মানুষ ছিলেন?
গতি, ডাইনামিসিটি, ইত্যাদি ছিল তার রক্তে। He was a man of law and logic
তিনি হ্যানিমান , গ্রস, রাকার্ট, ঝার, কারুর উপরে আর ভরসা না করে নিজেই হাত লাগালেন রেপার্টরী তৈরী করতে।
এ্যালবার্ট---- তারপর, বোনিংহোসেন কি পারলেন? কি করলেন উনি স্যার?
রবার্ট--- বোনিংহোসেনের পুরো নাম জানো এ্যালবার্ট?
----ক্লিমেন্স মেরিয়া ভন ব্যারন বনিং হসেন। তাহলে জেনে রাখো, যেমন বড় তার নাম, তেমনই বড় হবে তার হোমিওপ্যাথির উপরে কার্যকলাপ।
পরের দিন বলবো তোমাকে রেপার্টরীতে বনিংহসেনের contribution বা কাজকরম।

পর্ব------২৪
আজ রবিবার। বিকালে চেম্বার বন্ধ। একঘেঁয়েমী রোগী দেখার জীবন থেকে মুক্তি পেতে ডাঃ রবার্ট তার নূতন এ্যাসিস্টান্ট এ্যালবার্টকে সাথে নিয়ে শিয়ালদহ স্টেশনে এসেছে। এখানে দু-দন্ড বসলে কত মানুষের আনাগোনা, বিচিত্র ভাবভঙ্গী, ভিন্ন ভিন্ন স্টাইলে হাঁটা চলা, দৌড়ানো, বসে থাকা, মানুষের নানান বিচিত্র রূপ দেখা যায়। কারুর তাড়া নেই-- ধীর স্থির পদচারনা, কারুর তাড়া আছে--উর্দ্ধশ্বাসে দৌড়ানোর মতন হাঁটছে, যুবক যুবতীদের কারুর মনের মাুষটি আসবে তাই ভাব লেশহীন ভাবে অধীর আগ্রহে বসে অাছে। সময় কেটে যায়, বেশ লাগে দেখতে, সমাজ জীবনের বহু নাগরিককে একই ছাতার তলায় উপভোগ করতে।
কিছুক্ষন বসে থেকে এ্যালবার্ট জিজ্ঞাসা করলো, স্যার অনেকের নখ যে পচে যায়, ভেঙ্গে যায়, এর কারন কি?
রবার্ট---- প্রাকটিস অব মেডিসিনের বইয়ে এর কারন ফাংগাল ইনফেকসন, সে ত ঠিকই, কিন্তু আমাদের হোমিওপ্যাথি মতে বলবো সাইকোটিক ম্যানিফেসটেসন। সুতরাং তোমাকে এ্যান্টি-সাইকোটিক ট্রিটমেন্ট দিতে হবে, মানে একটি এ্যান্টিসাইকোটিক ঔষধ সিলেকসন করতে হবে।
অবশ্যই সিমপটমস মিলিয়ে দিতে হবে।
কযেকটি উল্লেখযোগ্য ঔষধ মনে রাখতে পারো--
* নেট্রাম সালফ---- নখগুলি বিশেষ করে বর্ষাকালে পচে যায়, বা ভেঙ্গে যায়, যদি ব্যথা-জ্বালা কিছু থাকে তবে রোগীকে ঠান্ডা এবং গরম জলের সেঁক দিয়ে দেখতে বলবে কোন সেঁকে কমছে, ঠান্ডা সেঁকে কমলে নেট্রাম সালফ হবে।
নেট্রাম সালফের সব কিছুই ঠান্ডা সেঁকে কমে। দাঁতের যন্ত্রনাও ঠান্ডা সেঁকে কমে।
নেট্রাম সালফ কথা যখন উঠলো জেনে রাখো-- এই ঔষধের সবকিছু বর্ষাকালে বৃদ্ধি পায় --- সব রকম চর্মরোগ, আমবাত, শ্বাসকষ্ট বা হাঁপানি, বাতের ব্যথা, ইত্যাদি।
এ্যালবার্ট---- স্যার নেট্রাম সালফের এই ঠান্ডাতে রোগলক্ষনের আরাম বা কম হয়---- এই সিমপটম টি বাদে আরও ২/৪ টি উল্লেখযোগ্য সিমপটমস দয়া করে বলুন, যা দিয়ে ঔষধটিকে হৃদয়াঙ্গম করতে পারি।
ডাঃ রবার্ট---- তোমরা ত মদনের মতন মাধ্যমিক পাশ করা কম্পাউন্ডার নয়, রীতিমত বি এইচ এম এস ডাক্তার। তাও তোমাদেরকে এই সব উল্লেখযোগ্য ঔষধের সিমপটমস বলতে হবে?
এ্যালবার্ট---- আসলে স্যার আমি একজন সিনিয়রের কাছে বেশ কিছুদিন ছিলাম, সে শুধু নেট্রাম মিউর ছাড়া কিছু জানত না। নেট্রাম মিউরের সিমপটমস দিয়ে বিজ্ঞাপনও দিতো। তাই নেট্রাম মিউর ছাড়া অন্য ঔষধ মাথায় ঠিকমতন ঢোকে নি।
রবার্ট---- তা বেশ, তা বেশ ,
তবে সে বাবুর ভন্ডামী কিন্তুু হয়েছে শেষ।
তবে শোনো,
★ নেট্রাম সালফ বাবু damp, বা moist, বা, স্যাঁতসেঁতে, বা ভিজে ব্যাপারটা মোটেই সহ্য করতে পারে না। যেমন---ভিজে ভিজে আবহাওয়া, ভিজে বা ঠান্ডা বাসস্থান বা থাকার জায়গা, বা কর্মক্ষেত্র, ভিজে জায়গা মানে কিন্তু আজ-কালকার সকল এ সি রুম ধরতে হবে। কোন মেটিরিয়া মেডিকায় এ সি রুমের কথা লেখা নেই, কারন সেই সময় ত এ সি মেশিন আবিষ্কার হয় নি। তাছাড়া জলীয় তরকারী, জলীয় ফল, যেমন---- কলমী শাক, হেলেনচা শাক, জলে জন্মনো কচু বা কচুর ডাঁটা, শাঁফলা ফুলের ডাঁটা, পানি ফল, ইত্যাদি।
---- রোগী ত বুঝবে না, তাই তোমাকে ক্যাটিগরিক্যালি তাকে জিজ্ঞাসা করে বুঝতে হবে --- ঐ সব জলে উৎপন্ন তরকারী বা ফল খেলে তার কোন অসুবিধা হয় কি না, বা তার রোগ লক্ষন বাড়ে কি না।
---- তবে সাবধান এ্যালবার্ট, হোমিওপ্যাথিক জগতে কিন্তু বড্ড বেশী থিওরিটিক্যাল পন্ডিতদের ভীঁড়। তুমি ঐ রকম খাদ্যদ্রব্যের নাম ধরে জিজ্ঞাসা করছো জানতে পারলেই হাউ মাউ খাঁউ,
বলবে-----
হায় হায় লিডিং কোয়েশচেন?
গেল গেল, গেল সব
দেখ কি বৈভব,
বুকে আমার লাগলো বান,
দেখ প্রভু হ্যানিম্যান।
এ্যালবার্ট---ঠিকই বলেছেন স্যার, তাদের জ্ঞাণগর্ভ লেকচার শুনে--
মাঝেমধ্যে তাদের চেম্বারে যাই,
কিন্তু দেখতে কি পাই---
রবার্ট-- আজ ত আর সময় নাই,
চলো এ্যালবার্ট যাই,
এলো সোনারপুর লোকাল,
পরে দেবো আবার ভোকাল।
সোনারপুর লোকাল ছেড়ে দিলো।

পর্ব-------২৫
অ্যালবার্ট ----স্যার, বোনিংহোসেন সম্মন্ধে কিছু বলবেন বলেছিলেন ,
----হ্যাঁ, এ্যালবার্ট ---বিচিত্র জীবন এই মানুষটার।
পূর্ব পুরুষরা সবাই বংশানুক্রমিক খ্রীষ্ট-ধর্মীয় যাজক, পাদ্রী, এসব হতেন, কিন্তুু তিনি বাড়ীর সবার অনুরোধেও গেলেন না সেদিকে। গিয়েছিলেন একের পর এক অন্য সব পেশায়।
পর পর হতে থাকলেন--- আইনজ্ঞ, বিচারক, কৃষি-বিজ্ঞানী, এবং সব শেষে হোমিওপ্যাথির মধ্যে নতুন কিছু সৃষ্টি করা দিকপাল এক হোমিওপ্যাথ।
সবদিকেই সমান পাণ্ডিত্য অর্জন করেছিলেন ।
জন্মেছিলেন ১৭৮৭ সালে নেদারল্যান্ডে, এখন যাকে হল্যান্ড বলা হয়। এখানকার অধিবাসীদের ডাচ বলা হয়।
(১৭৮৭ - ১৭৫৫) , তার মানে, বয়সে হ্যানিমানের থেকে ২২ বছরের ছোট ছিলেন।
১৮০৬ সালে ১৯ বছর বয়সে---হয়েছিলেন সুপ্রীম কোর্টের উকিল,
ভালবাসতে আরম্ভ করলেন গাছপালা, মানে উদ্ভিদ জগত, ১৮১০ সালে , ২৩ বছর বয়সে তৈরী করলেন বোটানিকাল সোসাইটি,
১৮১৬ সালে ২৯ বছর বয়সে একটি প্রভিন্সিয়াল কোর্টের জজ বা বিচারক হলেন,
ছেড়ে দিলেন ঐ চাকরী, ১৮২২ সালে, ৩৫ বছর বয়সে আবার ভূমি ও রাজস্ব বিভাগের কমিশনার হলেন,
১৮২৪ সালে, ৩৭ বছর বয়সে বোটানিকাল সোসাইটির ডাইরেক্টর ,
১৮২৮ সালে, ৪১ বছর বয়সে যক্ষা বা টি.বি. রোগে আক্রান্ত হলেন,
এ্যালোপ্যাথিতে তখন আবিষ্কার হয়নি স্ট্রেপটোমাইসিন --- অর্থাৎ টিবির ঔষধ,
বোনিংহোসেন মৃত্যুশয্যায়, বাঁচার আশা শেষ,
নিজের দেশে প্রবল বাধা বিপত্তির মধ্যে পড়লেও আস্তে আস্তে হোমিওপ্যাথি জার্মানীর ভৌগলিক সীমা ছাড়িয়ে ক্রমশঃ পাশের রাজ্যগুলিতে প্রবেশ করছে,
আর সেইভাবেই ঢুকে পড়েছে পাশের রাজ্য নেদারল্যান্ডে। কয়েকজন চিকিৎসক হোমিও চিকিৎসা আরম্ভ করছেন। তারমধ্যেই একজন হলেন ডাঃ উইহে।
রোগীর কথা জানালো হলো ডাঃ উইহে কে। তিনি তখনও রোগী দেখেন নি, দূর থেকে শুধু সিমপটমস শুনে পাঠালেন কয়েক ডোজ পালসেটিলা ৬,
বনিংহোসেন অনেকটা ভালর দিকে, চিকিৎসা চলতে থাকলো। ৬ মাস চিকিৎসা চলার পরে তিনি সুস্থ হলেন।
বাচচা যেমন খেলনা ভেঙে দেখতে চায়, ভিতরে কি অাছে ----আইন বিশেষজ্ঞ, উদ্ভিদ বিজ্ঞানী, ভূমি রাজস্ব বিভাগের কমিশনার এবারে জানার ইচ্ছা প্রকাশ করলেন, হোমিওপ্যাথিক ঔষধ -- ব্যাপারটা কি? জানতে হবে, বুঝতে হবে।
ঢুকে পড়লেন এক নতুন জগতে। অনেক রাত্রি জাগলেন, অনেক মোমবাতি পোড়ালেন, একের পর এক পড়তে থাকলেন ---- হ্যানিমানের মেটিরিয়া মেডিকা পিউরা, অর্গানন অব মেডিসিন, এবং সবে পাবলিশ হওয়া ক্রনিক ডিজিজ বই ।
মন ভরে গেল। আর কোন কিছু নয়, এ ত চিকিৎসা বিজ্ঞানের এক নতুন জগৎ। এখন থেকে শুধু হোমিওপ্যাথির বই পড়া, চিকিৎসা করা, হোমিওপ্যাথির উপরে লেখালেখি করা, --- এক কথায় পাগলা লোকটার হোমিওপ্যাথিতে নিমজ্জিত হওয়া।
১৮৩০ সাল, এ বছরই হ্যানিমানের জীবন থেকে বিদায় নিয়েছে তার দুঃখের দিনের সহধর্মিনী হেনরিয়েটা।
এই ১৮৩০ সালেই দেখা হল হ্যানিমানের সাথে। পরে চিঠিতে নিয়মিত যোগাযোগ হতে থাকলো দুজনের।
দূরদৃষ্টি সম্পন্ন বোনিংহোসেন বুঝলেন এত অজস্র সিমপটমস কেউ মনে রাখতে পারবে না, তাই সিমপটমস রেজিস্ট্রার, বা সিমপটমস ডিকসনারী, (ল্যাটিন ভাষায় যার নাম রেপার্টরী), তা অবিলম্বে বানাতে হবে,
হ্যানিমান তখন এই কাজ করার দায়িত্ব ইতিমধ্যে দিয়েছেন তার দুইজন ছাত্র -- গ্রস এবং জারকে। বোনিংহোসেনকে তাদের সাথে যোগাযোগ করতে বললেন।
কিন্তুু, তাদের অাজ হচ্ছে , কাল হচ্ছে, এই হচ্ছে, এসব কথায় এত মেধাবী, গতিশীল মানুষ ভরসা করবেন কেন? বোনিংহোসেন কালবিলম্ব দেরী না করে নিজেই ঐ কাজে হাত লাগালেন,
তারপর----শুধু ইতিহাস,
১৮৩২ সালে পাবলিশ করলেন হোমিও জগতের প্রথম রেপার্টরী ----" রেপার্টরী অব দ্য এ্যান্টি সোরিকস ",
বইয়ের ভূমিকা হ্যানিমান নিজেই লিখে দিয়েছিলেন,
হয়ে উঠলেন--- ফাদার অব দি হোমিওপ্যাথিক রেপার্টরী,
১৮৩৪ সালে বের করলেন তার দ্বিতীয় রেপার্টরী বই ,---" রেপার্টরী অব দ্য নন এ্যান্টিসোরিকস ",
১৮৩৫ সালে বের করলেন তার তৃতীয় রেপার্টরী বই, --- " রিলেটিভ কিনসিপ অব হোমিওপ্যাথিক মেডিসিনস ",
হ্যানিমানের মায়াজম থিওরীতে যে বোনিংহোসেনের কতটা বিশ্বাস ও আস্থা ছিলো, তা তার রেপার্টরী বইগুলির নামকরনের মধ্যেই বোঝা যায়।
বোনিংহোসেনের চিকিৎসা শাস্ত্রে কোন ডিগ্রী ছিল না, মেডিকেল ডিগ্রী ছাড়া প্রাকটিস বেআইনি। কিন্তু ইতিমধ্যে তার নাম, যশ, চারিদিকে এত ছড়িয়ে পড়েছে যে নেদারল্যান্ডের রাজা ফ্রেডরিখ স্পেশাল কেবিনেট অর্ডার বের করে তাকে রোগী চিকিৎসার অনুমতি দিলেন, ( ১৮৪৩, ১১ই জুলাই),
১৮৪৬ সালে তিনটি রেপার্টরী একসাথে যোগ করে + ভিতরে ফিলজফিকাল পরিবর্তন করে একটি কমবাইন্ড বই পাবলিশ করলেন, নাম দিলেন---" থেরাপিউটিক পকেট বুক ",
১৮৪৮, নিজে উদ্যোগী হয়ে তৈরী করান দেশের প্রথম হোমিওপ্যাথিক সোসাইটি,
১৮৫৪, দেশে তৈরী হওয়া প্রথম হোমিওপ্যাথিক মেডিকেল কলেজ তাকে দিল সাম্মানিক হোমিওপ্যাথিক ডিপ্লোমা,
১৮৬১, ফ্রানসের সম্রাট দিলেন সাম্মানিক --" নাইট অব লিয়ন " উপাধি,
কিন্তুু,
একজন ভাল মানুষের এত ভাল কাজ ---
হিংসা হবে না ভিলেন টার?
মৃত্যু নামক ভিলেন টার,
হঠাৎ করে বন্ধ করে দিল তার হৃদস্পন্দন ,
কেড়ে নিল তাকে,
১৮৬৬ সালের ২৬ শে জানুয়ারী, মাত্র ৭৯ বছর বয়সে,
------কিন্তুু মহৎ মানুষকে কেড়ে নিলেও তার মহত্তকে কোনদিনও কেড়ে নেওয়া যায না। মহত্ততা যুগ যুগ ধরে প্রজ্জ্বল্যমান থাকে প্রবাহিত মানবজাতির মধ্যে।
বোনিংহোসেন আজও বেঁচে আছে আমাদের মধ্যে। বেঁচে থাকবেন অনন্ত কাল, যতদিন হোমিওপ্যাথি থাকবে।
ক্যারল ডানহাম তাই বলেছেন---
" No one man except Hahnemann, has left so deep impression upon the literature of Homoeopathy, as Boenninghausen ".
এ্যালবার্ট---স্যার, আমি অভিভূত হলাম ওনার জীবনী শুনে,
রবার্ট---- আরও বাকী আছে তার কথা,
পরের দিন বলবো।

পর্ব -------২৬
অ্যালবার্ট ----- স্যার বাংলাদেশের চারিদিকে এখন ডেঙ্গুর উপদ্রব চলছে, ডেঙ্গুর মশারা এখন ইন্ডিয়া ছেড়ে বাংলাদেশে পাড়ি দিয়েছে। আমাদের অনেক বন্ধুরা তাই ডেঙ্গু চিকিৎসা করার দৈনন্দিন ঔষধ, বা প্রতিষেধক বা ঔষধ জানতে চাইছে।
অনেকে আবার আঁচিল, বা অন্য রোগের ঔষধ সম্মন্ধেও জানতে চায়।
এসব ব্যাপারে আপনি কিছু বলবেন?
রবার্ট --- দেখো এ্যালবার্ট এসবের উত্তর সেই চিরাচরিত একটাই লাইন ---
Treat the patient, not the disease, ---অর্থাৎ রোগের নয়, রোগীর চিকিৎসা করো।
হোমিওপ্যাথির এই ফর্মুলা বা নীতির বাইরে গেলে কোন লাভ হয় না, কোন সাকসেস আসে না। মুস্কিল হচ্ছে, আমরা বহু হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসকরা হলাম জ্ঞাণ পাপী, মানে পড়ি সব, শুনি সব, কিনতু বুঝতে চাই না, মন মানে না।
এমন কি কলেজে ম্যানেজ করে ঢুকে লেকচারার সেজেও ছাত্রদেরকে তোতাপাখীর মতন বলছি হোমিওপ্যাথিক নীতির কথা, কিনতু যেই না চেম্বার নামক চোখ ধাঁধানো সাজানো গোলকযন্ত্রে ঢুকছি, তখনই --- ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হচ্ছি। তখন অনেক ব্রাহ্মন মশাইদের পৈতাটি বাড়ীতে খুলে রাখার মতন অর্গানন বই আর বিকাল বেলা কলেজে দেওয়া টাটকা লেকচার সরিয়ে থেরাপিউটিকসে ঢুকে পড়ছি।
রেপার্টরী থেকে আঁচিলের ঔষধ খুঁজি, ডেঙ্গুর ঔষধ খুঁজি, রোগী লিভার খারাপ বললে চেলিডোনিয়ামের বোতলটা খুঁজি।
এ্যালবার্ট---- তাহলে কি স্যার, আপনি কখনও এই সব নসোলজিক্যাল টার্ম রেপার্টরীতে কখনও দেখেন না? বা নসোলজিকাল কোন চ্যাপটার কোন থেরাপিউটিকস বইয়ে দেখেন না? বা ভাবেন না?
রবার্ট---- নিশ্চয় দেখি, নিশ্চয় ভাবি। তোমরাও দেখবে এবং ভাববে। তবে রোগের নাম ধরা ঐ সব ঔষধগুলি দেখে রোগীকে ভুললে চলবে না। তাহলে রোগীকে আরোগ্য করা যাবে না।
হাবিবুলের একজিমা হয়েছে, আমি একজিমা চ্যাপটারে কি কি ঔষধ আছে দেখতে পারি, দেখে কোন একটি ঔষধ হাবিবুলের সামগ্রিক লক্ষনাবলীর সাথে মিলছে কি না ভাবতে পারি, ---- কিন্তু দেবই, বা দিতেই হবে, তা ভাবলে চলবে না। হাবিবুলের ঔষধ ঐ বইয়ের একজিমা চ্যাপটারের কোন ঔষধের মধ্য থেকে নাও আসতে পারে। আগেই বলেছি ঐ ৫০ টি ঔষধ অন্যদের ক্লিনিক্যাল অভিজ্ঞতার নিরিখ। আমার নিরিখ আলাদা হতে পারে।
হাবিবুলের চামড়ার রোগ হলেও আমাকে কিন্তু তার চামড়া নিয়ে পড়ে থাকলে হবে না, হাবিবুলের অন্যান্য সামগ্রিক রূপটা দেখতে হবে। তাই শুধু তার চামড়া দেখে চামড়ার ঔষধ সিলেকসন নয় । হাবিবুলের মাথা থেকে পা, আর অন্তর্দৃষ্টি দিয়ে তার মনের অন্দর সবই আমাকে দেখতে হবে।
আর তাই অন্য বন্ধুুরা যখন থেরাপিউটিকস পড়তে বলেন, আমি বলি ফিলজফি পড়তে---- কেন্ট, রবার্টস, স্টুয়ার্ট ক্লোজ, ফিলিস স্পাইট, ইত্যাদি মনীষীদের।
ঠিক একই ভাবে ডেঙ্গু, ম্যালেরিয়া, আঁচিল, সব রোগেই আমাকে রোগীর স্বতন্ত্র সিমপটমসের উপরে ঔষধ সিলেকসন করতে হবে। তার ব্যতিক্রম হলে হবে না। আরোগ্য আসবে না।
আবার বলছি ----
রেপার্টরী বা থেরাপিউটিকসে একটা রোগের বা রোগ অবস্থার যা ঔষধ দেওয়া অাছে, তা ---কিছু ঔষধ প্রুভিং করাকালীন প্রত্যক্ষভাবে পাওয়া, এবং বেশীরভাগ বিভিন্ন সময়ের বিভিন্ন চিকিৎসকদের রোগী দেখার ক্লিনিক্যাল অভিজ্ঞতার ফসলের কালেকসন। তাই আমি নিঃসন্দেহে তা দেখতে পারি, কিন্তু আমার রোগীতে তার একটাও না মিলতে পারে, বা নাও আসতে পারে। আমি ভাবতে পারি, মেলানোর চেষ্টা করতে পারি, কিন্তু গায়ের জোরে তার মধ্য থেকে একটাকে চাপিয়ে দিতে পারি না।
আর তাই দশটা সিমপটমস নিয়ে রেপার্টরী দেখে অঙ্ক করে যোগফলে বেশী থাকার জন্য সেই ঔষধটি বা তার পাশের ঔষধটি যে সিলেকশন করতেই হবে, তা একেবারেই নয়। তা করলে হবে--- মূর্খের স্বর্গে বাস করা।
আর তা যদি হতো, মানে ঐ ভাবে ঔষধ সিলেকসনকে যদি পারফেক্ট ওয়ে বলা যেতো, তাহলে হোটেল ব্যবসা করার মতন অনেক বড়লোক চিকিৎসালয় নাম দিয়ে ম্যানেজার হয়ে বসে, পাঁচটা হোমপ্যাথ বা রাডার সফটওয়্যার কিনে পাঁচজন কম্পিউটার চালানো লোককে কর্মচারী হিসাবে রেখে রোগীদের ঔষধ সিলেকশন করিয়ে ব্যবসা চালাতে পারতো।
কিন্তু তা হয় না, ---- রোগীর সিমপটোমেটলজী, মায়াজম, প্রাকটিস অব মেডিসিনের নলেজ, অর্গাননের নলেজ, সব মিলিয়েই তবে একটা রোগীর ঔষধ সিলেকসন করতে হয়।
ডেঙ্গুতেও তাই।
তবে রেপার্টরী, বা থেরাপিউটিকস, বা কারুর অভিজ্ঞতার উপরে পাবলিশ করা বই থেকে আমরা প্রতিটি রোগের বেশ কয়েকটি কার্যকরী ঔষধের নাম জানতে পারি, তাদেরকে নিয়ে ভাবতে পারি, কিন্তু ঐ যে বললাম--- তাকে নেবই, বা তাকে প্রেসক্রিপসন করতেই হবে ---- এমন বাধ্যবাধকতা বা মদিরতা আমার মধ্যে থাকলে হবে না।
ডেঙ্গুর চিকিৎসা----
প্রখমে গত দুই শতাব্দী ধরে দেখা গেছে ডেঙ্গুতে যে সব ঔষধগুলি বেশী কার্যকরী ভূমিকা নিয়েছে --তাদের ২/৪ টির আলোচনা করা যাক ---
★ ইউপেটোরিয়াম পার্ফোলিয়েটাম------
অনেকে রুটিনলি চালায় বা চালাচছে। কিন্তু, যে লক্ষনটি না থাকলে শুধু ডেঙ্গু কেন, কোন রোগেই এই ঔষধটি দেওয়ার কথা ভাবা যায় না--- আর যে লক্ষনটি পেলে ডেঙ্গু, ম্যালেরিয়া, টাইফয়েড , ইনফ্লুয়েঞ্জা, যে কোন রোগেই দেওয়া যায়, সেই এক এবং অনন্য রেড লাইন মার্ক করা লক্ষনটি হল---
***** সারা গা হাত পায়ে অসহ্য ব্যথা,
ব্যথা মাংসপেশীতে নয়, হাড়ের মধ্যে,
যেন সারা শরীরের হাড়গোড় সব ভেঙে গেছে,
যেন কেউ লাঠি দিয়ে পিটিয়ে পিটিয়ে হাড়গোড় সব ভেঙে দিয়েছে।
ব্যথা বিশেষ করে-- চোখের মধ্যে, বাহুতে, রিষ্ট জয়েন্টে, পায়ের কাফ মাসেলে, পিঠে, এবং মাথার পিছনে।
অন্যন্য লক্ষন পেলে ভালো---
* তিতা বমি,
* বাম দিকে চেপে শুতে চায় না, বাম দিকে চেপে শুলে সব কষ্ট বাড়ে,
* বেশীরভাগ দিন জ্বর সকাল ৭ টা থেকে ৮ টার মধ্যে আসে বা বাড়ে,
* শরীরে শীতের ভাব বেশী, অাবৃত থাকতে ভালবাসে,
* প্রচুর জল পিপাসা, বমির পরেই জল পিপাসা বেশী পায়, ইত্যাদি।
★ আর্সেনিক এ্যালবা---
*** অসম্ভব দূর্বলতা,
* ভীত, সন্ত্রস্ত, মৃত্যুভয়,
* মানসিক উদ্বেগ ও অস্থিরতা,
* বারবার জল চায়, কিন্তু খেতে পারে না বেশী,
* পায়খানা, পাতলা, কালো, দূর্গন্ধ,
* শরীরে ভীষণ শীত শীত ভাব , কাপড় চোপড় মুড়ি দিয়ে শুয়ে থাকতে ইচ্ছা,
* শরীরে জ্বালাপোড়া,
* রাত বা দিন, ১২ টা থেকে ২ টার মধ্যেই জ্বর বা অন্য যে কোন কষ্ট বাড়ে,
★ ক্রোটেলাস হরিডাস ---
* দূর্বলতা,
* জন্ডিসের মতন শরীরের চামড়া হলদেটে হয়ে যায়,
* শরীরের যে কোন দ্বার দিয়ে রক্তস্রাব হতে আরম্ভ করে, বিশেষ করে কাল রংয়ের রক্তস্রাব,
* সকল স্রাবে দূর্গন্ধ,
* জিভ--- উজ্জ্বল লাল,
* শরীরের ডানদিক বেশী আক্রান্ত হয়,
* শরীর গরম নয়, ঠান্ডা থাকে,
---- এ্যালবার্ট, শেষ করতে পারছি না, ঘুম পাচ্ছে, আগামীকাল এই চ্যাপটারের উপরে আবার তোমাকে বলবো।

পর্ব -------২৭
এ্যালবার্ট----- স্যার, ডেঙ্গু জ্বরের আরও ২/৪ টা ইম্পরট্যান্ট ঔষধ যদি বলেন----
ডাঃ রবার্ট----
★ জেলসিমিয়াম---
অত্যন্ত দূর্বল ,
বিছানায় নিস্তেজ হয়ে পড়ে থাকে,
চোখ খুলতে চায় না,
ঘুমিয়ে থাকে বা সর্বদা ঘুম ঘুম ভাব,
হাত পা বরফের মত ঠান্ডা, কিন্তুু মাথার তালু গরম থাকে,
হাত, পা, জিভ, বা সারা শরীর কাঁপতে থাকে, বা মৃদু কম্পন অনুভূত হয়,
সব সময় শীত শীত ভাব, তাই আবৃত থাকতে চায়,
জল পিপাসা থাকে না,
তীব্র মাথা ব্যাথা থাকে,
সারা শরীরেও ভীষণ কামড়ানো ব্যথা, (আর্নিকা, ব্যাপ্টিসিয়া, রাসটক্সের মতন, কিন্তুু ইউপেটোরিয়ামের মতন হাড় ভাঙ্গা ব্যথা নয়) ,
★ পাইরোজেন---- ১০৩, ১০৪, ১০৫ ডিগ্রী, সব সময় এমন হাইফিভার চলতে থাকে,
কিন্তু শরীরের উত্তাপের তুলনায় পালস বা নাড়ীর গতি অনেক বেশী থাকে,
জিভ টকটকে লাল ও মসৃণ থাকে, কিম্বা অগ্রভাগ লাল এবং বাকীটা সাদা কোটেড থাকে,
গা হাত পায়ে অসহ্য ব্যথার জন্য বিছানা ভীষণ শক্ত মনে হয়,
জেলসিমিয়ামের মতন চুপচাপ পড়ে থাকতে চায় না, কাছে লোক পেলে কথা বলতে চায়, বকবক করতে চায়,
শরীরের সকল স্রাব অত্যন্ত দুর্গন্ধযুক্ত,
এই সব ঔষধ ছাড়াও ব্রায়োনিয়া , রাস টকস, ব্যাপটিসিয়া, ফসফরাস, চায়না, নাকস, পালস, বেলেডোনা, এপিস, নেট্রাম মিউর, ইত্যাদি ঔষধও লক্ষণ ভিত্তিক অাসতে পারে।
এবারে আসা যাক ডেঙ্গুর প্রতিষেধক ঔষধ কি হতে পারে, কি দিতে হয়, এবং জিনাস এপিডেমিকাস ঔষধ কি হতে পারে ।
এ্যালবার্ট, আলোচনা করব আগামীকাল।

পর্ব------ ২৮
অ্যালবার্ট -- স্যার, কথা হচ্ছিল ডেঙ্গু প্রসঙ্গে। ডেঙ্গুর প্রতিষেধক ঔষধ অনেকে বলছেন ইউপেটোরিয়াম পার্ফোলিয়েটাম। কথাটা কি ঠিক?
ডাঃ রবার্ট---- দেখো এ্যালবার্ট, ডেঙ্গুতে ইউপেটোরিয়াম বলা ছাড়াও অনেক সময় অনেকে হামের প্রতিষেধক ঔষধ হিসাবে মরবিলিনাম, পক্সের জন্য ভেরিওলিনাম, এইসব ঔষধের কথাও বলেন।
এই সমস্ত সংক্রামক ব্যাধির জন্য এ্যালোপ্যাথিতে বা মডার্ন মেডিসিনে যেভাবে যে থিওরিতে বিভিন্ন প্রতিষেধক ঔষধগুলি আবিষ্কার করা হয়েছে সেই ধরনের থিওরির উপর ভিত্তি করে হোমিওপ্যাথিতে কোন প্রতিষেধক ঔষধ নেই, হবেও না।
একটা জিনিস লক্ষ্য করবে এ্যালোপ্যাথিতে যেভাবে প্রতিষেধক ঔষধগুলি বের করা হয়েছে বেশ কিছু ক্ষেত্রে কিন্তুু তা কার্যকর হচ্ছে না, অর্থাৎ প্রতিষেধক নেওয়া বা দেওয়া সত্ত্বেও দুই চারজন সেই রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। তাছাড়া সাইড এফেক্টস ত অাছেই। এখনো হাইপোথিসিস, সঠিক বলে প্রমাণিত নয়, তবুও আমি আমার নিজের অভিজ্ঞতায় মনে করছি কোন একটা ইমুনাইজেসন ভ্যাকসিনের জন্য, মনে হয় M M R ভ্যাকসিনটির জন্যই --অটিজম বাচ্চার সংখ্যা এত বাড়ছে।
অ্যালবার্ট---- আমরা হোমিওপ্যাথরা কি ডেঙ্গু, হাম, ইত্যাদি সংক্রামক রোগের প্রতিষেধক হিসাবে কিছু ঔষধ ব্যবস্থা করতে পারি না?
ডাঃ রবার্ট----হ্যাঁ এ্যালবার্ট, পারি। কিন্তু অন্য ভাবে। আমাদের প্রতিষেধক ঔষধ হবে ইন্ডিভিজুয়াল থিওরির উপরে।
অ্যালবার্ট--- তার মানে কিভাবে স্যার?
ডাঃ রবার্ট---- তার মানে হল যখন যে সংক্রামক ব্যাধি চারিদিকে চলছে, কোন নির্দিষ্ট ব্যক্তির আক্রমণের সম্ভাবনা থাকছে, তখন নির্দিষ্ট একজন ব্যক্তিকে প্রতিষেধক দিতে হলে তার শারীরিক ও মানসিক সিমপটমস অনুযায়ী অর্থাৎ আমাদের সেই একই ফরমুলায় তার টোটালিটি অনুযায়ী একটি সিমিলিমাম ঔষধ নির্বাচন করে সেই ঔষধের শততমিক ৩০ শক্তি বা মিলিসিমাল পোটেনসির ১ বা ২ শক্তি দিনে দুই বা তিন বার টানা খাইয়ে যেতে হবে।
এ্যালবার্ট----কতক্ষণ বা কতদিন খাওয়াতে হবে স্যার?
ডাঃ রবার্ট---- যতদিন না ঐ সংক্রামক রোগটির প্রাথমিক কিছু সিমপটমস মানুষটির মধ্যে দেখা যাবে।
যেমন ধরো--- চারিদিকে হামের প্রাদুর্ভাব দেখা যাচ্ছে। একটি বাচ্চাকে তুমি হামের প্রতিষেধক হোমিওপ্যাথিক ঔষধ দিতে চাও। তোমাকে কি করতে হবে ? কেস টেকিং করে বাচচাটির টোটাল সিম্পটোমেটলজি নিতে হবে। যদি দেখো তার মধ্যে পালসেটিলার সিম্পটমস আছে , তাহলে তোমাকে পালসেটিলা ৩০ দিনে দুই বার বা তিন বার টানা বেশ কয়েকদিন খাইয়ে যেতে হবে। মোটামুটি ৩/৪ দিন পরে দেখা যাবে বাচচাটির শরীরে হামের কিছু সিম্পটমস প্রকাশ পাচ্ছে। যেমন ছোট ছোট ইরাপসনস বের হচ্ছে, জ্বর জ্বর ভাব চলছে, সামান্য চক্ষু প্রদাহ হচ্ছে, ইত্যাদি । তখন ঔষধ খাওয়ানো বন্ধ করে দিতে হবে।
পক্স বা বসন্তের ক্ষেত্রেও তাই। ডেঙ্গুর ক্ষেত্রেও তাই। ডেঙ্গুরও প্রতিষেধক হবে রোগীর টোটাল সিম্পটোমেটলজী নিয়ে। হয়ত কারুর কনসটিটিউশনালি নেট্রাম মিউরের সিমপটমস পাওয়া গেল, তাহলে তাকে নেট্রাম মিউর 30, বা মিলিসিমাল স্কেল পোটেনসিতে ১ শক্তি দিনে দুইবার বা তিনবার টানা খাইয়ে যেতে হবে---- যতক্ষণ না পর্যন্ত তার একটু জ্বর জ্বর ভাব, গা হাত পা ব্যথা, মাথা যন্ত্রনা বা শরীরে একটা অসস্তি ভাব , হ্যানিমানের ভাষায় Indisposition না আসছে। যখনি এই ধরনের সিমপটমস আসবে তখনই বলা যাবে মোটামুটি প্রতিষেধক করা গেছে। তখনই পুনরায় ঔষধ খাওয়ানো বন্ধ করতে হবে। ইনডিভিজুয়ালি বা স্বতন্ত্রভাবে কাউকে পক্স বা বসন্তের প্রতিষেধক ঔষধ দিতে হলেও এই একই পদ্ধতিতে দিতে হবে।
কিন্তু মনে রাখতে হবে হোমিওপ্যাথি মতে প্রতিষেধকের এই পদ্ধতি কিন্তু শত শত রোগীর উপরে পরীক্ষা হয়নি, তাই একেবারে ১০০ ভাগ কনফার্ম তা বলা যাবে না। শুধু জেনে রাখো হোমিওপ্যাথি মতে প্রতিষেধক ঔষধ দেওয়ার পদ্ধতি এই।
এ্যালবার্ট----- বুঝলাম, স্যার--এবারে জিনাস এপিডেমিকাস ঔষধ মানে ব্যাপারটা কি --- যদি একটু আলোকপাত করেন।
ডাঃ রবার্ট-----দেখো, এটিও একটি হোমিওপ্যাথিক প্রতিষেধক ঔষধ। জিনাস এপিডেমিকাস --- মানে এপিডেমিক আকারে ছড়িয়ে পড়া একটি ইনফেকসাস রোগের জন্য সবার ক্ষেত্রে বলবৎ হবে একটি মাত্র ঔষধ । আগের সিসটেমের মতন আলাদা আলাদা ব্যক্তি স্বাতন্ত্রতার উপরে নয়। কোন সংক্রামক বা ইনফেকশাস ডিজিজ যখন এপিডেমিক হয়, অর্থাৎ বৃহৎ আকারে বহু জায়গা নিয়ে বিস্তৃতভাবে প্রকাশ পায়, পরপর একজনের পর একজন আক্রমিত হতে থাকে, কেবলমাত্র সেই ক্ষেত্রের চন্য হ্যানিমান প্রিভেনটিভ হিসাবে এলাকার সবাইকে সার্বিকভাবে একটি ঔষধ প্রেসক্রাইব করার কথা বলেছেন। এই ঔষধটির নামই হচ্ছে জিনাস এপিডেমিকাস।
কিভাবে? অবজারভেশন বা পর্যবেক্ষণ করে দেখতে হবে ঐ এলাকায় সবার মধ্যে কি কি, বা, কোন কোন সিমপটমসগুলি বেশী দেখা যাচ্ছে। যদি দেখা যায় চারিদিকে ডেঙ্গুর যে আক্রমন হচ্ছে, সেখানে কমবেশী সবারই গা হাত পা অসম্ভব ব্যথা করছে, মনে হচ্ছে শরীরের হাড়গোড় সব ভেঙে গেছে , জ্বরটা সকালের দিকে মানে ৭টা বা ৮ টার দিকে বাড়ছে , তাহলে এক্ষেত্রে সেই এলাকায় রোগীদের সিমপটমস ভিত্তিক জিনাস এপিডেমিকাস হতে পারে ইউপেটোরিয়াম পার্ফোলিয়েটাম।
কিন্তুু, যদি দেখা যায় প্রায় সবার মধ্যে, বা বেশীরভাগ মানুষের মধ্যে জ্বর অত্যন্ত বেশি হচ্ছে--104 ডিগ্রী, বা 105 ডিগ্রী, রোগী মাঝে মাঝে বড্ড প্রলাপ বকছে, অর্থাৎ বকবক করছে, বিছানা শক্ত মনে হচ্ছে, পালস রেট বা নাড়ীর গতি অত্যন্ত বেশী, তাহলে সেই ক্ষেত্রে জিনাস এপিডিকিমাস হবে -পাইরোজেনিয়াম।
সুতরাং জিনাস এপিডেমিকাস নামের প্রতিষেধক ঔষধটি সিলেকসন হবে রোগ আক্রমিত এলাকা ভিত্তিকে অনেক রোগীদের সিমপটোমেটোলজী বিশ্লেষণ করে, সার্ভে করে, বা স্ট্যাটিসটিকসের দ্বারা সিমপটমস অনুসন্ধান করে।
আন্দাজে, বা মাত্র ২/৪ জনের সিমপটোমেটলজী বিচার করে নয়।
এ্যালবার্ট--- স্যার, এক্ষেত্রে ঔষধের শক্তি বা ডোজ কি রকম হবে?
ডাঃ রবার্ট--- একটু আগে যে ভাবে ইনডিভিজুয়াল মানুষদেরকে হোমিওপ্যাথি মতে সংক্রামক রোগ প্রতিরোধ করার জন্য প্রতিষেধক ঔষধ অনেক ডোজে খাওয়ার কথা বলেছিলাম, এই ক্ষেত্রে কিন্তুু সেই রীতিতে , বা সেই পদ্ধতিতে বেশী ডোজ দেওয়া যাবে না। এখানে ঔষধ দেওয়া হবে এই উদ্দেশ্য নিয়ে ---- এই মুহুর্তে লোকটির শরীরের ইমিউনিটি পাওয়ার বাড়ানোর জন্য, জীবনী শক্তিকে আরও উজ্জীবিত করে তাকে শক্তিশালী করার জন্য, যেন সে ডান্ডা হাতে ঐ বাইরের শত্রুকে প্রতিহত করতে পারে।
তাই নির্বাচিত ঔষধটি দিতে হবে উচ্চ শক্তিতে মাত্র ২/ ৪/ বা ৬ ডোজে, ২০০, বা ১০০০ শক্তিতে।

====================পর্ব -২৯ ==================================






পর্ব------৩০
বেশ কিছুদিন ডাঃ রবার্টের শরীর ভাল যাচ্ছিল না, রোগীর চাপে সময়ও পাওয়া যাচ্ছিল না, তাই কেস দেখানো ছাড়া ডাঃ রবার্ট তার ছাত্র এ্যালবার্টকে কিছু দেখাতে পারছিল না।
এদিকে মদনও আবার হাজির, কয়েক দিন হল সে এসেছে । বললো, চেম্বার একটা দিয়েছিল বটে, কিন্তু বুঝতে পারছে ---- শেখার এখনও অনেক কিছু আছে। রোগী লাস্টিং করছে না। তাই সে আবার কিছুদিন থাকবে।
মদন বলছে--- স্যার, আপনি রোগীদের এত বকাঝকা দেন, মেজাজ করেন, তাও সবাই আসে, আর আমি বাবা, বাছা, করেও কাউকে ধরে রাখতে পারছি না।
যাই হোক, এ্যালবার্ট ভাবলো, যাক, মদন যখন এসেছে -- তার খাটুনি এবার কিছুদিন কমবে।
এ্যালবার্টের একটা জিনিস রবার্ট সাহেবের বড্ড খারাপ লাগে, তা হলো সে বড্ড বকবক করে।
রবার্ট কি চায়?
রবার্ট চায় -- যখন কোন জুনিয়র তার চেম্বারে থাকবে বা শিখতে আসবে, তখন সে কোন রোগীকে কি জিজ্ঞাসা করছে, কি ওষুধ দিচ্ছে, কোন শক্তি দিচ্ছে, তা একজন জুনিয়র দেখার, বোঝার, বা, জানার চেষ্টা করুক । প্রয়োজনে বাড়ীতে গিয়ে সে বইপত্র ঘাঁটাঘাঁটি করুক। তা না করে কিছু ছাত্র বা কিছু জুনিয়র ডাক্তাররা চেম্বারে মধ্যেই রোগীর সামনে বকবক করে নানান প্রশ্ন আরম্ভ করতে থাকে। আরও খারাপ ব্যাপার রবার্ট সাহেব যেসব প্রশ্ন রোগীকে করে একটি ঔষধ ভেবে, স্থির প্রতিজ্ঞ হয়ে সেই ঔষধটি দেওয়ার পরিকল্পনা করছে, হঠাৎ কোন জুনিয়র অতি পান্ডিত্য ভাব দেখিয়ে তার স্যারের উপর ওস্তাদি করে নিজে রোগীকে নানান প্রশ্ন করতে থাকে। তাতে তার স্যারকে অসম্মান করা হচ্ছে, সময় নষ্ট করা হচ্ছে, আবার রোগীকেও বিব্রত করা হচ্ছে। ওরা বোঝে না এইরকম করতে থাকলে রোগী অত্যন্ত বিব্রত হয়। কারণ সে রোগী হয়ে তার কাছে আসেনি, এসেছে ডাঃ রবার্টের কাছে। তাই ডাঃ রবার্টের প্রশ্ন করা বা কথাবার্তা শেষ হলে--- তার পরেও তার অ্যাসিস্ট্যান্ট জুনিয়র শিক্ষার্থীরা যদি আবার একটার পর একটা প্রশ্ন করতে থাকে তাহলে তারা অসন্তুষ্ট হয় ও বিব্রত হয়।
এই বোধটুকু যেসব জুনিয়র ছেলেদের নেই তাদের উপরে শুধু রবার্ট কেন যে কোন সিনিয়র চিকিৎসক মাত্রই বিরক্ত হবেন। হসপিটালে হলে আলাদা ব্যাপার।
তাই সব শিক্ষার্থী ছাত্র, এবং শিক্ষার্থী জুনিয়র হোমিও চিকিৎসকদের সবার এই বিষয়টি খেয়াল রাখা দরকার। তাদের কোন প্রশ্ন থাকলে তারা ডায়েরিতে তা নোট করবে, এবং অবসর সময়ে কেস রেফারেন্স দিয়ে স্যারকে জিজ্ঞাসা করবে। তা ছাড়া যখনই তার চিন্তাভাবনার ওষুধটা মিলবে না, তখন বাড়ীতে গিয়ে দশটা বইপত্র পড়াশোনা করতে হবে বা দেখতে হবে মিলছে না কেন, তা দেখার জন্য বা জানার জন্য। কিন্তু তা না করে বাইরে অনেক রোগী অপেক্ষা করছে, তার স্যার ভীষন ব্যস্ত মানুষ, এসব বুঝেও ঐ মুহূর্তে সময় নষ্ট করা + তার স্যারকে এবং রোগীকে বিব্রত করা খুবই গর্হিত কাজ।
তাছাড়া ভাবতে হবে আমি যখন স্যারের কাছে শিখতে এসেছি--- তখন স্যারের সিলেকসনটা বেদবাক্য মনে করে আমার ভাবনাটাকে বাতিল করে মানবো এবং বাড়ী ফিরে বইপত্র দেখবো, কেন স্যারের সাথে আমার টা মিলছে না।
কিন্তু সেই মুহূর্তে চেম্বারে বেশী কথা নয়।
আর সেইজন্য স্যারকে ঠুঁটো করে বসিয়ে নিজে ওস্তাদ সেজে ৫ মিনিট ধরে আবার রোগীকে এটা, ওটা জিজ্ঞাসা করা কোন ছাত্র বা জুনিয়রকে নিতে বা রাখতে রবার্ট মোটেই পছন্দ করেন না।
যাই হোক --- মদন আসায় পাড়া প্রতিবেশী এবং অনেক রোগীদের মনে খুব আনন্দের উদ্রেক হয়েছে। কারন আফটার অল মদন খুব সাধাসিধা ছিল বলে ও চলে যাওয়াতে সবার মন খারাপ হয়েছিলো। মদন আবার আসাতে তাই অনেকেই অাবার খুশী।
রবার্ট একটা হিস্টিরিয়া রোগিনীকে মস্কাস ২০০ ২ ডোজ দিয়ে সারিয়েছে ---
এই গল্পটি শোনার পর থেকে মদন আদাজল খেয়ে লেগে আছে রবার্টের পিছনে। মস্কাস সম্বন্ধে একটু ডিটেলস জানার জন্য।
আদার কথা যখন উঠলো তখন অনেক মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষ খুশি হবেন জেনে আদার মতন নগন্য কন্দমূল যা বাংলাদেশের ঝোপেঝাড়ে প্রায়ই জন্মায় তারও কিন্তু স্থান হয়েছে-- আল-কোরআনে।
কোরানে বলা হয়েছে--- ভাল মানুষদের বেহেস্তে যাওয়ার পরে দেওয়া হবে আদা মিশ্রিত পানীয়। কোরান সম্মন্ধীয় আলোচিত একটি ইংরাজী বইয়ে ঠিক এই লাইনটি অাছে----
" And they shall drink therin a cup tempared with Zanjabil ( Ginger),
----Al Kuran, Sura Dahar)
যাইহোক মদনের অনুরোধে রবার্ট সাহেব মস্কাস সম্বন্ধে কিছু বলতে আরমভ করলেন। অ্যালবার্ট ও মদন বসে বসে শুনতে থাকলো।
জানো মদন, অনেকেই জানে না মস্কাস হানিমানেরই পরীক্ষা করা ঔষধ, এবং মেটেরিয়া মেডিকা পিউরা তে দেওয়া আছে ।
ঔষধটি সুগন্ধি মৃগনাভি থেকে তৈরী হয়েছে। শুকনো করে তারপর হ্যানিমানের ট্রাইটুরেশন পদ্ধতিতে। প্রুভিংয়ে হ্যানিমানকে সহায়তা করেছিলেন --Gross, and Stapf.
হ্যানিম্যান বলেছেন--- এরা মোস্ট হাইপোকন্ড্রিকাল,
( Most hypochondriacal patient),
নাম্বার অফ নার্ভাস এক্সাইটেশন এদের মধ্যে থাকে। তিনি আরও বলছেন এই তীব্র সুমিষ্ট গন্ধটা মানুষের নার্ভাস সিষ্টেমকে এ্যাটাক করে, তাদের কে হিস্টিরিক রোগীতে পর্যবসিত করে। তাদের অসম্ভব বুক ধড়ফড় করে । তাদের রাগের মাত্রা খুব বেড়ে যায় ----এমন রাগ হয় যে জ্ঞান থাকে না, কোমর বেঁধে ঘন্টার পর ঘন্টা ঝগড়া গন্ডগোল করতে পারে, রাগে উন্মাদ রোগীর মতন হয়ে যায়, ইংরেজিতে এই ধরনের বিশ্রী রাগ শব্দটিকে বলা হয় Rage ( রেজ) ।
-------কিরে মদন, তোর বৌ আবার রেজ সিমপটমের রোগী না ত?
মদন ---- কি যে কন স্যার, ২০০ মাইয়া দেইখ্যা দেইখ্যা আমি একখান পালসেটিলা যোগাড় করছি।
----- তাহলে তো তোর লাক ভাল বলতে হয় মদন, কিনতু আমার ওয়াইফ ত রেজের রোগী ছিলো। যাক সে ত এখন আর পৃথিবীতে নেই।
যাক যে কথা বলছিলাম--- দেখ--- ইগ্নেশিয়াতে ও হিস্টিরিয়া ও ফিটের ব্যাপারটা আছে, প্রায়ই ফিট হয়, কিন্তু তাদের মস্কাসের মতন এরকম হঠাৎ হঠাৎ রেজ মার্কা অসভ্য রাগ নেই।
------ অ্যালবার্ট, মদন,
একটা জিনিস তোমরা জেনে রাখো, বহু রোগী হিস্ট্রিরিক, অর্থাৎ তাদের রোগ হিস্টিরিকাল।
যেমন---মাথাব্যথা, পেট ব্যথা, কানে কম শোনা, চোখে কম দেখা, হঠাৎ বুক ধড়ফড় করা, হঠাৎ শ্বাসকষ্ট হওয়া, হঠাৎ দমবন্ধের মতন হওয় , বাড়ীর লোকও ব্যস্ত হয়ে পড়ে। সবাই ব্যস্ত হয়ে পড়ে বড় বড় স্পেশালিস্ট এ্যালোপ্যাথদের কাছে দৌড়ায়। লক্ষ লক্ষ টাকার পরীক্ষা করিয়ে শেষে তারা বলে --- সবই ত ঠিক দেখছি, তোমার ত কোন রোগ নেই। কিন্তু রোগ ত অাছে---- She is hysteric, যা আমরা বুঝি, আমাদের চিকিৎসা আছে।
আর বহু রোগের অন্য আর একটি কারন হলো---- এ্যালার্জী।
মানে,---
an antagonistic relation between the body and external substances,
----- দুজনের মধ্যে মিল না হলে কি হয়? স্বামী স্ত্রীর মিল না হলে কি হয়? ১০০ টাকা করে বিয়ের কার্ড কিনে পূজা টুজো করে সেই কার্ডে লাল রং দিয়ে শুভ বিবাহ লিখে গদগদ চিত্তে, হাসিহাসি মুখে যে লোকজনকে দেওয়া হয়--- সবার অলক্ষ্যে সেই শুভ র আগে কে যেন একটা অ বসিয়ে অশুভ করে রেখেছিলো, তা কে জানতো? তাই ত ৩ মাস যেতে না যেতেই পাশের বাড়ীর লোকেরা দেখতে থাকে--- একজন দা ছুঁড়ছে ত অন্যজন বঁটী, একজন চপ্পল ছুঁড়ছে ত অন্যজন ঝাঁটা।
সেই রকম কারুর সজিনার ডাঁটা খেয়েও হার্ট এ্যাটাক করে, কারুর ধুপের গন্ধে শ্বাসকষ্ট হয়, কারুর সিন্থেটিক শাড়ী পরলেই চুলকানি আরম্ভ হয়, কারুর রুটি খেয়ে আমাশা চলছে, কারুর বাগানের পাশ দিয়ে হাঁটলেই চামড়ায় চাকা চাকা এ্যালার্জী হচ্ছে, কারুর প্লাষ্টিকের জুতা থেকে পায়ে একজিমা হচছে, বিপদ কাটানোর জন্য ভারত নামক কুসংস্কারছন্ন দেশের অতি শিক্ষিত মানুষও একগুচ্ছ লাল দড়ি ঠেসে কব্জিতে বছরের পর বছর বেঁধে রাখার জন্য তার নীচে শ্বেতীর উৎপত্তি হচ্ছে , আবার শুধু শারীরিক নয়, যে মানুষটাকে মোটেই সহ্য হয় না, দুইচোখে দেখতে ইচ্ছা করে না, তাকে দেখলেও কোন না কোন সমস্যা তৈরী হচ্ছে ---- সেও এ্যালার্জী।
মদন---- তাহলে স্যার বুঝলাম--- এই হিস্টিরিয়া আর এ্যালার্জী আসলে বহু রোগের কারন।
----- হ্যাঁ, কিন্তু তা রোগী নিজেও যেমন বোঝে না, তেমনি বোঝে না বহু চিকিৎসকও।
ব্রেনের সুক্ষ acumen আর analytical power না থাকলে তোমরাও Hysteric আর Allergic disease ধরতে পারবে না, আর তা না পারলে চটপট রোগী সারাতেও পারবে না।
এ্যালবার্ট---- স্যার মস্কাসে ফিরে অাসুন ।
---- হ্যাঁ, মস্কাসে তাই তোমরা হিস্টিরিক হাঁপানিও পাবে, যা আসল হাঁপানি নয়। ডাঃ গার্নসে বলেছেন --- মস্কাস হিস্টিরিক অজ্ঞান হওয়া, বা হাঁপানি শুধু নয়, হিস্টিরিক কারনে হিক্কা, হাত পা ঠান্ডা হয়ে কোলাপ্স হওয়া, ভীষণ প্যালপিটেশন বা বুক ধড়ফড়, ইত্যাদিও সাংঘাতিক ভাবে তৈরী করতে পারে।
ডাঃ হিউজেস --- ইংল্যান্ডের একজন অত্যন্ত শিক্ষিত হোমিওপ্যাথ তার Pharmacodynamics বইয়ে মস্কাসের হঠাৎ হঠাৎ অজ্ঞান হওয়া সম্মন্ধে বলেছেন----
" I know nothing which so rapidly dissipates an hysterical attack, even when it has gone as far as unconsciousness ".
হ্যানিমান আরও বলেছেন---- হঠাৎ হঠাৎ হাত পা ক্রাম্প হয়ে যেতে পারে,
--- Most hypochondriacal persons,
A number of nervous excitations, etc.
ডাঃ নরেন ব্যানার্জীর বইয়েও মস্কাস ছোট করে দেওয়া আছে, কিনতু এমনভাবে এমন জায়গায় দেওয়া যে তা তোমাদের চট করে চোখে পড়বে না। দেখিয়ে দিচছি।
তাহলে কেন্টের কথা আর বাদ দিই কেন,
মদন, এ্যালবার্ট,
কেন্টের মেটিরিয়া থেকে তোমরা পড়ে নিও , আমি বরং কেন্ট তার রেপার্টরীতে যেখানে যেখানে মস্কাসের কথা বিভিন্ন রুবরিকে দেখিয়েছে, তার মধ্য থেকে বেশী ইম্পরট্যান্ট কয়েকটি রুবরিক তোমাদের দেখাই ----

পর্ব---------- ৩১
মদন---- স্যার ল্যাকেসিস যে সাপের বিষ থেকে তৈরি হয়েছে সেই সাপটার নাম কি?
রবার্ট---- সুরুকুকু সাপ,
মদন--- স্যার, ল্যাকেসিস ঔষধটি কিরূপ আকৃতির লোকদের পক্ষে বেশী উপযোগী?
রবার্ট----- মাংসল দেহ অপেক্ষা লম্বাটে রুগ্ন দেহ /দেহী লোকদের পক্ষে ল্যাকেসিস বেশিী উপযোগী।
মদন---- স্যার, কি কি সম্ভাব্য উত্তেজক কারন ল্যাকেসিসের রোগ উৎপত্তির কারন হতে পারে?
রবার্ট-----
★দীর্ঘস্থায়ী দুঃখ ---( Long lasting grief) ,
★ শোক ( Sorrow) ,
★ ঈর্ষা ( Jealousy) ,
★ ব্যর্থ বা হতাশ প্রেম, বা ভালবাসা (Disappointed love) ,
★ মাসিক বন্ধের সময় ( Climacteric period at) ,
★ অতিশয় শৈত্য বা অতিশয় উত্তাপ,( Extremes of heat and cold) ,
★ ঋতুস্রাব বা অন্যান্য স্রাব অবরুদ্ধ হলে ( Suppresses of menses or other discharges) ,
★ ভয় ( Fright) ,
★ বিরক্তি ( Vexation) ,
★ বিষাক্ত ক্ষত ( Poisonous wounds) , ইত্যাদি।
মদন----স্যার, ল্যকেসিসের কয়েকটি প্রধান উল্লেখযোগ্য লক্ষন বলুন , শিখি,
রবার্ট---
১) শরীরের বাম দিকেই রোগগুলি বা রোগের প্রকোপ বেশী, বা,
প্রথমে বাম অঙ্গে রোগ আক্রমন হয়, এবং পরে বাম দিক থেকে ডান দিকে রোগের বিস্তৃতি হয়,
২) ঘুমের মধ্যে বা ঘুমের অব্যবহিত পরে রোগের বৃদ্ধি হয়,
( ঘুমের মধ্যে কাশি বাড়ে, কিন্তু ঘুম ভাঙে না ----- ক্যামো, ---- নরেন বন্দোঃ---- তৃতীয় পৃষ্ঠা, শেষ লাইন, ) ,
৩) কয়েকটি মানসিক লক্ষন খুবই গুরুত্বপূর্ণ ------
* Loquacity ( ভীষণ কথা বলে) ,
* Suspicion ( ভীষণ সন্দেহ) ,
* Jealousy ( ঈর্ষাপরায়নতা) ,
* Ecstacy ( আনন্দোচছাস ),
চলবে - 

পর্ব----৩২

মদন ---স্যার, ল্যাকেসিসের যে ঘুমের মধ্যে বা ঘুমের পরে বৃদ্ধি সবাই বলছে, তা একটু বুঝিয়ে বলুন,
ডাঃ রবার্ট --- দেখো মদন,
ঘুম মানুষের জীবনের একটা বড় সম্পদ । একটা মানুষের যদি প্রচুর অর্থ বা টাকা থাকে, সুন্দরী স্ত্রী বা স্বাস্থবান স্বামী থাকে, বড় ব্যবসা থাকে, ভাল চাকরী থাকে, কিন্তু রাতে তার ঘুম অাসে না, রাত হলেই তার আতঙ্ক আরম্ভ হয়--- কারন সে পরিষ্কার বুঝতে পারে, তার ঘুম আসবে না, সবাই ঘুমাবে আর সে অনিদ্রায় ছটফট করবে।
সুতরাং ঘুম না হওয়া মানুষদের যে কি দুঃখ, কি কষ্ট, কি যন্ত্রনা, তা সে কাউকে বুঝাতে পারে না। কারণ, একদিন রাত্রে ভাল ঘুম না হলে পরের দিনটা তার অত্যন্ত বিশ্রী ভাবে কাটে, তার কিছুই ভাল লাগে না, কোন কাজে সে ঠিকমতন মনোসংযোগ করতে পারে না, অর্থাৎ এককথায় শান্তিতে কোন কাজে মনোনিবেশ করতে পারে না। সবসময় একটা আনইজি, আনরিফ্রেশ, আনস্যাটিসফায়েড অবস্থা। অনিদ্রার মানুষটিকে অসস্তি সারাটা দিন তাই কুরেকুরে খায়।
তাই আমরা জানলাম, ঘুম মানুষের সকল দুঃখ যন্ত্রণা, শারীরিক কষ্ট, ব্যথা , সবকিছুরই উপশম করে।
কিন্তু ল্যাকেসিসের রোগীদের সেই ঘুমের মধ্যেই তার যাবতীয় যন্ত্রণা দুঃখ-কষ্ট আরম্ভ হয়ে যায়। যে নিদ্রা মানুষকে শোকে সান্ত্বনা দেয়, দুঃখকে বিস্মৃতি প্রদান করে, শ্রান্তিতে আরাম দেয়, শঙকাকে নির্ভয় দান করে, সেই নিদ্রার চিরপবিত্র সুকোমল কোলে ল্যাকেসিসের ঠাঁই নেই।
কিন্তুু কেন?
কারন-- ল্যাকেসিস যে আশীবিষ, ঈর্ষার মূর্তিময়ী রূপ।
তাই ল্যাকেসিসের হাঁপানি ঘুমের মধ্যে বাড়ে ---- তাকে শ্বাসকষ্টের জন্য ঘুমের থেকে লাফিয়ে উঠতে হয়, খিঁচুনি ঘুমের মধ্যে বৃদ্ধি পায়, হার্টের যাবতীয় লক্ষণগুলি ঘুমের মধ্যে বৃদ্ধি হয়, কাশি ঘুমের মধ্যে বৃদ্ধি পায়--একটার পর একটা কাশির ধমকে রোগীতাড়াতাড়ি উঠে পড়তে বাধ্য হয়।
আবার ঘুম থেকে উঠার পরেও অনেক সময় ল্যাকেসিসের অনেক কষ্ট বা রোগলক্ষন বৃদ্ধি হয়। অর্থাৎ যেইমাত্র রোগী ঘুম থেকে উঠলো তখনই তার কষ্ট আরম্ভ হতে থাকে । তা সে হোক---- কাশি, শ্বাসকষ্ট,, ফিটের রোগ, পেটব্যথা, বুকেব্যথা, মাথাব্যথা, এমন কি চর্মরোগের চুলকানিও, বা যাবতীয় মানসিক লক্ষনও।
তাই মনে রাখতে হবে, ল্যাকেসিসের -----
১) ঘুমের মধ্যে বৃদ্ধি ,
২) ঘুমের পরে অর্থাৎ ঘুম থেকে উঠার পরে বৃদ্ধি ,
তাই ল্যাকেসিসের প্রথম ও প্রধান একটি উপসর্গ হচ্ছে ---- ঘুমের মধ্যে বৃদ্ধি, এবং ঘুমের পরে বৃদ্ধি
★ Sleep into the aggravation,
★Sleep after aggravation.
★ ল্যাকেসিসের দূর্বলতা খুব বেশি। সেই দুর্বলতা বিশিষ্ট ভাবে প্রকাশ পায় তার জিভে, সেইজন্য ল্যাকেসিস রোগীকে জিভ বের করতে বললে সে তা পারে না। দাতের ফাকে জিভ আটকে যায় , কিংবা অতি কষ্টে যদি বের করতে যায় ---দেখা যায়, জিভ কাঁপে, মানে কম্পমান জিহবা।
তাই দুর্বল জিভ, জিভ ঠিকমতন বের করতে পারে না, বের করতে গেলে কাঁপে ----
এটা ল্যাকেসিসের একটি উল্লেখযোগ্য লক্ষণ,
ঈর্ষা, স্পর্শকাতরতা, সন্ধিগ্ধতা, এবং বাচালতা ------
এই ৪ টি মানসিক লক্ষণ ল্যাকেসিসের বিশিষ্ট পরিচয়।
ঈর্ষা বা হিংসায় ল্যাকেসিস রোগীর বুক যেন জ্বলে যায়। অন্য কেউ তার থেকে একটু বেশি সুন্দরী হলে তাকে ব্যঙ্গ করতে থাকে, ল্যাকেসিসের স্ত্রী চায় না --- তার স্বামী অন্য কোন স্ত্রীলোকের দিকে তাকাক, সে চায়---- তার স্বামী যেন তার থেকে অধিক রূপবতী, গুণবতী বা সৌভাগ্যবতী মহিলাদের মুখ দর্শন না করে। এমনকি আপন বোনদের মধ্যেও কেউ যদি তার বাড়িতে ঘনঘন যাতায়াত করে তাহলো ঈর্ষায় এবং সন্দেহে তার মন ভারাক্রান্ত হয়ে ওঠে । সে বহু সময় স্পষ্টভাবে বলতে থাকে যে তার বাড়ীতে এইরকম বারবার আসা-যাওয়া সে পছন্দ করে না। স্বামীর উপরেও তাই সতর্ক দৃষ্টি রাখে,
------ কিন্তু অঙ্গার যেমন নিজে দগ্ধ না হয়ে অন্য কে জব্দ করতে পারেনা, ঈর্ষার স্বভাবও তাই, ঈর্ষার কারণে ল্যাকেসিস রোগীর তাই অনেক রোগ হতে দেখা যায় ---- ঈর্ষাজনিত মৃগীরোগ, হৃদরোগ, উন্মাদ রোগ, তড়কা, ইত্যাদি, হয়।
স্পর্শকাতরতা----- রোগীর শারীরিক স্পর্শকাতরতা অত্যন্ত বেশী। মাথায় চিরুনি দিয়ে চুল আঁচড়াতে পারে না৷, গলার কাছের জামার বোতাম একটু টাইট হলে তা সহ্য করতে পারেনা, কোমরের কাপড় আঁটোসাঁটো ভাবে পরতে পারে না, জুতোর ফিতে টাইট করে বাঁধতে পারে না,
তাই, ল্যাকেসিসের মধ্যে সর্বত্র স্পর্শকাতরতা দেখা যায় ।
বাচালতা------বাচালতাঃ ও ল্যাকেসিসের মধ্যে অত্যন্ত বেশী। মোটেই চুপ করে বসে থাকতে পারে না । একজনের সাথে এক বিষয়ে কথা বলতে বলতে অন্যজনের কথার মধ্যে ঢুকে পড়ে, এক বিষয়ে কথা বলতে বলতে অন্য বিষয়ের কথা বলা আরম্ভ করে, কথার পর কথা , গল্পের বড় গল্প। একজনের থেকে আরেকজনের কথার মধ্যে ঢোকা, এক বিষয় থেকে আরেক বিষয়ে চলে যাওয়া, ইত্যাদিতে সে যেন একেবারে সিদ্ধহস্ত। তার মুখ কিছু কথা বলার জন্য নিসপিস করতে থাকে। অনেক সময় আপন মনেও একা একা কথা থাকতে থাকে।
ডাক্তারবাবুদের তার রোগের ফিরিস্তি শুনতে , আর তার সাথে আরও অন্যান্য কথা শুনতে মাথা খারাপ হয়ে যায়,
যেমন---- সে কিরকম বংশের মেয়ে, সে কি রকম পরিশ্রম করতে পারে, কত সাধ করে ছেলের বিয়ে দিয়েছিল --- কিন্তু এ কি হল? সে এ কি আনলো? কি সর্বনাশী বউ রে বাবা, ইত্যাদি, ইত্যাদি।
ডাক্তার তার সম্বন্ধে একটি কথা জিজ্ঞাসা করল 50 কথা শুনিয়ে ছাড়ে । অনেক সময় বাড়ির লোক বিরক্ত হয়ে ভাবে তার কি মাথা খারাপ হয়ে গেল ? আবার মাথা খারাপ হয়ে গেছে এই কথা যদি শুনে ফেলে তাতেও সর্বনাশ। ফল হয় বিপরীত। কেঁদেকেঁটে কপাল চাপড়ে বকবক ও লাফালাফি করতে থাকে। পৃথিবীর সকল সন্দেহ পুঞ্জীভূত হয়ে যেন তার মধ্যে মূর্ত হয়ে উঠে । তখন তার মূর্তি কে দেখে, মুখের ভাষাতে সে মুখর হয়ে ওঠে । তখন বিভিন্ন ভাষায় কথা বলতে অারম্ভ করে।
সন্দিগ্ধতা, বা সন্দেহও তার মধ্যে অত্যন্ত বেশী। সব কিছুতে ভীষণ সন্দেহ।
সন্দেহ করে কোন ঔষধ খেতে চায় না, মনে করে তাকে বিষ মেষানো ঔষধ দেওয়া হয়েছে, মনে করে তার পিছনে শত্রু ঘুরে বেড়াচ্ছে, মনে করে তার স্বামী অন্য মহিলার প্রেমে আসক্ত হয়ে তার পিছনে ঘুরে বেড়ায়,
এইরকম সন্দেহ তার সর্বত্র। একটার পর একটা সন্দেহ তার বোন যদি তার স্বামীর সাথে একটু মশকরা করে , তাহলে সন্দেহের জালে ভাসমান হয়ে নিজের বোনকেও নানা রকম কটুকথা বলতে দ্বিধাবোধ করে না।
চলবে

==============================৩৩ পাওয়া যায় নাই ================================

পর্ব ------ ৩৪
মদন ---- স্যার কি বিশ্রাম করছেন?
--- কেন ?
---- স্যার, আপনি ভিতরে ঢোকা মাত্র একজন মধ্যবয়সী ভদ্রমহিলা, বয়স মোটামুটি 40-45 হবে , অনেক দূর থেকে এসেছে। কাকুতি-মিনতি করছে ডাক্তারবাবুকে ধরে একটু দেখিয়ে দাও না, তা আমি মোটামুটি কেস টেকিং করেছি।
-----অসুবিধা কি?
-----স্যার বললো, আঙ্গুলের ফাঁকে ফাঁকে, আর আঙ্গুলের মাথায় নখের গোড়ায় অনেক দিন থেকে ফেটে ফেটে যাচ্ছে। অ্যালোপ্যাথিক ডাক্তার অনেক দেখিয়েছে, মলম লাগাতে দিচ্ছে, কিন্তু যে কদিন মলম লাগাচ্ছে কম থাকছে, তারপর মলম বন্ধ করলেই যা তাই ,
----শরীরের আর কোথাও আছে?
----- হ্যাঁ স্যার, ঘাড়ের পিছনেও এরকম আছে বলেছে,
----রস বেরোয়, না দেখতে শুকনো?
----- দেখতে শুকনো স্যার,
তবে বলেছে বেশী চুলকানোর পরে মাঝে মাঝে নাকি একটু রস বেরোয়,
----- রসটা পাতলা, না কি ঘন, বা, মোটা আঠার মতন ?
------জিজ্ঞাসা করেছিলাম স্যার, বলেছে---- এত খেয়াল করিনি তবে একটু আঠা আঠা ভাব থাকে, ,
------ মাসিকের ব্যাপারে কিছু জিজ্ঞাসা করেছো ?
----- করেছিলাম, জানালো বন্ধ হয়ে গেছে বছরখানেক হলো,
-----মাসিক যখন হতো, তখনকার ইতিহাস জেনেছো?
-----হ্যাঁ, প্রত্যেক মাসে ১০/১৫/ বা ২০ দিন পিছিয়ে যেতো, আর পরিমানে কম হতো,
------পিপাসা কেমন?
------ পিপাসা কম ,
------- ঘাম কেমন ?
-------ঘাম কম,
--------পায়খানা কেমন?
-------সিভিয়ার কনস্টিপেশন স্যার, দুইদিন বা তিনদিন পর পর পায়খানা হয়,
-------শীত বেশি না গরম বেশী?
------- স্যার বলেছে তার শীত খুব বেশী,
------- মিষ্টি খেতে ভালবাসে?
------- না স্যার, সে মিষ্টি ও মাংস খেতে ভালোবাসে না,
------- স্যার, আপনি যা শেখাচ্ছেন, তাতে অনেক বলে বড্ড লিডিং কোয়েশচেন হয়,
----- মদন, রোগীকে সঠিক ঔষধ নির্বাচনের জন্য কেস টেকিং বা প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করে লেখা এক এক জনের নিজস্ব আর্ট, আসল উদ্দেশ্য তার রোগটি সারানো,
--------আচ্ছা, গান-বাজনা কি সে ভালোবাসে?
--------- না স্যার, গান-বাজনা বেশী ভালবাসে না , বলেছে গান শুনলেই নাকি তার মনটা খুব খারাপ হয়ে যায়, মনের ভিতর দুঃখ দুঃখ ভাব লাগে , কান্না পেয়ে যায় ,
------একটা কথা জিজ্ঞাসা করে আয়----- স্বামী-স্ত্রীর সহজাত প্রবৃত্তি, অর্থাৎ সহবাস করার ইচছা তার কেমন ছিলো,
------ স্যার, জিজ্ঞাসা করেছিলাম, এই প্রশ্ন শুনে সে রেগে আগুন হয়েছিলো, বলেছিলো--- ওসবে তার কোনদিনও ইচছা ছিল না, ওসব কাজ মানুষে করে?
মদন মনে মনে ভাবলো ছেলেপিলে ১ জি বি নেট একদিনেই শেষ করে ফেলছে এইসব দৃশ্য দেখে দেখে, আর এই মহিলা বলে কি?
---- মদন, এই মহিলাকে গ্রাফাইটিস দে,
------স্যার, পোটেনসি কি দেব?
পোটেনসি নিয়ে ত আবার থিওরিটিক্যাল বাবুদের বিরাট কচকচানি,
-----30 দিলে সকালে একবার করে 4 দিন খাবে,
200 দিলে পর পর ২ দিন সকালে খাবে,
তবে ডাইরেক্ট এক ফোঁটা করে খেতে দিবি না৷ তুই একটা শিশিতে জলের মধ্যে ডোজ বানিয়ে দিবি। খাওয়ার সময় একবার ঝাঁকি দিয়ে এক কাপ জলে এক ডোজ ঢেলে সেখান থেকে 2 চামচ খাবে বাকীটা ফেলে দেবে।
আর যদি সহস্রতমিকে দিস,
তাহলে 100 বা 120 মিলি জলে একটি বড়ি দিয়ে, তার মধ্যে 15/20 ফোঁটা R S দিয়ে 16 দাগ কেটে দে। প্রত্যহ সকালে ঔষধের শিশিটাকে 10 বার ঝাঁকি দিয়ে এক কাপ জলের মধ্যে 1 দাগ ঔষধ ঢেলে চামচ দিয়ে ঘেঁটে সেখান থেকে 3 চামচ খাবে এবং বাকীটা ফেলে দেবে।
মদন, ফি আর ঔষধের দাম টা তুই নিয়ে তোর বউ আর বাচচার জন্য কিছু কিনে বাড়ি নিয়ে যাস।
আর এখন ডিসটার্ব করবি না,
একটু বিশ্রাম করবো।

পর্ব -------৩৫
রবার্ট সাহেব ইজি চেয়ারটায় বসে একটা ম্যাগাজিন পড়ছে, মদন জানালা দিয়ে বাইরের দিকে তাকিয়ে আছে । হঠাৎ বললো,
স্যার, একটা বৃদ্ধ লোককে প্রায়ই দেখি বিকালে সামনের মিষ্টির দোকানে এসে হাজির হয়, সিঙ্গারা কেনে, আর কয়েকটি রসগোল্লা কিনে চলে যায। রসগোল্লাগুলি আবার তার গরম গরম পছন্দ। গরম রসগোল্লা ছাড়া নেবেই না। টাকা পয়সা নিয়ে মাঝে মাঝে ঝামেলাও করে। আমার সাথে পরিচয় হয়েছিল একদিন, তখন জেনেছি শিক্ষিত লোক, কি একটা অফিসে বড় পোস্টে চাকরী করতো।
স্যার লোকটার চেহারার মধ্যে কিরকম একটা বিসদৃশ ভাব। মাথা, গলা, আর ঘাড়ের দিকটা একটু রোগা বা সরু, কিন্তু থাই বা পায়ের দিকটা ততটা সরু নয়, বেশ মোটা ভাব।
মুখের দুই পাশে এবং কপালে কত ভাঁজ,
যেন বড় চিন্তাবিদ।
ঐ যে দোকান থেকে বেরিয়ে একজনের সাথে কথা বলছে,
---- কি ভট্টাচার্য মশাই, কেমন আছেন?
--আর কেমন থাকবো বলুন, পেট নিয়ে শেষ হয়ে গেলাম, লিভার টা ভালো যাচ্ছে না,
পেটের লিভারের জায়গাটায় বড্ড ব্যথা , আর রোজ বিকালে অম্বল, গলা জ্বালা, পেট জ্বালা ত লেগেই আছে,
---- তাহলে একবার ভেলোরে চেক আপ করিয়ে আসেন না,
----- না, সে আবার অনেক ঝামেলা, অনেক খরচও হয়ে যাবে,
-----আপনার স্ত্রী কেমন আছে?
------ ৫ দিন হলো বাপের বাড়ী গেছে,
ছেলে, বৌমাও পুরীতে বেড়াতে গেছে, এখন বেশ আছি।
বাড়ীতে বেশী লোকজন না থাকলেই আমার ভালো লাগে,
যাই ভাই--
ঐ, আর একটা লোকের সাথে দেখা হলো স্যার,
---- কি ভটচায্যি, পেটের গন্ডগোল ছিল না একটু কমেছে?
---- না গো, পায়খানা মোটেই পরিষ্কার হচ্ছে না , আর হবেই বা কি করে, লিভার তো খুবই খারাপ ,তার উপর গত কয়েকদিন ধরে দেখছি ডানদিকের হাতের এই জয়েন্টে ব্যথা, হাত মোটেই ঘোরাতে পারছি না,
---- চিকিৎসা কি করছো?
----- একজন হোমিওপ্যাথি ডাক্তারকে দেখাচ্ছি, ৪ রকমের পেটেন্ট দিয়েছে, দিনে ৪ বার এক চামচ করে খেতে হবে,
---- তুমি এক কাজ করো, ডাঃ রবীন বর্মনকে দেখাও,
----- ভাই ডাক্তার ভাল শুনেছি, কিন্তু ফি বড্ড বেশী, পারবো না,
----- কি পারবে না, রিটায়ার্ড করে যে ১৫ লাখ পেলে সেই টাকা কি করলে?
---- সব ফিকসড ডিপোজিট করে দিয়েছি ভাই, ঐ টাকায় কেউ হাত দেয়?
----তাহলে তুমি এক কাজ করো তো আয়ুর্বেদিক জোলাপ " পেট পরিষ্কার " খাও।
মদন----স্যার, এই রোগী যদি আমাদের চেম্বারে আসতো তাহলে কি ওষুধ প্রেসক্রিপশন করতেন? চেলিডোনিয়াম মাদার ?
-----এই মাদার, ফাদার দিয়ে চিকিৎসা করেই সবাই হোমিওপ্যাথির বারোটা বাজালো রে মদন, এই করেই তো তোরা হোমিওপ্যাথি শেষ করবি,
তোর এই বৃদ্ধের গল্প শুনে আমার সামনে ছবির মতন লাইকোপোডিয়াম ভেসে উঠছে।
১) বৃদ্ধ বয়স ---ব্যারাইটা কার্ব, ওপিয়াম, লাইকোপোডিয়াম এইসব ঔষধ অত্যন্ত উপযোগী,
২) সব উপসর্গ ডানদিকে বলতে চাইছে,
৩) বিকালে রোগলক্ষন বাড়ছে বলছে ,
৪) কোষ্ঠবদ্ধতা,
৫) মিষ্টির প্রতি লোভ,
৬) গরম খেতে চায়,
৭) টাকা পয়সা খরচ করতে চায় না, অর্থাৎ কৃপনতা,
৮) কপালে, মুখের দুই পাশে কুঁচকানো বা গভীর দাগ দাগ বলেছিস--- deep furrows ,
৯) একা থাকতে ভালবাসে,
১০) শরীরের উপর দিকে সরু বা রোগা, নীচের অংশ মোটা, ( নেট্রাম মিউর) ,
১১) ভাল পড়াশোনা আছে,
তার মানে ভাল চাকরী করতো, মানে শিক্ষিত --- intellectually keen,

পর্ব -------৩৬

চেম্বার শেষ হয়েছে , ডাক্তার রবার্ট সারাদিনের ক্লান্তি শেষে একটু বিশ্রাম করছেন। কিন্তু, মদন কি আর বিশ্রাম করতে দেবে? তার তো পেটে খিদে, শেখার অদম্য আগ্রহ। চেম্বারও একটা দিয়েছে । রবিবারে রবার্টের চেম্বার বন্ধ থাকে, সেদিন মদন গ্রামে গিয়ে একটু প্র্যাকটিস করে। আমাদের মানিকবাবু যেমন করে। আর যেসব কেস সামলাতে পারে না, অসুবিধা হয়, সময় ও সুযোগ পেলেই সেই সব মনের মধ্যে জমা প্রশ্নগুলি রবার্টকে জিজ্ঞাসা করে।
--- স্যার, আমাদের পাড়ার একটি লোক টানা ৮ দিন জ্বরে ভোগার পরে ভীষন দূর্বল হয়ে পড়েছে। এখন জ্বর নেই, কিন্তু বিছানা থেকে উঠতে পারে না। সব সময় শুয়ে থাকে। পায়ের নীচের দিকে ফুলে আছে। প্রস্রাব কম করে। কথা বেশী বলছেই না, চুপচাপ পড়ে থাকছে, ডাকলে মাঝেমধ্যে একটু সাড়া দেয় কিন্তু তৎক্ষনাৎ আবার ঘুমিয়ে পড়ে, সে কি ঘুমরে বাবা, অনেক ডাকলেও সাড়া দেয় না। তবে মাঝে মাঝে বাম দিকের হাতটি নাড়ায়।
--- শীত, গরম কোনটা বেশী বা কম কিছু বুঝতে পারো?
-----হ্যাঁ, বলতে ভুলে গেছি স্যার, রোগীটার শীত খুব বেশী, যখনই জ্ঞান ট্যান থাকে, তখন বলে ভীষণ শীত করছে, আমার গায়ে কিছু দাও।
--- কিছু কথা বলে না?
----- না স্যার, উদাস নয়নে ছাদের দিকে ফ্যাল ফ্যাল করে চেয়ে থাকে,
----পায়খানা?
----- পায়খানা ইদানীং একটু পাতলা হয় স্যার, একটু আমও থাকে --- মানে আমাশার মতন।
---- যখন ঘোরের মধ্যে থাকে তখন কিছু বলে?
---- হ্যাঁ, মাঝে মাঝে কি সব বিড়বিড় করে বলে, কিছু জিজ্ঞাসা করলে তার মুখের দিকে অনেকক্ষন হাঁ করে তাকিয়ে থাকে, তারপর কিছু উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করে।
আর একটা কথা স্যার----
বিকাল ৪ টার পর থেকে তার ভুল বকাটা বেড়ে যায়, তা থাকে প্রায় রাত ৮ টা পর্যন্ত ; এই সময়টায় জ্বরও একটু বাড়ে,
আপনি ভাববেন না স্যার যে আমি লাইকোপোডিয়াম দিই নি, লাইকো ৩০, ২০০ সব দেওয়া হয়ে গেছে কিন্তু কিচ্ছু উন্নতি হল না। এইজন্যই ত মাঝে মধ্যে ভীষণ রাগ হয়, লক্ষন মিললেও ঔষধে কাজ করে না বলে,
স্যার, আমাদের পাড়ায় একজন মাইন্ড মেথডে প্রাকটিস করে, তাকে একবার দেখালাম। সে এসে ত খুব হম্বি তম্বি করলো --- বললো, ওসব পায়খানা, প্রস্রাব, ঘুম, পা ফোলা, কখন বাড়ছে আমার কিছুই লাগবে না। ওসব দিয়ে কিচ্ছু হয় না। ওসব হ্যানিমানের, কেন্টের পাগলামো ছিলো। এইসব বলে রোগীকে জোর করে জাগিয়ে জিজ্ঞাসা করতে আরম্ভ করতে থাকলো----
কেন আপনি শুয়ে আছেন?
এখন আপনার কি মনে হচ্ছে?
এই রোগের জন্য কি আপনার মরতে ইচ্ছা হচ্ছে?
আপনার হাসি পাচ্ছে না কান্না পাচ্ছে?
জ্বর আসার আগে আপনার মাথায় কি চিন্তা ছিল?
জ্বর সেরে গেলে আপনার মাথায় কি চিন্তা আসবে?
ইন্টারভিউ বোর্ডের পরীক্ষকদের মতন বেশ কিছু প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করে
স্ট্রামোনিয়াম ২০০ ১ ডোজ দিতে বলে।
আমি জানতাম স্যার ---
উনি স্ট্রামোনিয়াম দেবেন।
কারন বহু মেন্টাল বাবুদের দেখেছি এই ঔষধটাই ওদের প্রাণপ্রিয় গোবিন্দ। তা সে যেখানে যার যা কিছু হোক না কেন রোগ ও রোগীর সাথে সামঞ্জস্যহীন গাদাখানেক প্রশ্ন করে শেষে সীতা রামের মা বোঝার মতন ধর্মপ্রাণ হিন্দুরা শিব ঠাকুরকে যে ধুতুরা ফুল দিয়ে পূজা করে, সেই ধুতুরাতেই আস্থা রাখে। তবে শিব ঠাকুর নাকি ধুতুরা ফুল পছন্দ করে, আর ওরা পছন্দ করে ধুতুরা ফলকে ।
যাইহোক স্যার, সেই স্ট্রামোনিয়াম ২০০, ১ ডোজে কিছুই কাজ হয় নি, ডাক্তারবাবুর লেকচার বিশাল একটা বেলুনে একটা সুঁচ বা পিন ফুটালে যা হয়, তাই হয়েছিল। মানে, আমি একটু ভদ্রভাষায় বললাম স্যার।
---- তুই ত আজকাল ভালই লেকচার দিতে শিখেছিস মদন,
শোন, তোর রোগীটি হেলেবোরাস নাইজারের।
★ ঐ যে চুপচাপ পড়ে আছে বাহ্যিক জ্ঞাণশূন্য ভাবে, সঙ্গাহীন ভাবে, একে ডাক্তারি ভাষায় বলে Stupor,
সাধারণত ব্রেনে আঘাত লেগে এই রকম হয়, যদি ব্রেনে অাঘাত লেগে হয়, তাহলে তাকে বলা হয় Concussion, ---- Stupor due to concussion,
তবে তোর এই রোগীর ব্রেনে আঘাত লেগে যখন হয় নি,
তাহলে জেনে রাখ---
অনেক সময় টাইফয়েড, ম্যালেরিয়া, ডেঙ্গু, বা কোন ভাইরাল ফিভারে ব্রেনে বেশী তাপমাত্রা বাড়ার জন্য, আর হাইপোথ্যালামাস সেই তাপমাত্রা ঠিকমতন কন্ট্রোল না করতে পারলেও এমন হয়। তোর রোগীটার ঐ আনকন্ট্রোলড হাই ফিভার থেকে এই Stupor এসেছে।
★ আর ব্রেনের নার্ভ রিলেে কন্ডাকটিভিটি তাদের সচলতা হারানোয় রোগী ঐ রকম ডীপ ঘুমের মধ্যে চলে যায়,৷ ডাক্তারীতে বাহ্যিক জ্ঞাণশূন্য এই রকম ডীপ ঘুমে চলে যাওয়াকে Coma( কোমা) বলে,
★ প্রায়ই আপনমনে বিড়বিড় করে কথা বলে, বা ভুল বকে, একে বলা হয় ---- Delirium,
সাধারণত হাই ফিভারে ব্রেনের মধ্যে বেশী রক্তচছাসে ব্রেন সেলে যে ইরিটেশন হয়, তার জন্য এই রকম ভুল বকে ,
★ ব্রেনের এ্যাকটিভিটি বা কার্যক্ষমতার কমে যাওয়ার সাথে সাথে শরীরের অন্যান্য অর্গানগুলিও দূর্বল হয়ে পড়ে, যেমন--- হার্ট, লাঙ্গস, লিভার, কিডনী, ইত্যাদি।
তোর এই রোগীর কিডনী ফাংশন ডিসটার্ব হয়েছে, বা দূর্বল হয়েছে, তাই পা ফুলছে , আর প্রস্রাব কম হচ্ছে,
★একদিকে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকছে, কিছুই তার ভাল লাগার অনুভূতি নেই = উদাসীনতা,
বা Indifference ( Ign, Hell, P A, Sep, etc),
★ বিকাল ৪ টা থেকে ৮ টার মধ্যে রোগলক্ষন বাড়ে, এই লক্ষনটি শুধু লাইকো নয়--- হেলিবোরাসেরও একটি লক্ষন, যদিও লাইকোর মতন স্ট্রং নয়,
( বিকাল ৪ টা থেকে ৯টা পর্যন্ত বৃদ্ধি --কলোসিন্থ, ম্যাগ ফস)
★ অজ্ঞান অবস্থায় বাম হাত, বা বাম পা, বা যে কোন হাত নড়ে-- হেলিবোরাসে আছে,
★ হেলিবোরাসে শীত বেশী,
★ ব্রেনে এফেক্টের সাথে কিডনীও এফেক্ট করে,
★ হেলিবোরাসে পায়খানা শক্ত হয় না, পাতলা বা আমাশয়ের মতন মল হয়,
★ কোন প্রশ্ন করলে অনেকক্ষন পরে কিছু উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করে, কারন-- ব্রেনের কমপ্রিহেনশন পাওয়ার বা অনুধাবন ক্ষমতা কমে যায়,
রেপার্টরীতে রুবরিক দেখবি--
Answers, reflecting long,

পর্ব-----৩৭

মদন---- স্যার অনেক সময় দেখা যায়, সঠিক ঔষধ নির্বাচন হলেও রোগ কমে না, বরং আরও বেড়ে যায়, কারনটা কি?
রবার্ট----- কারন অনেক অাছে, তবে আপাততঃ কয়েকটি মেইন
কারন বলছি,
১) সঠিক ঔষধ নিজে ভাবলেও হয়ত মোটেই ঔষধটি সঠিক হয় নি, ফলে রোগের প্রকোপ যেমন বাড়ছিলো, তেমনি বাড়তেই থাকবে।
যেমন ঘা পাঁচড়া ভুল ঔষধে বাড়তে থাকলে অনেক হোমিওপ্যাথ রোগীকে বলে --- ধৈর্য ধরো, তোমার শরীরের সব পয়জন বেরিয়ে যাচ্ছে,
২) যখন রোগের গতি জীবনী শক্তির গতির থেকে দ্রুত গতিতে চলে বা বাড়ে, সেখানে ঔষধ কাজ করার মতন সময় ও সুযোগ পায় না,
যেমন--- ভাইরাল ফিভারে-- রক্তে জীবানু বা ভাইরাসদের শরীর থেকে ছেড়ে দেওয়া টক্সিনের মাত্রা এত অধিক হয় যে জীবনীশক্তি প্রাণপনে লড়াই করে পেরে উঠছে না,
যেমন--- ক্যান্সার জাতীয় দুষ্ট রোগ, যা ঘোঁড়ার লাফানির মতন দৌড়াতে থাকে, জীবনীশক্তি তার সাথে লড়াইয়ে পেরে উঠছে না, তার ঘাড় ধরে মাথা নোয়াতে পারছে না,
৩) যেখানে ঔষধ কাজ করতে পারবে না, কারন---রোগটি ঔষধে সারার নয়, অপারেশান করতে হবে ---
যেমন--বড় হাইড্রোসিল,
গল ব্লাডার পাথরে ভর্তি, কিডনির মেডুলাতে ২০ মিমি সাইজের বড় একটা ক্যালসিয়াম অক্সালেট পাথর বসে আছে এবং কোনদিনই তা ঔষধ গুঁড়ো হবে না,
৪) যখন রোগীর ইমিউনিটি পাওয়ার বা সাসসেপটিবিলিটির থেকে বেশী ক্ষমতা সম্পন্ন, অর্থাৎ অনেক বেশী শক্তিসম্পন্ন ডোজ দেওয়া হয়, যেমন- একটা টি বি রোগীকে সাইলিসিয়া C M ১০ ডোজ দেওয়া, ইত্যাদি,
৫) যখন রোগীর কোন একটি ভাইটাল অর্গান নেই,
যেমন--- একটি কিডনি নেই, একটি ফুসফুস নেই, হার্টের একটা ভালভ নেই, ইত্যাদি,
৬) যখন রোগী খুব হাইপারসেনসিটিভ বা ইডিওসিনক্রেটিক, তখন তাকে যে ঔষধই দেওয়া হোক না রোগ বৃদ্ধি হবেই ,
৭) নিউরোটিক বা হাইপোকনড্রিয়াক, বা রোগ রোগ বাতিকে ভোগা রোগীদের যে সঠিক ঔষধই, সঠিক পোটেনসিতে, সঠিক মাত্রায় দেওয়া হোক না কেন, সে প্রত্যেকবার বলবে --- তার সব রোগ বেড়ে গেছে, বা বেড়ে যাচ্ছে, ---- ফলস এ্যালিগেশন,
আরও অনেক পয়েন্ট আছে, আপাতত কয়েকটি বললাম,
পরে আবার অন্য কোন একদিন আরও পয়েন্ট বলবো।

পর্ব-----৩৮

মদন---- স্যার অনেক সময় দেখা যায়, সঠিক ঔষধ নির্বাচন হলেও রোগ কমে না, বরং আরও বেড়ে যায়, কারনটা কি?
রবার্ট----- কারন অনেক অাছে, তবে আপাততঃ কয়েকটি মেইন কারন বলছি,
১) সঠিক ঔষধ নিজে ভাবলেও হয়ত মোটেই ঔষধটি সঠিক হয় নি, ফলে রোগের প্রকোপ যেমন বাড়ছিলো, তেমনি বাড়তেই থাকবে।
যেমন ঘা পাঁচড়া ভুল ঔষধে বাড়তে থাকলে অনেক হোমিওপ্যাথ রোগীকে বলে --- ধৈর্য ধরো, তোমার শরীরের সব পয়জন বেরিয়ে যাচ্ছে,
২) যখন রোগের গতি জীবনী শক্তির গতির থেকে দ্রুত গতিতে চলে বা বাড়ে, সেখানে ঔষধ কাজ করার মতন সময় ও সুযোগ পায় না,
যেমন--- ভাইরাল ফিভারে-- রক্তে জীবানু বা ভাইরাসদের শরীর থেকে ছেড়ে দেওয়া টক্সিনের মাত্রা এত অধিক হয় যে জীবনীশক্তি প্রাণপনে লড়াই করেও পেরে উঠছে না,
যেমন--- ক্যান্সার জাতীয় দুষ্ট রোগ, যা ঘোঁড়ার লাফানির মতন দ্রুতগতিতে বাড়তে থাকে, ফলে জীবনীশক্তি তার সাথে লড়াইয়ে পেরে উঠছে না,
৩) যেখানে ঔষধ কাজ করতে পারবে না, কারন---রোগটি ঔষধে সারার নয়, অপারেশান করতে হবে ---
যেমন--বড় হাইড্রোসিল,
গল ব্লাডার পাথরে ভর্তি হয়ে আছে, কিডনির মেডুলাতে ২০ মিমি সাইজের বড় একটা ক্যালসিয়াম অক্সালেট পাথর বসে আছে এবং কোনদিনই তা ভাঙবে না, একটা বিশাল কিলয়েড, একটা বিশাল টিউমার, জরায়ুতে বিশাল ফাইব্রয়েড, ইত্যাদিতে সঠিক ঔষধ হলেও কাজ হবে না ।
৪) যখন রোগীর ইমিউনিটি পাওয়ার বা সাসসেপটিবিলিটির থেকে বেশী উচ্চতর শক্তির ঔষধ প্রয়োগ করা হয়,
যেমন- একটা টি বি রোগীকে সাইলিসিয়া C M ১০ ডোজ দেওয়া, ইত্যাদি,
৫) যখন রোগীর সাসসেপটিবিলিটি ভীষণ হাই, এবং উচ্চ শক্তির ঔষধ পুনঃপুন রেপিটিশন বা প্রয়োগ করার দরকার, কিন্তু তা না হয়ে অত্যন্ত নিম্ন শক্তির ঔষধ অল্প মাত্রায় প্রয়োগ হচ্ছে,
যেমন---- ব্রেন টিউমার বা অন্য কোন প্যাথলজি নেই, কিন্তু তীব্র মাথার যন্রনায় বেলেডোনা কয়েক ডোজ ৬ শক্তি, বা ০/১, কিছুই করতে পারবে না, কিন্তু 1M বা 10M, ৮ বা ১০ ডোজ অতি দ্রুত কাজ করবে।
অনুরূপভাবে পেটের মধ্যেকার কোন অর্গানে প্যাথলজিক্যাল লিজন বা ক্ষতি না থাকলে তীব্র কলিকে কলোসিন্থের সব লক্ষন থাকলেও ৩০ বা ২০০ তে অনেক সময় কাজ হয় না, এবং সেক্ষেত্রে 1M, 10M, 50M, বা CM বেশী ডোজ দিলে দ্রুত কাজ হবে। তাই এসব না জানায় ঔষধ সঠিক হলেও কাজ হয় না,
৬) যখন রোগীর কোন একটি ভাইটাল অর্গান নেই,
যেমন--- একটি কিডনি নেই, একটি ফুসফুস নেই, হার্টের একটা ভালভ নেই, ইত্যাদি কেসে রোগীর সাসসেপটিবিলিটি কম থাকে, তাই ঔষধের কাজ শরীর ঠিকমতন নিতে অক্ষম হয়, তাই ঔষধ সঠিক হলেও দ্রুত বা যথাসময়ে কাজ পাওয়া যায় না,
৭) যখন রোগী খুব হাইপারসেনসিটিভ বা ইডিওসিনক্রেটিক, তখন তাকে যে ঔষধই দেওয়া হোক না রোগ বৃদ্ধি হবেই , তাই এসব ক্ষেত্রেও ঔষধ সঠিক হলেও ঠিকমতন কাজ পাওয়া যায় না, বরং বৃদ্ধি দেখা যায়,
৮) নিউরোটিক বা হাইপোকনড্রিয়াক, বা রোগ রোগ বাতিকে ভোগা রোগীদের যে কোন সঠিক ঔষধ, সঠিক পোটেনসিতে, এবং সঠিক ডোজে দেওয়া হলেও সে প্রত্যেকবারই বলবে --- তার সব রোগ বেড়ে গেছে, বা বেড়ে যাচ্ছে,
৯) ঔষধটি জেনুইন বা সঠিক আছে তো ? যেমন একজন চিকিৎসক দিতে চাইছে চায়না, ওষুধের গায়ে লেখাও আছে চায়না, কিন্তু সেটা কি আসলে চায়না ( China) ?
কারন,ঔষধটি বড় শিশি থেকে ঢেলে ছোট শিশিতে ভরার সময় তাড়াহুড়ো বা বেখেয়ালে কর্মচারী হয়ত সিনা ঢেলে দিয়েছিল, তাহলে রোগী আদৌ চায়না পেল না, পেল সিনা ( Cina) , এইজন্যই আমরা জেনুইন বা বড় রেপুটেড বা অথেনটিক দোকান থেকে সবসময় ঔষধ ক্রয় করতে বলি।
যেমন কিছুদিন আগে আমি লক্ষ্য করেছিলাম ঢাকার একজন ঔষধ সাপ্লাই দেওয়া ব্যবসায়ী প্রায় 250 জন চিকিৎসককে বা মানুষকে ইউপেটোরিয়াম পার্ফোলিয়েটামের জায়গায় ইউপেটোরিয়াম পারপিউরিয়াম বিক্রি করেছিলো। কারণ সে ভুল করে ঔষধ তোলার সময় ইউপেটোরিয়াম পার্পোরিয়াম তুলেছিল, তার মানে -- গোড়ায় গলদ হয়েছিলো। অর্থাৎ অর্ডার লেখার সময় সে মনে হয় ক্যাটালগ দেখে লেখার সময় Perf. র জায়গায় Perp. লিখেছিলো, হয়তো Perp. নামে যে আলাদা একটি ঔষধ আছে তা সে সে জানতো না।
হ্যাপকো কোম্পানি একবার আমাকে ম্যাঙ্গেনাম এ্যাসেটিকামের জায়গায় ম্যাগনেসিয়াম এ্যাসেটিকাম দিয়েছিলো।
তাই কোন কোন ক্ষেত্রে এমন সব ঘটনা ঘটে আছে কি না, তাই বা কে জানে?
সুতরাং এমন সব ক্ষেত্রে কিন্তু আসলে ঔষধটাই সঠিক নেই,
তাহলে সঠিক ঔষধ না পড়লে ত রোগ বাড়বেই, যদিও চিকিৎসক জানছে তার ঔষধ সঠিক, ইত্যাদি।
আরও অনেক পয়েন্ট আছে, আপাতত কয়েকটি বললাম,
পরে আবার অন্য কোন একদিন আরও পয়েন্ট বলবো।

পর্ব------- ৩৯,
মদন -----স্যার, মুখ দেখে নাকি কিছু কিছু রোগ ডায়াগনোসিস করা যায়, ২/৪ টি উদাহরণ দেবেন?
রবার্ট-----
১) যখন দেখবে চোখ দুটি বড় বড় হয়ে বাইরের দিকে ঠেলে বেরিয়ে যাচ্ছে, রোগীর মুখ দেখে মনে হবে তার মধ্যে কোন এক্সপ্রেশান বা অনুভূতি নেই,
----- এই রকম মুখচ্ছবির নাম---
থাইরোটক্সিকোটিক ফেস,
জিজ্ঞাসা করলে বা অবজার্ভ করলে তার মধ্যে থাইরোটক্সিকোসিস রোগের অন্যান্য সিমপটমস পাওয়া যাবে, যেমন ----চেহারা শুকিয়ে যেতে থাকে, অর্থাৎ দিনদিন রোগা হতে থাকে, ক্ষুধা বেড়ে যায় , হাত পা কাঁপতে থাকে, হাতের তলা, পায়ের তলায় ঘাম বেশী হয়, মানসিক অস্থিরতা বেড়ে যায়, মনে সবসময় নানা রকম উদ্বেগ থাকে, পালস রেট বেড়ে যায়, ইত্যাদি।
২) যখন পূর্ণিমার চাঁদের মতন মুখটা পুরো গোল হয়ে যায়,
----- তখন জানবে তার নাম কুশিংগয়েড ফেস,
এই সব রোগীদের ঘাড়ের পিছন দিকটায় বেশী ফ্যাট জমে, যাকে বলা হয়---বাফেলো লাম্প, অনেক মেয়েদের দাড়ি,গোঁফ গজাতে থাকে, মুখে ব্রন হয়,
৩) যখন মুখটা ফোলাফোলা থাকে, চোখের পাতাগুলিও ফোলা থাকে, গায়ের চামড়ার রঙ কতকটা মোমের মতন সাদাটে হয়ে যায়, এবং সিমপটমসগুলি মধ্যবয়সী মহিলাদের মধ্যেই বেশী হয়,
তাহলে জানবে তার নাম মিক্সিডিমেটাচ ফেস,
এদের শরীরের চামড়া মোটা ও রুক্ষ হয়ে যায়, মাথার চুল পড়ে মাথা হালকা হতে থাকে, শরীরের তাপমাত্রা ও পালস রেট কমে যায়, শরীরে শীতভাব বাড়ে, ইত্যাদি,
৩) যখন দেখবে ----নীচের চোয়ালটা বেশ বড় এবং ঝুলে গেছে , যার জন্য দেখতে অনেকটা গরিলা বা শিম্পাঞ্জীর মতন লাগে, ডাক্তারি ভাষায় এই ঝুলে যাওয়া চোয়ালকে বলা হয় --- বুলডগ জ,
এদেরকে বলা হয় এ্যাক্রোমেগালি ফেস,
এদের হাত, পা, বেশ বড় বড় হয়,
পিঠের শিরদাঁড়া বাইরের দিকে বেঁকে যায় ( কাইফোসিস) ,
৪) যখন দেখবে কোন রোগীর মুখের মধ্যে কোনো এক্সপ্রেশান বা ভাবলেশ নেই, কারণ মুখের মাংসপেশিগুলো শক্ত হয়ে গেছে, মনে হয় যেন একটা মাস্ক পরে আছে,
এই রকম মুখমন্ডলকে বলা হয় পারকিনসোনিয়ান ফেস, পারকিনসন্স ডিজিজে মুখের মাংসপেশী শক্ত হয়ে মুখের এই অবস্থা হয়,
এই রোগে রোগী ঠিকমতন হাঁটতে পারে না ---সামনের দিকে হাঁটতে গেলে পা গুলি ব্যালেন্স হারিয়ে ধপাস ধপাস করে পড়ে, মনে হয়-- রোগী দৌড়াচছে,
৫) যখন দেখবে- চোখগুলি ভিতরে ঢুকে আছে , নাকটা ছোট্র এবং ভীষণ চ্যাপ্টা হয়ে ভিতরে ঢুকে গেছে,
তখন জানবে তার নাম মঙ্গোলিজম ফেস।
এদের হাতের তালুতে বেশী দাগ হয় না, কেড়ে আঙুলটা বেশী বেঁকে যায়,
৬) যখন দেখবে হাত, পা, মুখ, নাক, কান ইত্যাদি খুব ঠান্ডা, কিন্তু ঠোঁটটা উজ্জ্বল, হালকা শ্বাসকষ্ট থাকে, মাঝে মাঝে কাশির সাথে রক্ত উঠতে থাকে,
কখনও কখনও স্বরভঙ্গও থাকতে পারে,
জানবে তার নাম--- মাইট্রাল ফেস,
৭) যখন দেখবে ----মুখটা ফোলা ফোলা, দেখতে বোকা বোকা, ঠোঁটটা মোটা, জিভটা বেশ বড় এবং শুধু বের করে আর ঢুকায় , মুখ দিয়ে প্রায়ই লালা গড়িয়ে পড়ে,
জানবে তার নাম---ক্রিটিনাস ফেস,

পর্ব---- ৪০
★ মদন---- স্যার, রেপার্টরীতে কোন লক্ষন কোথায় দেখবো, মাঝে মাঝে যদি বলে দেন, তবে বড়ই উপকৃত হই--
রবার্ট---- ঠিক আছে বল মদন,
তবে আমি সব কেন্টের রেপার্টরীতে কোথায় আছে পেজ নং দিয়ে বলছি ---
--- তবে আজ মানসিক লক্ষনের উপরেই বলেন স্যার,
★ মদন---একটা লোক, কোন কাজকর্ম করে না, অথচ রাতদিন অবাস্তব, অাকাশ কুসুম কল্পনা করে
রেপাটরীতে কোথায় কি দেখব?
---- Theorizing---Page---87,
★ মদন--- একজন রোগী মোটেই কথা বলতে চায় না,
----Talk, indisposed to---86,
★মদন---জিনিসপত্র ছিঁড়তে চায়?
---Tear things--- 87
★ মদন--- রোগের কথা চিন্তা করলে বা ভাবলে রোগ বাড়ে?
---Thinking, complaints of agg---87,
★মদন---- রোগীর জিনিসপত্র যদি অন্যেরা ঘাঁটাঘাঁটি করে, আর সে ঠিক জায়গায় না পায়, তাহলে অস্থির হয়ে পড়ে, ছটফট করতে থাকে?
--- Rest, can not, when things are not in proper place,
★ মদন--- খুব অহংকারী?
---- Egotism---39,
★ মদন--- সব সময় ভাবে সে মুজিবর রহমান, সে ভবিষ্যতে দেশের জন্য অনেক কিছু করবে
---Delusions--- great person he is---26,
★ মদন--- কোন আত্মীয়ের বাড়ীতে যেতে চায় না, তাদের ভাল লাগে না, তাদের ব্যাপারে কোন আগ্রহ নেই,
---Indifference --- relations to----55,
★ মদন---কারুর উপরে যদি প্রচন্ড ঘৃণা জন্মানো রাগ হয়ে তারপর থেকে কোন রোগের উৎপত্তি হয়?
----Indignation, bad effects following, ----55,
★ মদন---- কিছু লিখতে যাচ্ছিলো কেউ, কিন্তু যেই কাগজ আর কলম নিলো অমনি ভুলে যায়,
---Memory, weakness of ---write for what is about to---65,
★ মদন--- কম্পিউটার চালানো, লেখাপড়া করা, বই পড়া, লেখা, এসব কাজ একদম করতে চায় না?
---Work, aversion to mental---95,
★মদন---রোগের কথা বলতে বলতে হাউ হাউ করে কাঁদতে আরম্ভ করে,।
-----Weeping---telling of her sickness when---94,
★ মদন---- একটা বাচ্চা দেখি নিজের গালে নিজেই চড় মারে,
--Striking--- himself---84,

পর্ব-------৪১
মদন ---- স্যার, আজ একটু প্লাটিনা ঔষধ টি নিয়ে আলোচনা করুন,
রবার্ট--- এত ঔষধ থাকতে হঠাৎ প্লাটিনা কেন মদন?
মদন---- স্যার, এই লকডাউনের বাজারে যখন মানুষের হাতে টাকা পয়সা কমে যাচ্ছে, ঠিক তখনই পৃথিবীর সবচেয়ে মূল্যবান ধাতু প্লাটিনা নিয়ে আমাদের হোমিওপ্যাথিক ডাক্তারদের মধ্যে বড্ড কচ কচানি চলছে, তাই এই ঔষধটা সম্বন্ধে খুব ভালো করে জানতে চাই
রবার্ট----কোন ডাক্তাররা কচকচানি করছে মদন ?
মদন-- মাষ্টার ডাক্তার আছে স্যার কিছু, মানে মাষ্টারিটা মুখ্য,
আর গৌণ কাজ হচ্ছে--- আপনাদের মতন লোকদের প্রেসক্রিপশন করা,
রবার্ট---- ও, বুঝলাম, কিন্তু মাস্টার ছাড়া আর কারা প্লাটিনার কথা বলছে?
মদন--ঐ মাস্টার ছাড়া আসল ডাক্তাররাও অাছে স্যার, তারা কেউ কেউ ডাইরেক্ট নিজেদের পোস্টে প্লাটিনা সম্মন্ধে পড়াচ্ছেন, আবার পর্দার আড়াল থেকে অন্য চিকিৎসক মারফত আপনার পোস্টে প্লাটিনার তথ্য সরবরাহ করছেন ,
রবার্ট----তা ভালো ব্যাপার তো , কোন সিমপটমসের উপরে তারা জোর দিচ্ছেন মদন?
মদন---- ঐ যে স্যার-- ---কাস্টিং অফ্ পিপল এ্যাগেনস্ট হার উইল, (Casting off-- people against her will,)
এই একটি সিমপটমকেই তারা বেশী গুরুত্ব দিচ্ছেন
রবার্ট----এর কথাটির মানে কি জানিস মদন, মানে হচ্ছে ---কোন লোক তার মতের বিরুদ্ধে গেলে সে তাকে পরিত্যাগ করে, মানে আর সম্পর্ক রাখে না বা রাখতে চায় না,
কিন্তু, মদন--- এই সিমপটমটি তো প্লাটিনা ছাড়া, লাইকো, প্যালেডিয়াম, ইত্যাদি ঔষধেও আছে,
মদন--- তারা প্লাটিনায় জোর দিচ্ছে, কারন তারা সিন্থেসিস রেপার্টরীটা বেশী পছন্দ করে, সেখানে একটাই ঔষধ আছে--প্লাটিনা,
আর প্রসঙ্গত উঠেছে আপনাকে নিয়ে, আপনি ---
ফেসবুকের বন্ধুদেরকে হঠাৎ হঠাৎ যাকে খুশী ব্লক করেন সেই সিমপটমটাকেই এনারা এই রুবরিক হিসাবে ধরে আপনার জন্য প্লাটিনা সিলেকশন করতে চায়-----
অর্থাৎ, নিজের ইচ্ছার বিরুদ্ধে গেলে তাকে পরিত্যাগ করে,এই হিসাবে ধরতে চাইছে,
মানে, হঠাৎ হঠাৎ আপনি মানুষজনকে পরিত্যাগ করছেন,
তাই Cast off--- people, against her will ----Platina,
ধরা হবে এবং আপনার জন্য সঠিক প্রেসক্রিপশন হিসাবে গণ্য করা হবে,
রবার্ট ---কিন্তু মদন,
সব রেপার্টরীতে এবং সব মেটিরিয়াতে তো এই সিমপটমটার সাবজেক্টকে হার (Her) বলা হয়েছে, হিম ( Him) ত কোথাও বলা নেই, অর্থাৎ সব বইয়ে তো স্ত্রী লিঙ্গের কথা বলছে, কিন্তু আমি ত ----
মদন--- এত সব ধরলে হবে না স্যার, পুরুষদের ক্ষেত্রেও ব্যবহার করা যাবে , এরকম কোন কঠোর নিয়ম নেই যে শুধু মহিলাদের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য হবে,
রবার্ট---- তা ঠিক, তবে মদন,ঐ স্কুল মাস্টার মশাই স্কুলে মাস্টারি করার ফাঁকে একটু শখের হোমিওপ্যাথিক করছেন, কাউকে রোগী পাচ্ছেন না বলে আমাকে একটু রোগী বানিয়ে প্লাটিনা খেতে উপদেশ দিয়েছেন,
ছেড়ে দাও ওনার কথা, আর কে কি বলছে?
মদন---- কিন্তু স্যার, Cast off, against her wil
যে রুবরিকটির সোর্স, আসল মানে, বা প্রয়োগ বিধি, ইত্যাদি যা সেই মাস্টারকে দেখাতে বলেছিলেন, সে বেচারা ভয়ে অংশগ্রহণ করেনি, তবে অন্য দুই এক জন জ্ঞাণী হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসকরা অংশগ্রহণ করেছিলেন, তাদের কমেন্টস থেকে আমি বেশ কিছু তথ্য জানতে পেরেছি।
আবার আমাদের অন্য একজন হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসক যে কলেজে ফার্স্ট হয়েছিলেন, তার ফেসবুকেও এই সিমপটম টি নিয়ে একটি পোস্ট দেখেছিলাম --- সেখান থেকেও অনেক কিছু জানতে পারলাম। তবে দুজনের পোস্টের লেখাগুলি হুবুহু এক, তাই এরা পরীক্ষার হলের উঠতি ছেলেদের মতন আবার টোকাটুকি করেছে কি না, বলা মুস্কিল,
তবে ফেসবুকে যে পোস্ট দিয়েছে সে মনে হয় সেই মাস্টারকে করা আপনার প্রশ্নগুলো জানতে পেরেছিলো,
তাই তার উত্তর দেওয়ার খুবই ইচ্ছা হওয়ায় ---
একটি পোস্টে ইনডাইরেক্টলি সে যে এসব জানে, তার যে নলেজ আছে, তার যে বইপত্র আছে, এবং সে যে পড়াশোনা করে, তা দেখানোর জন্য সুন্দর করে রেফারেন্স দিয়ে উত্তর গুলো দিয়েছে, এবং তা আমি মন দিয়ে পড়েছি , -----
কারণ, তার নামের নীচে লেখা ছিল সে পরীক্ষায় প্রথম হয়েছিলো,
রবার্ট---- তার কি লেখা দেখলে মদন?
মদন--- আমি বই মিলিয়ে দেখেছি স্যার, সে যা বলেছে সব ঠিক, বই থেকেই রেফারেন্স দিয়ে বলেছে,
ঐ যে Casting off , against her will, সব জায়গাতেই লেখা আছে,
স্যার, এইভাবেই তো আমাদের সব জায়গা থেকে শিখতে হচ্ছে, আজকাল তো আপনি আর কিচ্ছু শেখাচ্ছেন না , আমাকে নিয়ে এর মধ্যে কোন আলোচনা করেছেন? মনে করে দেখুন, বহুদিন হয়ে গেছে ----আমাকে নিয়ে কোনো আলোচনায় বসেননি, এটা অনেকেরই অভিযোগ,
তবে হ্যাঁ স্যার, ঐ ডাক্তার বাবুর মাথায় বুদ্ধিও আছে, সঠিক উত্তর তিন চারটি বই খুলে দেখাতে পেরেছে বলে সে তার সাকসেস বা ভিক্টরি বোঝাতে তার পোস্টের শেষে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ভেংচি কাটা আঙ্গুল দেখানো একটি ছবিও পোস্ট করে দেখাতে চেয়েছে --- কেমন দিলাম!
এবার আপনার শিক্ষা হয়েছে তো ? আপনি একটা প্রশ্ন করে ভাবছিলেন -- কেউ উত্তর দিতে পারবে না, কিন্তু পারলো তো? উত্তর দিল তো? আপনি সবাইকে এক দলে ফেললে হবে ? বিশ্ববিদ্যালয়ে ফার্স্ট, সেকেন্ড হওয়া কি ছেলে খেলা ভাবেন?
চমকে দেওয়া লোক ও আছে স্যার,
রবার্ট --- মদন এই যে গল্প করলি, এর মধ্যে প্লাটিনার আসল বা মূল লক্ষন আছে,
মদন----সেটা কি ব্যাপার বুঝলাম না তো স্যার?
রবার্ট---মদন, ১) পরীক্ষায় প্রথম হওয়া সেটা ফেসবুকের পোস্টে পারপাজফুলি দেখানো, আর ২) আর এই যে ডোনাল্ড ট্রাম্পের আঙুল দিয়ে ভেংচি কাটানো,মুখ বাঁকিয়ে ছবিটা দিয়ে---
আমি কেমন দিলাম,
পারলাম তো?
বুঝানো, বা শো করানো---- এই হল প্লাটিনা,
যাক--- তোকে প্লাটিনা বোঝাতে আমার আর বেশী সময় লাগবে না তাহলে ,
কারন,প্লাটিনার মেইন সিমপটম যে ইগোটিজম বা অহংকার, আত্মম্ভরিতা, তা তোর বলা গল্পের মধ্যেই হাতে কলমে দেখিয়ে দিলাম,
তবু সংক্ষেপে কিছু বলি,
দেখ মদন----
প্লাটিনা ধাতুটি ১৫৫৭ সালে দঃ আমেরিকার জুলিয়াস স্কালিজার পানামা থেকে মেক্সিকোর খনি অঞ্চলের মধ্যে প্রথম সন্ধান পায়,
কিন্তু ১৭৪৬ সালে স্পেনের এ্যান্টোনিও উল্লোর আফ্রিকা থেকে স্পেনে ধাতুটি প্রথম নিয়ে আসে, রুপার মতন কতকটা দেখতে বলে তারা নামকরন করেন প্লাটিনা, মানে---স্পানিশ ভাষায় যা রুপার মতন চকচকে,
পরে অবশ্য রাশিয়ার সাইবেরিয়া অঞ্চলে প্রচুর প্লাটিনার সন্ধান পাওয়া গেছে, হ্যানিম্যানের আগে সোনা, রুপা এবং অন্যান্য ধাতু থেকে ঔষধ তৈরি ও তার ব্যবহারের প্রক্রিয়া থাকলেও এই ধাতু যেহেতু আগে আবিষ্কার হয়নি,তাই চিকিৎসা শাস্ত্রে এর কোন প্রচলন ছিল না,হানিমানই সর্বপ্রথম তার প্রধান দুই শিষ্য ডাঃ স্টাফ এবং ডাঃ গ্রসকে এই ধাতুটি মনুষ্য শরীরে পরীক্ষা করার দায়িত্ব দেন ,কিন্তু সমস্যা হয়েছিল এই ধাতুকে সহজে চূর্ণ করা সম্ভব হচ্ছিল না,
কিন্তু হ্যানিম্যান রসায়ন শাস্ত্রে পন্ডিত ছিলেন বলে হাইড্রোক্লোরিক অ্যাসিড এবং নাইট্রিক অ্যাসিড দিয়ে গলিয়ে তারপর তা ডিসটিল্ড ওয়াটার এর সাথে মিশিয়ে পাত্রটির তলায় পড়া প্লাটিনার সেডিমেন্ট নিয়ে শুকিয়ে তার নিজস্ব টাইট্রেশন অর্থাৎ বিচূর্ণন পদ্ধতিতে 3x করে সামনের দিকের পোটেনসিতে এগুতে থাকেন,
মদন, এই ঔষধ পর্যালোচনা করলে হোমিওপ্যাথিক সব ঔষধ এর মতন কিছু শারীরিক এবং মানসিক লক্ষণ দেখতে পাই,
প্রথমে মানসিক লক্ষণের কথাই বলা যাক, কারণ----
মানসিক লক্ষণই এই ঔষধের প্রধান প্রয়োগক্ষেত্র,
মাত্র দুইটি শব্দ দিয়ে এদের মানসিক লক্ষন বা মানসিক অবস্থা বোঝানো যেতে পারে ---
১) হিস্টিরিয়া বা হিস্টিরিয়াল অ্যাটাকস -----
আজকাল অবশ্য হিস্টিরিয়া শব্দের ব্যবহার হয় না , হিস্টিরিয়া বলতে যে সব লক্ষণ বোঝানো হতো, এখন প্র্যাকটিস অফ মেডিসিন এ তা বলা হয় কনভার্সন ডিজঅর্ডার , অর্থাৎ অর্গানিক কোন কারন ছাড়াই একজন মানুষের ব্যবহারের অস্বাভাবিকতা।
কেন হয়? ------ মনের অবদমিত ইচ্ছা বা আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলনের জন্যই ব্যাপারটা হয়।
ব্যাপারটা স্ত্রীলোকদের মধ্যেই বেশী হয় , তাই আগে ভাবা হতো মেয়েদের জরায়ু সংক্রান্ত ব্যাপারের জন্য এসব হয়,
আর জরায়ু কে ল্যাটিন ভাষায় বলা হয় হিস্টারো, তাই হিস্টারো থেকে অরিজিন ভেবে হিস্টিরিয়া নাম দেওয়া হয়েছিলো।
এখন দেখা যাক--- প্লাটিনার ক্ষেত্রে হিস্টিরিয়ার বা হিস্টিরিক্যাল কি ধরনের সিমপটমস পাওয়া যায়---
* মন মেজাজ সব সময় খারাপ থাকে,
* হঠাৎ হঠাৎ কান্নাকাটি করে, * সামান্য কারণেই অপমান বোধ করে ,
* সে যেন নিজের ফ্যামিলির মধ্যে নেই, এই রকম ভাবে,
* সব লোকই শয়তান বা বদমায়েস,
* হঠাৎ হঠাৎ বুক ধরফর করে, * হঠাৎ হঠাৎ হাত পা কাঁপতে থাকে,
* হঠাৎ করে শ্বাসকষ্ট হতে পারে, * হঠাৎ হঠাৎ মাথা ব্যাথা হতে পারে,
* ব্যথার জায়গাটা অবশ হয়ে যায়, বা ঝিঁঝিঁ করতে থাকে,
* শরীরের কোথাও কোথাও হঠাৎ হঠাৎ অসাড় বোধ হয়ে যায়,
* সব জিনিসকে যেন ছোট ছোট মনে হয়, ইত্যাদি,
মানে, এক কথায়--- আবোল, তাবোল হরেক রকম যখন তখন যে কোন সিমপটমস বলতে পারে, মনে হবে -- সাংঘাতিক একটা কিছু, কিন্তু আসলে কিছু নয়, অর্থাৎ শরীরের কোথাও কোন রকম অর্গানিক বা স্ট্রাকচারাল কোন লিজন ( lesion) , বা ক্ষতি হয়নি, বা নেই।
তাই-- সব রকম পরীক্ষা নিরীক্ষা করলে, বা কোন ইনভেস্টিগেশনস হলে শরীরের কোন অর্গান বা যন্ত্রপাতি তে কোন দোষ পাওয়া যায় না, বা যাবে না।
২) পারভার্সন, অর্থাৎ মেন্টাল বা মানসিক বিকৃতি, কি বিকৃতি? যা সাধারণ মানুষের মধ্যে স্বাভাবিকভাবে থাকে না, বা থাকা উচিত নয় ,
---যেমন স্বাভাবিক জীবনযাত্রার বিকৃত অবস্থা ,বিকৃত চিন্তাধারা,মনের বিকৃত রূপ যা সামাজিকভাবে সবার কাছে অস্বাভাবিক মনে হয়, অসুস্থ প্রবৃত্তির বলে মনে হয়, যৌন জীবনেও বিকৃতি --
যাকে বলা যেতে পারে কাম বিকৃতি বা যৌনবিকৃতি--- যেমন হোমো সেকস, সডোটমি, ইত্যাদি,
প্রুভিংয়ের সময় এবং পরে অনেকের ক্লিনিকাল অবজার্ভেসনে দেখা গেছে ---
এই সব পারভার্সন সিমপটমসগুলি বেশীরভাই স্ত্রীলোকদের ক্ষেত্রে পাওয়া গেছে বা দেখা গেছে,
তাই প্লাটিনা স্ত্রীলোকদের জন্যই একটি মহৌষধ, এবং এর উপযুক্ত ব্যবহারিক ক্ষেত্র তাই স্ত্রীলোকদের উপরেই বেশী ।
আর সেইজন্য সব বাংলা বইয়ে রোগিনী, আর ইংরেজী বইয়ে হার (her), শব্দ লেখা আছে,
এখন দেখা যাক কি ধরণের সেই সব মানসিক বিকৃতি ?
এই ঔষধের বিকৃতিগুলি অরাম মেটালিকামের একেবারে বিপরীত,
অরামে আমরা কি পাই,?
--- আমি পারবো না,
--আমার দ্বারা হবে না,
--আমি বাঁচবো না,
--আমি সবার সাথে মিশতে পারবো না ,
--আমি মনে হয় সবার থেকে গরীব, অভাগা,
--সবাই মনে হয় আমাকে ঘৃণা করে,
--সবাই মনে হয় আমার থেকে অনেক বেশী জানে , অর্থাৎ,
একটা pessimistic মনোভাব,
একটা inferiority complex,
একটা হীনমন্যতা বোধ, সর্বদা তাকে কুরে কুরে খায়,
আর প্লাটিনার ক্ষেত্রে ঠিক তার উল্টো- সোনার থেকে তো অনেক দামী এবং মূল্যবান এই ধাতু, তাই তার পারভার্সনগুলি,
তার মানসিক বিকারগুলি,
তার অবমূল্যায়নগুলিও একটু দামী হবে না?
কি দেখতে পাওয়া যায় এই সব রোগিনীদের মধ্যে?
★উদ্ধত, (Arrogant, Haughty),
★অহংকারী ও আত্মম্ভরীতা ,
( Prideful, Over-estimation of one's self) ,
★নিজেকে উন্নত দেখাতে চায়, সবার থেকে সব দিক দিয়ে বড় দেখাতে চায়, ( Exalted, Superiority Complex),
★অন্যকে অবজ্ঞা করে, অপমান করে,
ঘৃণা করে,
তাচ্ছিল্য করে ( Contemptuous, Scorns)
★ সবাইকে তার থেকে below standard, বা inferior quality মনে করে, ( Superiority complex),
★ সর্বদা নিজেকে অতি সুন্দরী, স্বাস্থ্যমতী ভাবে, বুদ্ধিমান ভাবে,
( Overestimation about her health, beauty, and intelligence),
-----অাসলে মনের মধ্যে থাকা বা উদিত হওয়া এই সব ঘৃণা, অবজ্ঞা, তাচ্ছিল্যতা, অহংকার, ইত্যাদি সবই এক ধরনের পার্সোনালিটি ডিসঅর্ডার, বা কিছুটা প্যারানয়েড সিজোফ্রেনিয়ার মধ্যে পড়ে,
আর তাই এদের মনে বড় অহংকার থাকে, নিজেকে খুব বড় আর সবাইকে নগন্য মনে করে, ধরাকে সরা জ্ঞান করে, নিজের কথা বলতে খুব ভালবাসে, ( Demonstrative) ,
( Undemonstrative--- Ign),
এরা জাঁকজমক দেখাতে ভালবাসে, ভাল ভাল ড্রেস, জুতা, ইত্যাদি পরে মানুষ কে দেখাতে ভালবাসে, কোন অজুহাতে বাড়ীতে পার্টি দেওয়া, বা অনুষ্ঠান করা ভালবাসে,
ভাবে--- তাতেই তার দাম, অাভিজাত্য, সবকিছু বাড়ে,
সুতরাং------
হিস্টিরিয়া এবং এই পারভারশন বা মানসিক বিকৃতই প্লাটিনার প্রধান পরিচয়,
কিন্তু একটা পিকিউলিয়ার বা অদ্ভুত বিষয় মনে রাখতে হবে--
এই ধরনের মানসিকতা কিন্তু এদের সব সময় থাকে না , মাঝে মাঝে এরা খুবই ভালো থাকে, ভালো ব্যবহার করে, মানুষকে সম্মান এবং শ্রদ্ধা করে, অর্থাৎ মানসিক দিক দিয়ে খুবই সভ্য, ভদ্র, ভালো থাকে ; কিন্তু তখন তার শারীরিক কিছু সিম্পটমস -- যেমন কোষ্ঠবদ্ধতা, মেয়েদের মাসিকের গন্ডগোল, সাদা স্রাব, ওভারিয়াল নিউরালজিয়া, ইত্যাদি বাড়তে থাকে,
আবার যখন শারীরিক সমস্যাগুলি কমে যায়, বা কমতে থাকে, তখন আবার মানসিক সমস্যাগুলি বেড়ে যায়,
তাই সব বইয়ে পরিষ্কার লেখা আছে একটি পিকিউলিয়ার সিমপটম ----
Mental symptoms appear as physical symptoms disappear and vice versa,
আমেরিকায় নিউ ইয়র্ক শহরের ডাঃ-ন্যাশ তার মেটিরিয়া মেডিকার প্লাটিনার মধ্যে একটি কেস দিয়েছেন----যেখানে এই একটিমাত্র সিমপটম ----
শারীরিক সিমপটমস ও মানসিক সিমপটমসের অল্টারনেশন বা পর্যায়ক্রম এর উপরে একজন পাগলীকে            (Insanity) , যাকে মানসিক হসপিটালে নিয়ে যাওয়ার পাকা বন্দোবস্ত হয়েছিলো, তাকে সুস্থ করতে সম্ভব হয়েছিলেন, এবং আশ্চর্যের কথা প্রথম দিন থেকেই সে সুস্থ হতে আরম্ভ করে এবং তার পরে দীর্ঘ ১৫ বছরের মধ্যে তার আর কোনরকম পাগলামো ফিরে আসেনি।
তবে এই Alternation of Symptoms, অর্থাৎ পর্যায়ক্রমিক শারিরীক ও মানসিক রোগের প্রকোপ বা আক্রমন কিন্তু ঐ আগে বলা হিস্টিরিকাল সিমপটমসেরই অন্তর্ভুক্ত ব্যাপার,
যেমন আরও বলা যেতে পারে----
Hysterical---alternate gay ness and sadness, অর্থাৎ, পর্যায়ক্রমে মনের মধ্যে আনন্দিত ও বিষাদিত ভাব,
তাই এই পর্যায়ক্রমের ব্যাপারটা থাকার জন্য এরা হাসিখুশী থাকতে থাকতে মাঝেমাঝে ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে পড়ে, এবং মৃত্যু ভয়ে কাতর হয়েও উঠে,
Alternating anaesthesia and hyperaesthesia, অর্থাৎ,
পর্যায়ক্রমে কোন রোগের অত্যাধুনিক অনুভূতি,( hypersensitivity),
আবার কোন জায়গার অবশ, বা সম্পূর্ণ অনুভূতিহীন),
মহিলাদের ভ্যাজাইনা বা ভালভা প্রদেশ তাই খুবই সেনসিটিভ হয়, সামান্য কাপড়ের স্পর্শে তার সেকস উঠে যায়, মানে যৌন উত্তেজনা হয়, ( Hyperaesthesia) ,
আবার কখনও শরীরের কোথাও ব্যথা হলে, জায়গাটা অসাড়, অবশ, নিস্তেজ হয়ে যায়, কোন সাড়, বা বোধ থাকে না ( anaesthesia) ,
মদন, সেই মাষ্টার ত আর এল না, কিন্তু যারা উত্তর দিলো, তারা শুধু Casting off----মানে প্লাটিনা বন্ধু পরিত্যাগ করে,
তাই দেখিয়ে গেলো কিন্তু আমি যেটা জানতে চেয়েছিলাম---
সেদিকে কেউ হাঁটতেই পারলো না,
তাহলে ব্যাপারটা বুঝিয়ে দিই----
Casting off, people against her will,-------- কোন লোক তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে গেলে সে তাকে পরিত্যাগ করে ---- Plat,
--- সিন্থেসিসে আছে,
তাই এত লম্ফ ঝম্ফ,
তাই আমাকে প্রেসক্রিপশন পর্যন্ত করছে,
তাহলে আমরা প্লাটিনার যা জানলাম -- তাতে যে কোন লোক কাউকে কথায় কথায় পরিত্যাগ করলে তার জন্য প্লাটিনা হয় না,প্লাটিনা দিতে গেলে all along প্লাটিনার ঐ সব মানসিক লক্ষন থাকতে হবে, ঐ সব মানসিক বিকৃতি থাকতে হবে,
যেমন-- উদ্ধত, অহংকারী, মানুষকে তাচ্ছিল্য করার স্বভাব, তাচ্ছিল্য ভাব নিয়ে তাকাবে, তাচ্ছিল্য ভাব নিয়ে কথা বলবে, সে নিজেই সব জানে, বোঝে, আর কেউ কছু জানে না, বোঝে না --- এমন আত্মম্ভরিতা ভাব,সব মানুষকে ঘৃণার চোখে দেখা , সবাইকে নোংরা মনে করা এসবের কিছু না কিছু থাকতে হবে,
--সে ভাবে সে একাই পরিষ্কার, সবাইকে দেখতে কুশ্রী লাগে, ভাবে সে একাই হ্যান্ডসাম এবং সুন্দরী, সবাইকে বেঁটে লাগে, ভাবে সে একাই লম্বা এবং সুসাস্থ্যের অধিকারী, ইত্যাদি,
এইসব সিমপটমস যদি কারুর থাকে, এবং সে যদি কথায় কথায় বিনা কারনে কাউকে পরিত্যাগ করে, তবেই একমাত্র তখনই আমরা তাকে প্লাটিনা প্রেসক্রিপশন করার কথা ভাবতে পারি, নতুবা নয়।এইজন্য আমাদের বন্ধুরা যারা ক্রনিক ডিজিজ, গাইডিং সিমপটমস, টি এফ এ্যালেন, কেন্ট, এইচ সি এ্যালেন, যাদেরই বই থেকে Casting off friends - র লেখা জায়গার কপি পাঠিয়েছে, সর্বত্র ---- তার সাথেই Arrogant, Haughty, Contemptuous, Egotism,
ইত্যাদি শব্দগুলি অঙ্গাগীভাবে মিশে আছে।শুধু Casting off, against her will আলাদা করে কোথাও লেখা নেই, যা non judicial wayতে সিন্থেসিস রেপার্টরী দিয়েছে,
কারণ--- Casting off, বা পরিত্যাগ করা in related to those adjectives-----
Contemptuous, Haughtiness, Egotism, etc,হতেই হবে, in case of Platina,
তাহলে সব না বুঝে, না জেনে,হোমিওপ্যাথির দর্শন না বুঝে,টোটালিটারিয়ান ব্যাপারটা না বুঝে মূর্খের মতন কেউ কাউকে ফেসবুকে ব্লক করলেই তার রুবরিক --- Casting off, people against her will হয় না, যারা চটপট অল্প বিদ্যা ভয়ংকরীর মতন তা মানে করবে হয়--- তারা হয় মূর্খের স্বর্গে বাস করবে, নয়তো বদ্ধ কুয়ার ব্যাঙ হয়ে সেই কুয়াটার মধ্যেই চক্কর কাটবে এবং হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসার বিষয় বস্তু, হোমিও দর্শন এখনও তারা কিছুই বোঝে নি, রোগীর মূল সিমপটমস --- পারভারশনস, ইত্যাদি ভুলে একটি মাত্র সিমপটম---- একজন কারুর সাথে বন্ধুত্ব আর যদি না রাখে = প্লাটিনা প্রেসক্রিপশন করে ফেলছে, অর্থাৎ হোমিও দর্শনের ফিলজফি থেকে যোজন ক্রোশ দূরে অবস্থান করছে এরা এই সিমপটমটি নিয়ে লাফাচছে কেন?
কারন---- সিন্থেসিস রেপার্টরীতে এই রুবরিক আছে, তাই সিন্থেসিসে কোথায় কি ভাবে আছে?
মারাত্মক ভুলটা তাদের কোথায় ?
তাহলে আমরা জানলাম -- Casting off, people against her will---- অর্থাৎ পছন্দ না হলে কাউকে বিতাড়িত করতে হবে, বা পরিত্যাগ করতে হবে,
এই সিমপটম বা রুবরিকের জন্য যদি প্লাটিনা চয়েস করতে হয়, তাহলে তা হতে হব in relation to Contemptuous, অর্থাৎ ঘৃণা মিশ্রিত একটা ভাবের সাথে যখন থাকবে, সেই জন্য এই পরিত্যাগ করা রুবরিকটি ঘৃণার আন্ডারে অর্থাৎ Contemptuous র আন্ডারে রাখতে হবে, মহামতি কেন্ট তাই রেখেছে, ফটোকপি দেখে নেবেন, কেন্টে আছে -----
Rubric-----Contemptuous
Sub rubric--- in paroxysms against her will--- Plat,
কিন্তু সিন্থেসিস-- এই সিমপটমটি আলাদা করে হেডিং করেছে, যেখানে লোকজন পরিত্যাগ কেন করছে, তা মোটেই পরিষ্কার নেই,
একজন শুধু তার বন্ধু পরিত্যাগ করলেই তাই প্লাটিনা হবে না, ব্যাপারটা আমরা আমাদের মেটিরিয়ার নলেজ দিয়ে এইভাবে নিশ্চয় ভাববো----
★ কেউ তার অহংকার বা, আত্মম্ভরিতার জন্য বন্ধু বা আত্মীয় পরিত্যগ করলে-- প্লাটিনা,
★কেউ তার সেন্টিমেন্টে অাঘাত দেওয়ার জন্য পরিত্যাগ করলে --- নেট্রাম, ফস,
★কারুর বেশী লোকজন ভাল লাগে না, বেশী কনভারসেশন বা কথাবার্তা সহ্য হয় না, চুপচাপ একা থাকতে পছন্দ করে, তাই পরিত্যাগ করলে---- ফসফরিক এ্যাসিড,
★ কেউ ঝগড়াঝাঁটি করে প্রত্যেকবার পরিত্যাগ করলে--- নাকস,
★ কেউ ঝগড়াঝাটি করে অশালীন, আনসিভিল কথাবার্তা বলে পরিত্যাগ করলে--- ক্যামো,
★ কেউ কারুর থেকে মানসিক অাঘাত পেয়ে চুপচাপ কাঁদতে কাঁদতে পরিত্যাগ করলে ---পালস,
★ কেউ ঝগড়াঝাটি করে মনে রিভেঞ্জ নিয়ে, যেমন--- সুযোগ পেলে তাকে খুন করবেই, এই মনোভাব নিয়ে পরিত্যাগ করলে--- নাইট্রিক এ্যাসিড, ইত্যাদি ভাবতে হবে,
কিন্তু সিনথেসিস কমপাইলেশন করা বাবুরা তা করেন নি,
----- শুধু পরিত্যাগ করে ----
আলাদা রুবরিক বানিয়ে প্লাটিনার নাম বসিয়ে দিয়ে মহা মূর্খের মতন কাজ করেছে, কেন পরিত্যাগ করে তা কিছুই নেই, আর সেই ফাঁদে পড়ছে হোমিওপ্যাথি জগতে ঘুরঘুর করা কিছু মূর্খের দল,যারা কিছু এ্যানালিসিস বা বিশ্লেষণ বোঝে না, অর্গানন পড়ে না, ফিলজফি বোঝে না।
তাহলে মদন, প্লাটিনার যে মেইন সিমপটমস তার মনের বা মানসিক, আর কখনও মানসিক এবং শারীরিক পর্যায়ক্রমে হয় তা জানা গেল,
এবারে কয়েকটি শারীরিক সিমপটমসের কথা জানলে এই ঔষধের গল্প শেষ হবে,
★ ভ্রমন ভালবাসে এবং ভ্রমণে ভাল থাকে তা টিউবারকিউলিনামে অাছে আমরা পড়েছি, কিন্তু প্লাটিনা তার উল্টো, এদের অনেক প্রবলেমস ভ্রমণে বাড়ে, যেমন, বিশেষ করে কোষ্ঠবদ্ধতা, বাড়ীর বাইরে কোথাও গেলে বা কোথাও লম্বা ট্যুরে গেলে এদের মোটেই পায়খানা হতে চায় না ( Alu, Ign, Lyco, NV, Op,
★ মাসিক--- কালো, পরিমানে বেশী,, বড় বড় চাপ থাকে, ২৮ দিনের অনেক অাগেই আরম্ভ হয়ে যায়, এবং অনেকদিন ধরে চলতে থাকে রক্তস্রাব আরম্ভের পূর্বেই পেটব্যথা শুরু হয়,
★ মল--- আঠালো, কাদার মতন, দেশী টয়লেট হলে, অনেক জল ঢাললেও প্যানের গা থেকে মল সরতে চায় না,
( Alumina, CC)
★ভ্যাজাইনা বা যোনিদেশ খুব স্পর্শকাতর হয়, হালকা কাপড় চোপড়ও অসহ্য লাগে, ( Stap),
★ স্ত্রীলোকদের সেকস বা যৌন উত্তেজনা খুব বেশী (Lil tig, Murex)
★ সহবাসকালে অনেক সময় অজ্ঞান হয়ে যায় (Mur, Orig, Sep)
★সকল ব্যথা আস্তে আস্তে আসে, আস্তে আস্তে যায়, ব্যথার সাথে জায়গাটা অসাড় হয়ে যায়, Stan)

পর্ব----- ৪৩
মদন--- স্যার, রোগ বা ডিজিজ নিয়ে মাঝে মাঝে আলোচনা করলে আমার ত সুবিধা হবে, সেই সাথে মনে হয় অনেক জুনিয়র হোমিও চিকিৎসক বন্ধুদেরও সুবিধা হতো,
রবার্ট----- ঠিক আছে মদন,
তবে তাই হোক, তাহলে আমি খাপছাড়া আলোচনা না করে এ্যালফাবেটিক্যালি A B C এইভাবে একটা অক্ষর ধরে আলোচনা চালিয়ে যাই,
মদন----ঠিক আছে স্যার, তাহলে অনেকে উপকৃত হবে,
রবার্ট---- কিন্তু মদন, আমি সব কিছু তোমাদের ডাঃ সঞ্জিত মজুমদারের মতন, বা ডাঃ অনন্য মান্নানের মতন অত বিশুদ্ধ বাংলায় লিখতে পারবো না, কারন অত বিশুদ্ধ বঙ্কিমী বাংলা আমি জানিও না, আর সব ইংরাজী শব্দের অত বাংলাও আমি করতে পারবো না, মূল ব্যাপারটা আমি বাংলায় বুঝাবো, কিন্তু অনেক মেডিকেল টার্মিনোলজী ইংরাজীতেই রাখবো,
মদন---- তা চলুক স্যার, তাতে আমাদের কোন আপত্তি নাই,
রবার্ট-- তাহলে এ্যালফাবেটিক্যালি আরম্ভ করা যাক, তবে আমি শুধু প্রাকটিস অব মেডিসিন থেকে বলতে চাই না, সার্জারী, গাইনি, মিডউইফারী, স্কিন, চাইল্ড, সব বিষয়ের উপর থেকেই সংক্ষেপে আলোকপাত করে যেতে চাই,
যাতে একজন জুনিয়র চিকিৎসক প্রাকটিস লাইফে কোনরকম অসুবিধার সম্মুখীন না হয়,
তাই এ্যালফাবেটিক্যালি যখন যেটা মনে পড়বে, সব পরপর আলোচনা করবো, সাথে হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা কি হবে, বা কেমন হবে তা জানিয়ে দেবো,
H/T মানে Homoeopathic Treatment বুঝাবো,
তাহলে আরম্ভ করা যাক----
Encyclopedia of Diseases
★ Abducens Palsy ----( Eye),
Abducent নার্ভ হচ্ছে ১২ পেয়ার ক্রেনিয়াল নার্ভের মধ্যে ৬ নং ক্রেনিয়াল নার্ভ,
এই নার্ভের কাজ হচ্ছে চোখের Lateral Rectus muscle কে সাপ্লাাই দেওয়া ,
Anatomy পড়ানোর সময় আমি ছাত্রদেরকে এই ভাবে মনে রাখতে বলতাম----
SO---4,
LR---6,
All are----3,
মানে Superior Oblique কে সাপ্লাই দেয় 4th Cranial , বা Trochlear Nerve,
Lateral Rectus কে সাপ্লাই দেয়--6th Cranial, বা Abducent nerve,
আর এই দুটি ছাড়া চোখের অন্য সব muscles গুলিকে সাপ্লাই দেয় 3rd Cranial, বা Occulomotor Nerve,
তাহলে বোঝা গেল --Abducent Nerve কোন কারনে প্যারালাইজড হলে রোগী চোখের মনি বা eye ball ভিতরের দিকে ঘুরাতে পারবে, কিন্তু বাইরের দিকে ঘুরাতে বা মুভমেন্ট করতে পারবে না,
H/T-----সিঙ্গল নার্ভ প্যারালাইসিস, সুতরাং প্রথম ঔষধ মাথায় রাখতে হবে কষ্টিকাম, তবে সিমপটমস মিলিয়ে যে কোন ঔষধ অাসতে পারে,

পর্ব----৪৪
মদন--- স্যার, আগেরদিন A গ্রুপ চলছিলো, তাহলে A গ্রুপের নানারকম সমস্যা বা ডিজিজ আলোচনা চলতে থাকুক,
রবার্ট----- ঠিক অাছে, তাই চলুক,
★Abdominal guarding
পেটের ভিতরে ব্যথা হলে, বা অন্য কোন কারনে যদি পেটের ভিতরের অবস্থা বাইরে থেকে জানতে হয়,
যেমন---কোন মাস, বা টিউমার হয়েছে কি না, পেটের মধ্যে কোন নির্দিষ্ট অর্গানে প্রদাহ হয়েছে কি না, তাহলে পেটের উপরে হাত দিয়ে পরীক্ষা করতে হয়, এইভাবে দেখা বা পরীক্ষার নাম ---Palpation,
দেখার নিয়ম হচ্ছে -- রোগীকে মাথায় হালকা বালিশ দিয়ে, পা দুটি ভাঁজ করিয়ে ডান হাতের তালুর সামনের দিক + আঙ্গুল গুলি দিয়ে খুব অমায়িক ও শান্তভাবে পেটের বিভিন্ন জায়গায় চাপ দিতে হয়,
* পেটের নীচের অংশে, অর্থাৎ-- হাইপোগ্যাসট্রিয়াম এবং বাম ও ডানদিকের ইলিয়াক ফসাতে,
* পেটের মাঝখানের অংশে, অর্থাৎ --আমবিলিকাল রিজিয়ন এবং বাম ও ডানদিকের লাম্বার রিজিয়নে ,
* পেটের উপরের অংশে, অর্থাৎ-- এপিগ্যাসট্রিয়াম এবং বাম ও ডানদিকের হাইপোকনড্রিয়ামে,
এইভাবে দেখাকে সুপারফিশিয়াল প্যালপেশন বলে, ( ডীপ প্যালপেশন আলাদা),
যাই হোক, এইভাবে প্যালপেেশানের সময় যদি দেখা যায় -- পেটের মাসেলস বা মাংসপেশীগুলি খুব শক্তভাবে contraction করছে তাহলে বুঝতে হবে পেটের ভিতরে কোন ইনফেকশন হয়েছে, যেমন-- পেরিটোনাইটিস, ইত্যাদি,
---- একেই বলা হয় Abdominal guarding, ( a reflex, as a part of defence mechanism) ,
★ Abdominal Pain ( পেটে ব্যথা)
১) Acute Appendicitis ---
পেটব্যথা, বমি, এবং জ্বর- এই তিনের উপরে করো নির্ভর,
উপরের তিনটি সিমপটমস পেলেই এ্যাকিউট এ্যাপেন্ডিসাইটিস হয়েছে ভাবতে হবে,
মারফি নামে একজন সার্জন বহু রোগী পর্যবেক্ষন করার পরে এই তিনটি সিমপটমসকে এ্যাকিউট এ্যাপেনডিসাইটিসের প্রধান সিমপটমস বলে মত প্রকাশ করেছিলেন, তাই এই তিনটি সিমপটমসকে একসাথে বলা হয় -- " মারফিস সিনড্রোম ",
তবে পেটব্যথা বহুক্ষত্রে পেটের মাঝখানে আরম্ভ হতে পারে, এবং তার সাথে বমি ও পাতলা পায়খানা চলতে থাকে,
ডানদিকের ইলিয়াক ফশার মাঝখানে ম্যাকবার্নিস পয়েন্টে চাপ দিলে রোগী ব্যথায় লাফিয়ে উঠবে,
তবে এমন হতে পারে ডান দিকের ইলিয়াক ফশায় কোন ব্যথা নেই, রোগীর বাম দিকের ইলিয়াক ফশায় ব্যথা ,
তাতে অনেকে ভাবে, কেসটি এ্যাপেন্ডিসাইটিস নয়, বিশেষ করে মহিলা রোগী হলে ভুল করে ভাবে--- বাম দিকের ডিম্বকোষে ব্যথা হচ্ছে ,
প্রশ্ন হচ্ছে --- এ্যাপেনডিকস ডান দিকের ইলিয়াক ফশায় থাকে, তাহলে বাম দিকের ইলিয়াক ফশায় ব্যথা হয়ে আমাদের ডায়াগনোসিসে বিভ্রান্তি করায় কেন?
উত্তর -- যে সব রোগীর এ্যাপেনডিকসে খুব ছোট পারফোরেশান হয়ে পেরিটোনাইটিস আরম্ভ হয় , তাদের বাম ইলিয়াক ফশায় ব্যথা চলতে পারে,
বাচচাদের কোথায় ব্যথা হচ্ছে তা বুঝতে অনেক সময় চিকিৎসককে অসুবিধায় পড়তে হয়, কারন বাচ্চা তার পেটে মোটেই হাত দিতে দেয় না,
এইরকম ক্ষেত্রে বাচ্চার নিজের হাতটি ধরে খেলাচছলে তার পেটের এখানে ওখানে দিতে থাকলে রাইট ইলিয়াক ফশার ম্যাকবার্নিস পয়েন্টে রাখতে চাইবে না, বা দিতে দেবে না।
H / T----- চিকিৎসা সিমপটমস অনযায়ী করতে হবে----
বেল, মার্ক সল, হিপার, কলো, ডায়োস, পালস, ব্রাইও ল্যকেসিস আর্নিকা, সালফার, ইত্যাদি,
বহু ক্ষেত্রে ৩, ৪, ৫, ৬ বছরের বাচ্চাদের আর্নিকা ৩০ কয়েক ডোজ অতি দ্রুত আরোগ্য এনে দেয়,

পর্ব----৪৫
Abdominal Pain
২) Acute Cholecystitis
এর মানে গলব্লাডারে বা পিত্ত থলিতে ব্যথা,
লক্ষন কি?
১) উপর পেটের মাঝ লাইনের ঠিক ডানদিকে ব্যথা হয়, তবে মাঝখানেও ব্যথা হতে পারে,
২) ব্যথাটা সাধারণত ডানদিকের পিঠে চলে যায়, বিশেষ করে ডানদিকের স্কাপুলার ঠিক নীচে, তবে ব্যথা ডানদিকের কাঁধেও হতে পারে,
৩) বমি বমি ভাব, এবং তৎসহ তিতা বা টক বমি হতে পারে,
৪) ব্যথাটা সাধারণত মাঝরাতে হয়,
৫)) রোগীর অনেকদিন ধরে চলছে এমন গ্যাস অম্বলের ইতিহাস থাকতে পারে,
কাদের বেশী হয়---
ইংরাজীতে 4 টা F শব্দের মানুষদের গল ব্লাডারের প্রদাহ, বা ব্যথা, বা পাথর বেশী হয়---
F--- Females ( মহিলাদের),
F--- Fatty ( চর্বিবহুল মোটাসোটাদের) ,
F---Fertile ( যাদের বাচচা হয়েছে) ,
F---Forty (সাধারণত যাদের বয়স ৪০ র উপরে) ,
তবে এই নয় যে এই ৪ টি কন্ডিশনই শেষ কথা, যে কোন বয়সে যে কারুর রোগটি হতে পারে।
কনফার্ম হতে পরীক্ষা লিখতে হবে--USG of Upper Abdomen, পরীক্ষা করানোর দিন রোগীকে খালি পেটে যেতে হবে,
H/T----
ক) তাৎক্ষনিক---মারাত্মক ব্যথা অনেক সময় কোন হোমিওপ্যাথিক ঔষধেই কমতে চায় না, তবু দিতে হবে সিমপটমস মিলিয়ে----
কলো--- ব্যথা জোরে চাপলে কমে,
ডায়োসকো--- টানটান হয়ে শুয়ে থাকলে কমে,
ক্যামো--- পাগল করা ব্যথা, ব্যথার ঠেলায় চেঁচামেচি, গালিগালাজ করে, ঘরের দরজা জানালা খুলে দিতে বলে,
এ্যাট্রোপিয়া ৩x, --- কতকটা বেলেডোনার মতন সিমপটমস,
খ) পরবর্তী চিকিৎসা ---
অবশ্যই কেস টেকিং করে সিমপটমস মিলিয়ে, তবে একটা ভাল ঔষধ ক্যাল্কেরিয়া কার্ব, -- তাও দিতে হবে সিমপটমস মিলিয়ে।

চলমান -